মাসল ক্রাম্প

.
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০১
মাসল ক্রাম্প বলতে বোঝায় মাংসপেশির ব্যথাপূর্ণ সংকোচন বা মাংসপেশি হঠাৎ শক্ত হয়ে যাওয়া, যা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। সচরাচর এটি পায়ের মাংসপেশিতে ঘটে থাকে। রাতের বেলা সাধারণত পায়ের ডিম বা কাফ মাসল হঠাৎ সংকুচিত হয়, কিংবা শক্ত হয়ে যায়। কখনও কখনও উরু বা পায়ের পাতার পেশি সংকুচিত হতে পারে। আপনার ঘুমের মধ্যে কিংবা জেগে থাকা অবস্থায়ও এসব হতে পারে।
কী কারণে মাসল ক্রাম্প হয়
মাসল ক্রাম্পের কারণ সবসময় জানা যায় না। অনেক অবস্থা কিংবা অনেক কারণে মাসল ক্রাম্প হতে পারে, যেমন–
l ব্যয়াম, আঘাত বা পেশির অত্যধিক ব্যবহার
l গর্ভাবস্থা। এ সময়ে খনিজের পরিমাণ কমে যাবার কারণে ক্রাম্প হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের মাসগুলোতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়।
l ঠান্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে আসা, বিশেষ করে ঠান্ডা পানি লাগানো।
l অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন রক্ত চলাচল সমস্যা (প্রান্তিক ধমনীর অসুখ), কিডনি রোগ, থাইরয়েডের রোগ এবং মাল্টিপল স্কেলেরোসিস।
l দীর্ঘ সময় ধরে শক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা, দীর্ঘ সময় কোথাও বসে থাকা, কিংবা ঘুমের মধ্যে দু’পা বেঢপ ভঙিতে রাখা।
l রক্তে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম কিংবা অন্য খনিজ না থাকা।
l পানিস্বল্পতায় ভোগা। এর মানে হলো আপনার শরীর থেকে প্রচুর তরল ক্ষয় হওয়া।
lকিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করা যেমন মানসিক রোগের ওষুধ, জন্মনিরোধক বড়ি, ডাইইউরেটিকস, স্ট্যাটিন এবং স্টেরয়েড।
মাসল ক্রাম্প কীভাবে বন্ধ করবেন
মাসল ক্রাম্প এক অসহনীয় অবস্থা। এ সময়ে পেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। যন্ত্রণায় ছটফট করেন অনেকে। হঠাৎ মাসল ক্রাম্প শুরু হলে সেটি বন্ধ করতে আপনি বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন–
lমাংসপেশি প্রসারিত করুন ও ম্যাসাজ করুন।
lপেশি রিলাক্স করতে গরম পানিতে গোসল করুন বা সংকুচিত পেশিতে গরম পানি ঢালুন।
পেশিতে গরম প্যাড রাখলেও উপকার পাবেন।
lবরফ অথবা কোল্ড প্যাক ব্যবহার করে দেখুন। তবে বরফ খণ্ডটি অবশ্যই একটি কাপড়ে মুড়ে নেবেন।
lব্যথার ওষুধ খেতে পারেন। তবে ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। ওষুধের ব্যবহার বিধি ও নির্দেশ মাত্রা পড়ে নেবেন ও মেনে চলবেন।
lযদি আপনার ডাক্তার মাসল ক্রাম্পের ওষুধ প্রেসক্রাইবড করেন তাহলে তার প্রেসক্রিপশন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। ওষুধে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে অবহিত করুন।
lপ্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
কিছু স্পোর্টস ড্রিংকস রয়েছে যেমন–গ্যারোটেড, সেটি পায়ের পেশির ক্রাম্পে বেশ উপকারী।
পায়ের পেশির ক্রাম্পের জন্য আপনি নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন–
lকাছাকাছি জায়গায় হাঁটুন, অথবা পায়ে ঝাঁকি দিন।
lআপনার কাফ মাসল প্রসারণ করুন। আপনি বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এটি করতে পারেন।
lযখন বসে থাকবেন, আপনার পা সোজা করুন এবং পায়ের আঙুলগুলো ওপরের দিকে রেখে পাতা বাঁকিয়ে আপনার হাঁটুর দিকে আনুন। এ ক্ষেত্রে আপনি পায়ের তলায় একটি তোয়ালে দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু সোজা রেখে তোয়ালের দু’প্রান্ত ধরে ধীরে ধীরে আপনার নিজের দিকে টানতে পারেন।
lযখন দাঁড়াবেন, দেয়াল থেকে দুই ফুট সামনে দাঁড়ান।
দেয়ালের দিকে সামনে ঝুঁকে দাঁড়ান। আক্রান্ত পায়ের হাঁটু সোজা রাখুন এবং গোড়ালি মাটিতে রাখুন। এ সময়ে অন্য পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে রাখুন। যদি আপনার মনে হয় যে কোনো ওষুধের কারণে আপনার মাসল ক্রাম্প হচ্ছে তাহলে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলুন–
lওষুধের আরেকটি ডোজ গ্রহণের আগে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। ওই ওষুধ বন্ধ করার কিংবা পরিবর্তন করার অথবা ডোজ ঠিক করার প্রয়োজন হতে পারে।
lযদি আপনি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তাৎক্ষণিক ওষুধটি বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কীভাবে মাসল ক্রাম্প প্রতিরোধ করবেন
নিচের টিপসগুলো আপনার মাসল ক্রাম্প প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে–
lপ্রচুর পানি এবং অন্যান্য তরল খান যে পর্যন্ত না আপনার প্রস্রাব হালকা হলুদ অথবা পানির মতো স্বচ্ছ হয়।
lস্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করুন। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান।
lসাইকেলে উঠলে পেশি প্রসারণ করুন।
lব্যায়াম করার আগে ও পরে এবং রাতে শোবার আগে পেশি নিয়মিত প্রসারিত করুন।
lমনে রাখবেন, হঠাৎ করে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেবেন না। প্রতি সপ্তাহে অল্প করে মাত্রা বাড়ান।
lপ্রতিদিন একটি করে মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খান।
মাসল ক্রাম্প বারবার হলে কী করবেন
lযদি আপনার মাসল ক্রাম্প বারবার হতে থাকে, কিংবা খুব তীব্র হয় তাহলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। এটি অন্য কোনো সমস্যার কারণে হতে পারে, বিশেষ করে রেস্ট লেগ সিনড্রোমে এমন হয়।
lযদি মাসল ক্রাম্পের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তাহলে আপনার চিকিৎসক আপনাকে পেশি শিথিল করার ওষুধ দিতে পারেন।
[ভাইস প্রিন্সিপাল ও সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল]
- বিষয় :
- ব্যথা