ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

‘বিদেশফেরত’ সন্ত্রাসী মুসা গ্রেপ্তার

মতিঝিলে টিপু হত্যা মামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী

‘বিদেশফেরত’ সন্ত্রাসী মুসা গ্রেপ্তার

ডিবির হাতে গ্রেপ্তার সুমন সিকদার ওরফে মুসা সিকদার

সমকাল প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫ | ১৮:৪১ | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ | ২৩:০৫

২০২২ সালের মার্চে মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু খুন হন। ওই হত্যা মামলায় পুলিশের তদন্তে অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে সুমন সিকদার মুসার নাম উঠে আসে। টিপু খুনের নকশার পর মিশন সম্পন্ন করার ১২ দিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান মুসা। সেখান থেকে চলে যান ওমানে। ঢাকার অপরাধজগতে তিনি ‘কিলার মুসা’ হিসেবে পরিচিত।

একসময় দুই কুখ্যাত সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপের অন্যতম সদস্য ছিলেন মুসা। টিপু হত্যার পর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফেরানো হয়। এর পর থেকে কারাগারে ছিলেন। পুলিশ বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে কারাগার থেকে বের হয়ে ফের অপরাধে জড়ান মুসা। মিরপুর ও পল্লবীতে আতঙ্ক ছড়ান। গত ২০ জানুয়ারি পল্লবীতে মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু ওরফে ব্লেড বাবুকে খুন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিহতের পরিবার বলছে, বাবু হত্যার মূল পরিকল্পকারী হলেন মুসা।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিদেশফেরত সন্ত্রাসী মুসাকে গ্রেপ্তার করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। সোমবার রাতে মিরপুর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল তাঁকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের হেফাজতে নিয়েছে ডিবি।  

ডিবির মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, সোমবার মধ্যরাতে মিরপুর এলাকা থেকে বাবু হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে মঙ্গলবার তাঁকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় বাবু হত্যা মামলায় আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২৭ মে মিরপুরে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মুসা জড়িত কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া কারাগার থেকে বের হয়ে অন্য কোনো অপরাধেও তিনি সম্পৃক্ত হয়েছেন কিনা, তাও তদন্ত চলছে।  

২৭ মে প্রকাশ্যে মিরপুর ১০ নম্বরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পেছনের গলিতে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে ব্যবসায়ী জাহিদুল হকের কাছ থেকে টাকাভর্তি ব্যাগ কেড়ে নেয় অস্ত্রধারীরা। লুট ব্যাগটিতে ৩ হাজার ৫৫০ মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য দেশের মুদ্রা ছিল, যা বাংলাদেশি প্রায় ৩৫ লাখ টাকার সমান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ অ্যান্ড অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মিরপুরে ছিনতাই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। একটি মোটরসাইকেলে প্রথমে সন্দেহভাজন তিনজনকে দেখা গেছে। পেছনে আরেকটি মোটরসাইকেল ছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, জানুয়ারিতে নিহত বাবু পল্লবী এলাকার অন্ধকারজগতে ‘ব্লেড বাবু’ নামে পরিচিত ছিলেন। পল্লবীর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন তিনি। পল্লবী এলাকার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে ঘিরে সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুন গ্রুপের সঙ্গে সন্ত্রাসী মুসা গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘদিনের। বাবু মামুন গ্রুপের সদস্য ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার, চুরি ও ছিনতাইয়ের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাবু খুন হন। এ ঘটনায় ২১ জানুয়ারি নিহতের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার মিম পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। 

ঢাকার অপরাধ জগৎ দীর্ঘদিন দাপাচ্ছেন মুসা। আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যার সমন্বয়কারী হিসেবে আবার তার নাম সামনে আসে। অভিযোগ আছে– ওই কিলিং মিশনে শুটার ভাড়া করে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল সরবরাহ করেন তিনি। এর আগে ২০১৬ সালে মতিঝিলে যুবলীগ কর্মী রিজভী হাসান ওরফে ‘বোঁচা বাবু’ হত্যার সময়ও শুটারকে ভাড়ার দায়িত্ব পড়েছিল তার ওপর। বাবু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপরাধ জগতের তথ্য রাখেন– এমন একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান, টিপু হত্যা মিশনে মুসা ছাড়াও তার আপন ভাই আবু সালেহ শিকদার জড়িত। বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে দুই ভাই অপরাধ জগতে পা রাখেন। আশির দশকে মিরপুরে মুসার বাবা আবু সাইদ শিকদারকে হত্যা করা হয়। প্রায় দুই দশক পর মুসা ও তার ভাই সালেহ ওই হত্যায় অভিযুক্ত খোকনকে খুন করে। এরপর থেকে দুই ভাই পলাতক। তখনই অপরাধ জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়। মুসার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা আছে। তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা আছে ৮টি।

জানা গেছে, ভ্রমণ ভিসায় বৈধ পথেই দেশ ছেড়েছিলেন মুসা। দুবাই বসে টিপু হত্যার সর্বশেষ দিকনির্দেশনা দেন তিনি। মুসার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। তার জন্ম ১৯৭৯ সালে। এক সময় ফার্স্ট ভিডিশনে ফুটবল খেলতেন। ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তার নামে ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। গোয়েন্দারা বলছেন, ২০২২ সালে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা থেকেই নতুন পাসপোর্ট তৈরি করেন মুসা। এক সময় তার পরিচিতি ছিল মিরপুর ও পল্লবীকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী হিসেবে। তবে ধীরে ধীরে পুরো ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
 

আরও পড়ুন

×