ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মিছিলে গুলি করে যুবক হত্যা: সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানের নামে মামলা

মিছিলে গুলি করে যুবক হত্যা: সাবেক মৎস্য মন্ত্রী আব্দুর রহমানের নামে মামলা

সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান- ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২:৫৭ | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৪:৩৭

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানসহ ১২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ঢাকার বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সিরাজুল বেপারী নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে।

গত সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির বাড্ডা থানায় এ মামলা করেন নিহত সিরাজুল বেপারীর খালাতো ভাই হাসিবুল হাসান লাভলু। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও আসামি আরও অজ্ঞাত তিনশ জন।

নিহত সিরাজুল বেপারীর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর সদরের তেপুয়াকান্দির তাইজুদ্দিন মুন্সী এলাকায়। তার বাবার নাম শফিকুল ইসলাম।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গত ৫ আগস্ট সকালে বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সিরাজুল বেপারী একটি মিছিলে অংশ নেন। মিছিলে অজ্ঞাত আসামির ছোড়া পরপর তিনটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। পরে সিরাজুলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিরাজুল নিহত হওয়ার পর আসামিদের এবং বাড্ডা থানা পুলিশের চাপে পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার মরদেহ গ্রহণ করে। পরে বাড্ডা থানায় মামলা করতে গেলেও ভয়ে তা করতে পারেনি পরিবার।

মামলার অন্যতম আসামি আব্দুর রহমান গত ৭ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে নৌকা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে অন্য মন্ত্রী-এমপিদের মতো লাপাত্তা হয়ে যান আব্দুর রহমান। এখন পর্যন্ত তিনি কোথায় আছেন তা জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগের শেষ ছিল না। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী কেলেঙ্কারি, বেআইনি কার্যকলাপ, সংখ্যালঘুদের জমি দখলসহ ফরিদপুর-১ আসনের মানুষের কাছে বরাবরই এক বিতর্কিত নাম আব্দুর রহমান।

এরই মধ্যে দেশে-বিদেশে আব্দুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ রয়েছে, আব্দুর রহমানের দুর্নীতির মধ্যে নিজ নামে ফরিদপুরের মধুপুরে ভবন নির্মাণ, পূর্বাচলসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জমি ক্রয়, নিজ নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি, দ্য সিটি ব্যাংক পিএলসি এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে বড় অংকের সঞ্চয়পত্র কিনেছেন।

আব্দুর রহমানের স্ত্রী মির্জা নাহিদা হোসেনের নামে রাজধানীর পরিবাগে শান্তা দিগন্ত টাওয়ারসহ চারটি বহুকোটি দাকা দামের ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়াও আব্দুর রহমান বিপুল টাকা পাচার করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও কানাডায় একাধিক বাড়ি ক্রয় করেছেন।

আরও অভিযোগ রয়েছে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানি না হয়েও আব্দুর রহমান মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছেন। আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েও বছরের পর বছর সরকারের থেকে ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। এ নিয়ে তার উপজেলা মধুখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা নানা সময় ক্ষোভও দেখান।

এছাড়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আব্দুর রহমান মনোনয়ন বাণিজ্য করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের শেষ দশ বছরে ফরিদপুর-১ আসনে টিআর, কাবিখা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অটো রাসই মিল, অটো ব্রিকস দখল নিয়ে সেগুলো স্ত্রী-সন্তানের নামে করার অভিযোগও রয়েছে এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে তিনি নিজের দলের নেতাকর্মীদেরও রেহাই দেননি। এছাড়াও আব্দুর রহমান স্থানীয় কুখ্যাত ডাকাত-সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশয় দিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন

×