করোনা প্রতিরোধ
পাত্তাই পাচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

সবগুলো ছবিই রাজধানী ঢাকার। করোনা প্রতিরোধে কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি - মাহবুব হোসেন নবীন
রাজীব আহাম্মদ ও মিরাজ শামস
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২০ | ১২:০০
করোনাকালে দুনিয়াজুড়ে এক অমীমাংসিত প্রশ্ন- জীবন নাকি জীবিকা। জীবিকার জন্য সারা দুনিয়াতেই মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে এসেছে। করোনা একই রকম প্রাণঘাতী থাকলে সেই ভয় আর নেই। কিন্তু বাংলাদেশে আতঙ্কের সঙ্গে করোনা সচেতনতাও গেছে। পাত্তাই পাচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। করোনা সংক্রমণের ভয় শেখা সামাজিক দূরত্ব আর নেই পথে, হাটে, ঘাটে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশের সেই হাঁকডাক, সরকারি তৎপরতাও নেই।
গত সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন এ চিত্র দেখা যায়। মাস তিনেক আগেও পথেঘাটে 'পিপিই' পরে মহাকাশ অভিযাত্রীর রূপ নেওয়া মানুষের ভিড় ছিল। এখন তা ডুমুরের ফুল। গ্লাভস ও মাথার ক্যাপও বিরল। গায়ে গা লাগিয়ে বাজার করা, পথচলা, বাসে চড়া সব পুরোনো চিত্রই ফিরে এসেছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান মেলে। করোনা রোগী থাকলে পুরো মহল্লা খালি হয়ে যেত। সাবান, স্যানিটাইজার কেনার ধুম পড়েছিল। দুই টাকার মাস্ক ৪০ টাকা ছাড়িয়েছিল। গায়ে গা লাগিয়ে পথচলা দূরে থাক, ঘনিষ্ঠজনের মধ্যে কথা হতো দশ হাত দূর থেকে। দিনে দিনে ভয় ও সচেতনতা কমেছে।
ভয় কেটে যাওয়া আশাব্যঞ্জক হলেও সচেতনতা দূর হওয়ায় করোনা বিস্তারের গতিতে হাওয়া দিচ্ছে। এখন দিনে গড়ে তিন হাজারের মতো মানুষ করোনা শনাক্ত হচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়ালেও 'এলাহি ভরসা' দশা! চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও করোনায় বাঁচামরা এখন নিয়তির হাতে! স্বাস্থ্যবিধিকে পাত্তা না দেওয়া মানুষ বলছে, যার হওয়ার হবে। ভয়ে ঘরে বসে থেকে ক্ষুধায় মরার চেয়ে করোনা ঢের ভালো।
সরেজমিন দেখা গেল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে মহামারির শুরুর দিকে লাগানো হাত ধোয়ার বেসিনে এখন পানির সংযোগই নেই। সাবানদানিও শূন্য। মার্কেট, স্টেশন ও টার্মিনালগুলোর প্রবেশপথে বসানো জীবাণুনাশক টানেলও বিকল। পথে পথে বসানো স্যানিটাইজার বা 'সোপি ওয়াটারের' বাসনগুলো চৈত্র দিনের মতো শুস্ক।
বাসে অর্ধেক আসন খালি থাকার শর্ত থাকলেও যাত্রী পেলে সব আসনই পূর্ণ করা হচ্ছে এখন। বাস মালিকরাও স্বাস্থ্যবিধির পক্ষে নন। তারা সরকারকে আর্জি জানিয়েছেন, সামাজিক দূরত্বের শর্ত তুলে আগের ভাড়ায় ফিরে যেতে। ফুটপাতে দোকান ফিরে এসেছে। রাজনৈতিক সমাবেশ, সভা, শ্রদ্ধা জানানো সবই চলছে গায়ে গা ঘেঁষে। সরকারি দপ্তরে প্রবেশে কড়াকড়ি কমেছে। বেসরকারি অফিসেও তাই। তবে স্বাস্থ্যবিধি এখনও আছে ট্রেনে এবং সরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা এখনও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেবা দিচ্ছেন রোগীকে।
কিছু নামিদামি সুপারশপের প্রবেশপথে হাত স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকলেও মুদিখানার সামনে গত মার্চে ক্রেতার দূরত্ব রাখতে যে বৃত্ত দেওয়া হয়েছিল, তা করোনার ভীতির মতোই মুছে গেছে। থাকলেও ধুলো মলিন অস্পষ্ট।
রাজধানীর মিরপুর-১, উত্তর পীরেরবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি জনসমাগম মাছ বাজারে। একজন আরেকজনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে উঁকি মেরে মাছ দেখছে, কানকো টিপে দরদাম করছে। অথচ এসব বাজারেই মাস দুই আগেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা হয়েছে। মাস দুই আগেও বাজারের প্রবেশ পথে ছিল জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্যবিধি অমান্যে কাঁচাবাজারের সঙ্গে মার্কেট কিংবা বিপণিবিতানের তফাৎ নেই। ক্রেতা-বিক্রেতার মাস্ক থাকলেও তা নাকের ওপরে, কানে, থুতনিতে, পকেটে কিংবা হাতে ঝুলে। নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা। গত জুনে মার্কেট খুলেছিল স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে। তবে তা পালনে এখন ব্যবসায়ী সমিতিগুলো নীরব। ক্রেতা-বিক্রেতার শরীরের তাপমাত্রা মাপা ও জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থার ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে মৌচাক, নূরজাহানসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনে। অবশ্য নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মো. ফারুকের দাবি, ক্রেতাদের অনুরোধ করলেও নিয়ম মানেন না বলেই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা অকার্যকর।
রাজধানীর বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানার চিত্র আরও খারাপ। গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের গাঙ্গিনাপারের বিপণিবিতানে দেখা যায় মাস্ক ব্যবহারকারী হাতেগোনা। 'বারি প্লাজা', 'পালিকা'সহ বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনের জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা অচল। আগের দিন বুধবারও একই চিত্র দেখা গেছে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঘুরে।
অদৃষ্টের হাতে ভাগ্য সঁপে দেওয়ার সুরে গাঙ্গিনাপারের শিববাড়ির জুতার দোকানি প্রদীপ দাস বললেন, আগে ক্রেতারা মাস্ক পরে আসতেন, তিনিও পরতেন। দোকানের বাইরে প্রবেশ নিরাপত্তা বেষ্টনীও দিয়েছিলেন। এখন এসবের কিছুই নেই। কারণ, এসব মেনে লাভ নেই। করোনা যার হওয়ার হবে। তার দোকানের ক্রেতা নাহিদুর রহমানের অভিমতও অভিন্ন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এপ্রিল, মে ও জুন মাসে মার্কেট ও দোকানে স্বাস্থ্যবিধির মান্যতা ছিল। মার্কেট ও বাজারের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল ছিল। জুলাই মাসে অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে।
গত ৩১ মে করোনা সংক্রমণের 'লকডাউন' তুলে নেওয়ার পরও ঢাকার পথঘাট ফাঁকা ফাঁকা ছিল। চায়ের দোকানে, মোড়ে মোড়ে আড্ডা একেবারেই ছিল না। পথ চলা প্রায় শতভাগ মানুষের মুখে মাস্ক থাকত। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও অধিকাংশ মানুষই তা মানছেন না। তারাও করোনাকে ছেড়ে দিয়েছেন নিয়তির হাতে।
রাজধানীর মহাখালী টার্মিনালে দেখা যায়, প্রবেশপথে পুলিশ চৌকির সামনে বসানো জীবাণুনাশক টানেলটি বিকল। তার ভেতরে পুরোনো মালপত্র রাখা হয়েছে। প্রতি যাত্রার আগে বাস জীবাণুমুক্ত করা হয় না। বাসে ওঠার আগে যাত্রীর হাত ও মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবস্থা করা সাবান, পানিও আর নেই। মহাখালীর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেছেন, সব ব্যবস্থাই ছিল। ধীরে ধীরে ঢিলেঢালা হয়ে গেছে।
মহাখালী থেকে একটি মাত্র কোম্পানির ছাড়া বাকি সব বাসেই যাত্রী তোলা হচ্ছে প্রতি আসনে। 'সৌখিন পরিবহনে'র চালক নিজাম উদ্দিন জানালেন, অর্ধেক সিট খালি রাখলে ঢাকা-ময়মনসিংহের ভাড়া ৩৫০ টাকা নিতে হয়। এত টাকা গরিব যাত্রীরা দিতে পারেন না। তাই প্রতি সিটে যাত্রী তুলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় যাত্রী নিচ্ছেন। তবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছেন না।
স্বাস্থ্যবিধির শর্ত ভঙ্গ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অজানা নয়।। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, বাসে আসন পূর্ণ করে যাত্রী তোলার অভিযোগ পাচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রী সচেতন না হলে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা সম্ভব নয়। মালিকরাও আর চান না অর্ধেক আসন খালি রাখতে। তাদের আবেদন সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, সামাজিক দূরত্বই যখন মানা হচ্ছে না, তখন কাগজেকলমে রেখে কী লাভ! যাত্রীরও ক্ষতি, মালিকেরও। তাই তারা অনুরোধ করেছেন বাসে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে প্রতি আসনে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিতে।
গত সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন এ চিত্র দেখা যায়। মাস তিনেক আগেও পথেঘাটে 'পিপিই' পরে মহাকাশ অভিযাত্রীর রূপ নেওয়া মানুষের ভিড় ছিল। এখন তা ডুমুরের ফুল। গ্লাভস ও মাথার ক্যাপও বিরল। গায়ে গা লাগিয়ে বাজার করা, পথচলা, বাসে চড়া সব পুরোনো চিত্রই ফিরে এসেছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান মেলে। করোনা রোগী থাকলে পুরো মহল্লা খালি হয়ে যেত। সাবান, স্যানিটাইজার কেনার ধুম পড়েছিল। দুই টাকার মাস্ক ৪০ টাকা ছাড়িয়েছিল। গায়ে গা লাগিয়ে পথচলা দূরে থাক, ঘনিষ্ঠজনের মধ্যে কথা হতো দশ হাত দূর থেকে। দিনে দিনে ভয় ও সচেতনতা কমেছে।
ভয় কেটে যাওয়া আশাব্যঞ্জক হলেও সচেতনতা দূর হওয়ায় করোনা বিস্তারের গতিতে হাওয়া দিচ্ছে। এখন দিনে গড়ে তিন হাজারের মতো মানুষ করোনা শনাক্ত হচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়ালেও 'এলাহি ভরসা' দশা! চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও করোনায় বাঁচামরা এখন নিয়তির হাতে! স্বাস্থ্যবিধিকে পাত্তা না দেওয়া মানুষ বলছে, যার হওয়ার হবে। ভয়ে ঘরে বসে থেকে ক্ষুধায় মরার চেয়ে করোনা ঢের ভালো।
সরেজমিন দেখা গেল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে মহামারির শুরুর দিকে লাগানো হাত ধোয়ার বেসিনে এখন পানির সংযোগই নেই। সাবানদানিও শূন্য। মার্কেট, স্টেশন ও টার্মিনালগুলোর প্রবেশপথে বসানো জীবাণুনাশক টানেলও বিকল। পথে পথে বসানো স্যানিটাইজার বা 'সোপি ওয়াটারের' বাসনগুলো চৈত্র দিনের মতো শুস্ক।
বাসে অর্ধেক আসন খালি থাকার শর্ত থাকলেও যাত্রী পেলে সব আসনই পূর্ণ করা হচ্ছে এখন। বাস মালিকরাও স্বাস্থ্যবিধির পক্ষে নন। তারা সরকারকে আর্জি জানিয়েছেন, সামাজিক দূরত্বের শর্ত তুলে আগের ভাড়ায় ফিরে যেতে। ফুটপাতে দোকান ফিরে এসেছে। রাজনৈতিক সমাবেশ, সভা, শ্রদ্ধা জানানো সবই চলছে গায়ে গা ঘেঁষে। সরকারি দপ্তরে প্রবেশে কড়াকড়ি কমেছে। বেসরকারি অফিসেও তাই। তবে স্বাস্থ্যবিধি এখনও আছে ট্রেনে এবং সরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা এখনও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেবা দিচ্ছেন রোগীকে।
কিছু নামিদামি সুপারশপের প্রবেশপথে হাত স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকলেও মুদিখানার সামনে গত মার্চে ক্রেতার দূরত্ব রাখতে যে বৃত্ত দেওয়া হয়েছিল, তা করোনার ভীতির মতোই মুছে গেছে। থাকলেও ধুলো মলিন অস্পষ্ট।
রাজধানীর মিরপুর-১, উত্তর পীরেরবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি জনসমাগম মাছ বাজারে। একজন আরেকজনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে উঁকি মেরে মাছ দেখছে, কানকো টিপে দরদাম করছে। অথচ এসব বাজারেই মাস দুই আগেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা হয়েছে। মাস দুই আগেও বাজারের প্রবেশ পথে ছিল জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্যবিধি অমান্যে কাঁচাবাজারের সঙ্গে মার্কেট কিংবা বিপণিবিতানের তফাৎ নেই। ক্রেতা-বিক্রেতার মাস্ক থাকলেও তা নাকের ওপরে, কানে, থুতনিতে, পকেটে কিংবা হাতে ঝুলে। নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা। গত জুনে মার্কেট খুলেছিল স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে। তবে তা পালনে এখন ব্যবসায়ী সমিতিগুলো নীরব। ক্রেতা-বিক্রেতার শরীরের তাপমাত্রা মাপা ও জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থার ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে মৌচাক, নূরজাহানসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনে। অবশ্য নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মো. ফারুকের দাবি, ক্রেতাদের অনুরোধ করলেও নিয়ম মানেন না বলেই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা অকার্যকর।
রাজধানীর বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানার চিত্র আরও খারাপ। গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের গাঙ্গিনাপারের বিপণিবিতানে দেখা যায় মাস্ক ব্যবহারকারী হাতেগোনা। 'বারি প্লাজা', 'পালিকা'সহ বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনের জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা অচল। আগের দিন বুধবারও একই চিত্র দেখা গেছে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঘুরে।
অদৃষ্টের হাতে ভাগ্য সঁপে দেওয়ার সুরে গাঙ্গিনাপারের শিববাড়ির জুতার দোকানি প্রদীপ দাস বললেন, আগে ক্রেতারা মাস্ক পরে আসতেন, তিনিও পরতেন। দোকানের বাইরে প্রবেশ নিরাপত্তা বেষ্টনীও দিয়েছিলেন। এখন এসবের কিছুই নেই। কারণ, এসব মেনে লাভ নেই। করোনা যার হওয়ার হবে। তার দোকানের ক্রেতা নাহিদুর রহমানের অভিমতও অভিন্ন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এপ্রিল, মে ও জুন মাসে মার্কেট ও দোকানে স্বাস্থ্যবিধির মান্যতা ছিল। মার্কেট ও বাজারের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল ছিল। জুলাই মাসে অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে।
গত ৩১ মে করোনা সংক্রমণের 'লকডাউন' তুলে নেওয়ার পরও ঢাকার পথঘাট ফাঁকা ফাঁকা ছিল। চায়ের দোকানে, মোড়ে মোড়ে আড্ডা একেবারেই ছিল না। পথ চলা প্রায় শতভাগ মানুষের মুখে মাস্ক থাকত। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও অধিকাংশ মানুষই তা মানছেন না। তারাও করোনাকে ছেড়ে দিয়েছেন নিয়তির হাতে।
রাজধানীর মহাখালী টার্মিনালে দেখা যায়, প্রবেশপথে পুলিশ চৌকির সামনে বসানো জীবাণুনাশক টানেলটি বিকল। তার ভেতরে পুরোনো মালপত্র রাখা হয়েছে। প্রতি যাত্রার আগে বাস জীবাণুমুক্ত করা হয় না। বাসে ওঠার আগে যাত্রীর হাত ও মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবস্থা করা সাবান, পানিও আর নেই। মহাখালীর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেছেন, সব ব্যবস্থাই ছিল। ধীরে ধীরে ঢিলেঢালা হয়ে গেছে।
মহাখালী থেকে একটি মাত্র কোম্পানির ছাড়া বাকি সব বাসেই যাত্রী তোলা হচ্ছে প্রতি আসনে। 'সৌখিন পরিবহনে'র চালক নিজাম উদ্দিন জানালেন, অর্ধেক সিট খালি রাখলে ঢাকা-ময়মনসিংহের ভাড়া ৩৫০ টাকা নিতে হয়। এত টাকা গরিব যাত্রীরা দিতে পারেন না। তাই প্রতি সিটে যাত্রী তুলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় যাত্রী নিচ্ছেন। তবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছেন না।
স্বাস্থ্যবিধির শর্ত ভঙ্গ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অজানা নয়।। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, বাসে আসন পূর্ণ করে যাত্রী তোলার অভিযোগ পাচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রী সচেতন না হলে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা সম্ভব নয়। মালিকরাও আর চান না অর্ধেক আসন খালি রাখতে। তাদের আবেদন সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, সামাজিক দূরত্বই যখন মানা হচ্ছে না, তখন কাগজেকলমে রেখে কী লাভ! যাত্রীরও ক্ষতি, মালিকেরও। তাই তারা অনুরোধ করেছেন বাসে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে প্রতি আসনে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিতে।
- বিষয় :
- করোনা প্রতিরোধ