ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

‘সুলতানার স্বপ্ন’ মানবিক সমাজের রূপরেখা

‘সুলতানার স্বপ্ন’ মানবিক  সমাজের রূপরেখা

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিশেষ বক্তৃতায় ড. লিন্ডসে হোনার

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫ | ২৩:৫৯

বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ শুধুই একটি সাহিত্যকর্ম নয়, এটি বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার দলিল। এটি আমাদের দেখায় কল্পনা কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠতে পারে। পরিবর্তন সম্ভব– এই বিশ্বাসই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে বিশেষ বক্তৃতায় যুক্তরাজ্যের এডিনবরা ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড. লিন্ডসে হোনার এসব কথা বলেন। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কালজয়ী রচনা ‘সুলতানার স্বপ্ন’-এর ইউনেস্কো মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড স্বীকৃতি উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এই আয়োজন করে। 
লিন্ডসে হোনার বলেন, রোকেয়ার স্বপ্ন শুধু একটি কল্পনা নয়, এটি একেবারে বাস্তব, সুগঠিত ও মানবিক এক সমাজকাঠামোর রূপরেখা। নারীর স্বাধীনতা, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং মানবিক মূল্যবোধের ওপর গঠিত এই সমাজচিত্র আজকের বিশ্বেও প্রাসঙ্গিক।

তাঁর মতে, রোকেয়ার নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ব্রিটেনের বর্তমান নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা, প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা প্রতিরোধের মতো ইস্যুগুলোতে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ড. হোনার বলেন, রোকেয়ার স্বপ্নে যে ধরনের শান্তিপূর্ণ, সহযোগিতামূলক ও পরিবেশবান্ধব রাষ্ট্রের কল্পনা করা হয়েছে, তা শিল্পায়ননির্ভর পাশ্চাত্য মূল্যবোধের এক অনন্য বিকল্প হাজির করে। এটি আমাদের ভাবতে শেখায় আমি কেমন এক পৃথিবী গড়তে চাই।

আলোচনায় ড. হোনার সুলতানার স্বপ্ন-এর অভিবাসী সুরক্ষা, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মৃত্যুদণ্ডবিরোধী মনোভাবের দিকগুলোও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রোকেয়া কেবল নারীবাদীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক মানবিক রাষ্ট্রচিন্তার অগ্রদূত। যৌন সহিংসতা এবং জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তার বিষয়গুলো আজকের নারীবাদে গুরুত্বপূর্ণ। এই সাহিত্যকর্ম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভবিষ্যৎ কল্পনা করাও রাজনৈতিক কাজ। এটি কেবল অতীতের প্রতিবাদ নয়, বরং আগামীর রূপরেখা। 

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে ইউনেস্কো থেকে সুলতানার স্বপ্ন-এর স্বীকৃতি আদায় এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রভারের বিষয় তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। তিনি বলেন, ইউনেস্কার মাধ্যমে সুলতানার স্বপ্ন-এর বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে। দেশে নতুন প্রজন্ম ও সমাজের মধ্যে যেন এ বার্তা আরও বেশি ছড়িয়ে দেওয়া যায় সে লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তৎপর রয়েছে। জাদুঘরের গবেষণা সহকারী তাবাসসুম নিগার ঐশীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
১৯০৫ সালে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ২০২৪ সালের মে মাসে এটি ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। জাদুঘরের পক্ষ থেকে রোকেয়ার রচনার পাঠচর্চা ও প্রাসঙ্গিকতা প্রচারের জন্য  দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×