টিকা নিয়ে ভয় কেটেছে, ব্যবস্থাপনা নিয়েও খুশি মানুষ

করোনার টিকা গ্রহণ করছেন এক ব্যক্তি- সংগৃহীত
মাজহারুল ইসলাম রবিন
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১০:২৭
তখন সকাল ১০টার কিছুটা বেশি বাজে। কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়ে বিশ্রাম করছিলেন রাজধানীর পরীবাগ এলাকা থেকে আসা ডাচ বাংলা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ইকবাল আমীন (৬৫)। আগের দিন অনলাইনে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে পরদিনই টিকা নেওয়ার জন্যে ডাক পান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
টিকা নিয়ে কেমন বোধ করছেন- জানতে চাইলে তিনি বললেন, করোনার টিকা গ্রহণের পর কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করছেন না। টিকাদানে সার্বিক ব্যবস্থাপনাতেও তিনি খুশি। এসময় টিকা গ্রহণে তার কোনও ধরনের ভীতি কাজ করছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকা নিয়ে ভয়ের কোনও কারণ নেই।
তিনি মনে করেন, টিকা নিয়ে অনেক ধরনের গুজবের কারণে অনেকের মধ্যে ভীতি কাজ করেছে। তবে টিকা গ্রহণের তিনি সুস্থ আছেন। টিকা গ্রহণের যেসব স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেটিও তিনি অনুভব করছেন না।
ধানমন্ডি থেকে এসে টিকা নিয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা (৬৪) মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, টিকা গ্রহণের আগে তিনি যেমন ছিলেন, টিকা গ্রহণের পরও তিনি আগের মতোই আছেন। কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করছেন না।
টিকা নিয়ে কোনো ভীতিতে ছিলেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা মানুষের কল্যাণে টিকা আবিষ্কার করেছেন। কারো ক্ষতি করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। টিকা সম্পর্কে সবার ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, অনেক মানুষকে টিকা দিলে হয়তো কারো কারো মধ্যে সামান্য দেখা দিতে পারে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে ভীতি ছড়িয়ে টিকাদানের মতো বড় কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয়।
টিকা নিতে আসা দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্তরঊর্ধ্ব একজন শিক্ষক টিকাদান কর্মসূচিকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, টিকা গ্রহণের পর তিনি সুস্থই আছেন। কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তিনি অনুভব করছেন না। টিকা নিতে কোনও ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে তিনি মনে করছেন। তিনি বলেন, সব ধরনের ভয়কে জয় করেই তিনি টিকা নিতে এসেছেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত বার্ন ইনস্টিটিউটে তৃতীয় দিনের টিকা কার্যক্রম সরেজমিনে দেখতে গিয়ে টিকা গ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বললে এমনটাই জানান তারা। সকাল থেকে চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হয়। এছাড়া যারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেননি, তারা জাতীয় পরিচয়পত্রসহ টিকা কেন্দ্রে আসলে তাদেরও টিকা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার মোট ৩১ ফাইল টিকা দেওয়া হয় (এক ফাইল দিয়ে ১০ জনকে টিকা দেওয়া যায়)। দুপুর ১২টার দিকে ১৬ ফাইল টিকা শেষ হয়ে গেলে আরও ১৫ ফাইল টিকা সিটি কর্পোরেশন থেকে এনে টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। সব মিলিয়ে মোট ২৬০ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হয়।
টিকাগ্রহণকারীদের সেবায় কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে- জানতে চাইলে বার্ন ইনস্টিটিউটের কিডনী রোগ, মেডিসিন ও হাইপারটেনশন বিশেষজ্ঞ এবং টিকাদান কর্মসূচির জন্য গঠিত মেডিকেল টিমের সদস্য ডা. সালাহউদ্দিন ফিরোজ সমকালকে বলেন, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, টিকা গ্রহণের পর তাদের একটু সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা নির্দেশনা রয়েছে। এর সঙ্গে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কার্যালয় থেকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা মেনে যা যা দরকার অর্থাৎওষুধ ও জনবল- সবই ভ্যাকসিন সেন্টারে রয়েছে। যদি কোনো রোগী অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাকে যদি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, তাহলে তার জন্যে কেবিন প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া আইসিইউতেও তাদের জন্য বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে টিকাদানের তিন দিন পার হলেও আশঙ্কাজনক কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, মূলত টিকা নেওয়ার পর হালকা জ্বর, গায়ে ব্যথা, ইনজেকশনের জায়গায় একটু ব্যথা স্বাভাবিকভাবে হয়। এটা সাধারণ বিষয়। এরপরেও কোনো সমস্যা হলে টিকা গ্রহণকারীদের রেজিস্ট্রেশন ফর্মে ডাক্তারদের ফোন নাম্বার দেওয়া থাকে। প্রয়োজনে তারা ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। তবে পরবর্তীতে তাদের অবস্থা খারাপ হলে, হাসপাতালে কেবিনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। টিকা গ্রহণকারীদের চিকিৎসাসেবা দিতে আমাদের মেডিকেল টিম তৈরি আছে।
টিকা গ্রহণে মানুষের ভীতি দূর করতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের ভীতি দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা টিক গ্রহণকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি।
টিকা নেওয়ার পর কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর না পাওয়া গেলেও টিকা নেওয়ার পর এক পয়ষট্টি ঊর্ধ্ব নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. ফিরোজ বলেন, কারো মধ্যে কোনও ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। যিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, সেটি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্যে নয়। ওনার অ্যাজমার সমস্যা ছিলো। তাকে এমনিতেই অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিলো। এছাড়া আর কিছু না।
- বিষয় :
- করেনার টিকা