শেখ হাসিনা-মোদি ভার্চুয়াল বৈঠক
করোনা সহযোগিতা পানি ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে অগ্রাধিকার

ছবি: ফাইল
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৫:৩৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। বৈঠকে কভিড-১৯ সহযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ভারতীয় ঋণ চুক্তির প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন, বাণিজ্য এবং পানি সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দেড় ঘণ্টার বৈঠক হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। দিল্লির একটি সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে ভারতীয় ঋণ চুক্তি প্রকল্পের অগ্রগতি, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা ইস্যু, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করা এবং বিশেষভাবে কভিড-১৯ সহযোগিতার বিষয়টি ভারতের দিক থেকে অগ্রাধিকার পাবে।
এই মহামারিতে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিই কমবেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করার ক্ষেত্রটি ভারত যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বাণিজ্য বাধা দূর করার ক্ষেত্রে আগে থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা করে আসছে বাংলাদেশ। কারণ বাণিজ্য বাধার সম্মুখীন বাংলাদেশই বেশি হচ্ছে। এবার ভারতও বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক্ক ও অশুল্ক্ক বাধা দূর করার বিষয়ে এবারের শীর্ষ বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।
গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব বড় ইস্যু আছে কিংবা সাধারণত যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়, সেগুলো তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে পানি সমস্যা ও সীমান্ত ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বেশ কিছু প্রকল্প উদ্বোধন হতে পারে। চিলাহাটি-হলদিয়া রুটে ট্রেনলাইন উদ্বোধন করা হবে। এ রুটটি প্রায় ৫৫ বছর আগে চালু ছিল। পরে কালের বিবর্তনে বন্ধ হয়ে যায়। সেটা নতুন করে চালু করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে হওয়ার কারণে বৈঠকে আলোচ্যসূচির সব বিষয় আলোচিত নাও হতে পারে। যেগুলো আলোচনায় আসবে না, সেসব বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। কভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি নিরসন হলে দ্রুতই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে সুনির্দিষ্ট আলোচনাসহ সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হবে। সূত্র জানায়, আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে তার ঢাকা সফর নিশ্চিত হতে পারে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক মানেই দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও এক ধাপ উচ্চতায় যাওয়ার জোরালো প্রত্যাশা তৈরি হওয়া। আশা করা যাচ্ছে, এবারের বৈঠক ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে হলেও দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে ইতিহাসের মাইলফলক ঘোষণা আসবে। আলোচনার জন্য বাংলাদেশ অগ্রাধিকারের যে বিষয়গুলো নির্ধারণ করেছে, তা খুবই সময়োপযোগী। বিশেষ করে কভিড-১৯ সহযোগিতা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে আলোচনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাধা দূর করার ব্যাপারে একটি ইতিবাচক ঘোষণা এলে সেটি হবে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি।