মেলা
দেশি ফলের মৌতাত

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শুরু হয়েছে জাতীয় ফল মেলা। স্টলে স্টলে সাজানো নানা জাত ও রঙের দেশি ফল। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা -সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ | ০১:০৯ | আপডেট: ২০ জুন ২০২৫ | ০৭:৪১
সুবাস ছড়াচ্ছে আম, কাঁঠাল, আনারস; আছে লিচু, জাম, পেয়ারা, কামরাঙা। থরে থরে সাজানো বিলুপ্তপ্রায় বেত, ডেউয়া, আতা ফলও। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বর যেন এক ফলের রাজ্য!
‘দেশি ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই’– এ স্লোগান সামনে রেখে সেখানে বসেছে জাতীয় ফল মেলা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সূচনা হওয়া নানা ফলের রং আর বৈচিত্র্যে ভরপুর মেলাটি দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে শনিবার অবধি। প্রতিদিন সকাল ১০টায় মেলার দরজা খুলে বন্ধ হচ্ছে রাত ৮টায়।
কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলায় ২৬টি সরকারি ও ৪৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বিভিন্ন স্টলে ফল চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উচ্চফলনশীল জাত এবং রাসায়নিকমুক্ত উৎপাদনের উদাহরণও দর্শনার্থীর জন্য তুলে ধরা হচ্ছে।
গতকাল মেলার উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তিনি বলেন, সবার কাছে দেশি ফলের পরিচিতি বাড়ানো এ মেলার উদ্দেশ্য। আম, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ প্রচুর ফল আমরা বিদেশে পাঠাচ্ছি। নতুন করে চীনে আম পাঠানো শুরু হয়েছে। রপ্তানি বাড়লে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
এবারের মেলায় ৬০ জাতের আম নিয়ে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে রয়েছে– বিশ্বনাথ চ্যাটার্জি, গৌড়মতী, কালোপাহাড়, কুয়াপাহাড়ি, রানীপছন্দ, মল্লিকা, ক্ষীরশাপাতি, আনন্দপুরি, বাদশাভোগ, গ্রেট বোম্বাই ইত্যাদি। এ ছাড়া দুই শতাধিক দেশি ফলের সমাহার দেখা গেছে অধিদপ্তরের স্টলে।
নানা জাতের দেশি ফলে সেজেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের স্টল। কাউফল, করমচা, ডেউয়া, আঁশফল, গাব, যজ্ঞডুমুর, চাম্বুল, আতা ফল, ডুমুর, চালতা, অরবরই, বিলিম্বি, শরিফা, সাতকরা, তৈকর, ডেফল, লুকলুকি, বৈচি, মুনিয়ার মতো বিলুপ্তপ্রায় ফল এ স্টলে শোভা পাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পার্টনার প্রকল্প মেলায় এনেছে উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে ফল চাষের প্রযুক্তি। উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে চাষ করা ফল তাদের স্টলে মিলছে।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রপ্তানির আম।
রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আসা আফরোজা বেগম মেলায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ফলের ছবি তুলছিলেন। তিনি বলেন, এখানে এমন অনেক ফল দেখছি, যেগুলো আগে দেখার সুযোগ হয়নি। অনেক দেশি ফল একসঙ্গে দেখে শৈশবে ফিরে যান উত্তরা থেকে আসা মাহমুদুর রহমান। কয়েকটি ফল দেখিয়ে তিনি বলেন, আগে এসব ফল আমাদের স্থানীয় বাজারে পাওয়া যেত। এখন আর দেখা যায় না।
মেলা উপলক্ষে রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বাণিজ্যিকীকরণে দেশি ফল: বর্তমান প্রেক্ষিত, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, দেশীয় ফলের উৎস, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বিশ্বমানের। আমাদের কাজ হচ্ছে এগুলোর সংরক্ষণ, প্রচার ও বাজার সম্প্রসারণ।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, দেশি ফলের অনেক জাত জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতেও টিকে থাকতে সক্ষম। পাশাপাশি কৃষকদের আয়ের নতুন দ্বারও খুলছে এসব ফল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. হাবিবউল্লাহ্ বলেন, রাজধানীর পাশাপাশি এবার দেশের ৬৪ জেলার ৪৩১ উপজেলায়ও ফল মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় ফল মেলা শুধু একটি প্রদর্শনী নয়; বরং এটি ফল চাষ, পুষ্টি, অর্থনীতি ও কৃষিনির্ভর সমাজের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করছে।
- বিষয় :
- মেলা