সরেজমিন: মুগদা হাসপাতাল
কান্না থামছে না শিশু ওয়ার্ডে

কচি হাতে ক্যানোলার যন্ত্রণা। কান্না থামাতে ছেলে ভোলানোর নানা চেষ্টা স্বজনের। শুক্রবার রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড থেকে তোলা - সমকাল
লতিফুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে গত ১৩ আগস্ট থেকে ভর্তি এক বছর বয়সী নিরামণি। জ্বর, দুর্বলতার সঙ্গে হাতে লাগানো ক্যানোলার ব্যথায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শিশুটির জীবন। নিরার বাবা নুরুল ইসলাম ও মা লাভলী বেগম জানান, কোনোভাবেই মেয়ে হাতে ক্যানোলা রাখতে চায় না। কান্না থামাতে মোবাইল ফোনে কার্টুন দেখানোসহ নানাভাবে নিরাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। তবু মেয়ের কান্না থামে না।
শুধু নিরামণি নয়, গতকাল শুক্রবার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় রোগীর গাদাগাদি ভিড়। বিশেষ করে নিরামণির মতো ছোট্ট শিশুদের কষ্ট যেন অনেক বেশি। অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে নানাভাবে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। সন্তানের অসুস্থতার যন্ত্রণায় মন ভার হয়ে আছে মা-বাবারও। সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে খরচের বোঝা বইতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তবু সব মা-বাবার আশা, ধারদেনা করেও সন্তান যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ আগেও ডেঙ্গু ওয়ার্ডে বেড খালি ছিল না। ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দা, মেঝে, সিড়ির সামনেসহ সব জায়গা ঠাসা ছিল ডেঙ্গু রোগীতে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে পুরুষ ও নারী ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু অষ্টম তলার শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা এখনও কমেনি।
মানিকনগরের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম হাসপাতালের বেডে তাঁর দেড় বছরের মেয়ে নুসাইবা আর পাঁচ মাস বয়সী ভাতিজি সামিন ইয়াসার জেবিনের কান্না থামাতে ক্লান্ত। ছোট্ট জেবিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলেও নুসাইবার ডেঙ্গু। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে জেবিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরের দিন নুসাইবার জ্বর এলে তাকেও আনা হয়। পরে রক্ত পরীক্ষায় নুসাইবার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। দুইটা বাচ্চার অসুস্থতায় দুই ভাই পরিবারসহ হাসপাতালের বেডে আছি। পানির মতো টাকা খরচ হচ্ছে।’
শিশু ওয়ার্ডে দু’দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে পাঁচ বছর বয়সী আফিফা। মা নীলা বেগমও শ্যামপুরের আইজিগেট কলোনির বাসায় পাঁচ দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন। বাবা গোলাম রাব্বানী জানান, প্রথমে স্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় পরে ছোট্ট মেয়ে আফিফার জ্বর এলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মায়ের অবস্থা একটু ভালো হওয়ায় তাঁকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কিন্তু পরিবারের দু’জন একসঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, শিশু ওয়ার্ডে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৩ শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে। ওয়ার্ডে মোট চিকিৎসাধীন আছে ৭০ শিশু। তবে ১০ ও ১১ তলার পুরুষ ও তৃতীয় তলার নারী ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এখন ১০ম তলায় মেঝেতে তেমন রোগী নেই আর ১১ তলার মেঝে প্রায় খালি। নারী ওয়ার্ডে গত সপ্তাহে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হতো। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। মোট চিকিৎসাধীন আছেন ৯০ জন। সব মিলে ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে মোট ৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।
- বিষয় :
- সরেজমিন
- মুগদা হাসপাতাল
- ডেঙ্গু