ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা

মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা

ফাইল ছবি

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী)

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৮

মাথাব্যথা নিয়ে আমরা অনেকেই সচেতন নই। অন্য সব রোগের মতো আমরা এটিকে এতটা গুরুত্ব দিই না, যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যত্যয় না ঘটায়। মাইগ্রেন সেই রকমেরই মাথাব্যথা। টেনশন টাইপ মাথাব্যথার মতো মাইগ্রেনের ব্যথা প্রায় প্রতিদিনই হয়। তবে মাইগ্রেন অ্যাটাক করে সাধারণত হঠাৎ করে, মাঝে মধ্যে যাকে পিরিয়ডিক অ্যাটাক বলে। দেখা যায়, মাসে একবার বা সপ্তাহে একবার বা দু-তিন মাস পর পর এই তীব্র মাথাব্যথা হয়। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে এটি তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। অতিরিক্ত উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা-অস্থিরতা হতে পারে মাইগ্রেনের কারণ। যারা সব সময় ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে চিন্তাগ্রস্ত থাকেন বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের মাঝে মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথার প্রকোপ বেশি লক্ষণীয়। এ ছাড়া সেরেটোনিন নামক কেমিক্যালের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেও এই ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়া যেসব নারী দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন, তাদের মাঝেও মাইগ্রেনের লক্ষণ বেশি দেখা যায়। মাইগ্রেনের ব্যথা মাঝারি থেকে জটিল ধরনের হয়। সাধারণত এটি মাথার একটি ভাগে হয়। পুরো মাথা ধরে ব্যথা মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কম হয়। তবে দীর্ঘ সময় ব্যথা স্থায়ী হলে পুরো মাথায় ব্যথা হয়। এই মাথাব্যথা চার ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মনে হয়, মাথাটা ছিঁড়ে যাবে। মাইগ্রেনের ব্যথার আরেকটি লক্ষণ হলো– মাথাব্যথার সঙ্গে দেখা যায় বমি বমি ভাব, অনেকের বমি হয়। দেখা যায়, এই মাথাব্যথার সময় আলো অথবা শব্দ– এগুলো সহ্য করা যায় না। তাই দেখা যায়, মাইগ্রেন ব্যথা খুব বেশি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি একটি ঘরে আলো বন্ধ করে শুয়ে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাদের এই মাথাব্যথা থেকে মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি অভ্যাস এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
পেট খালি না রাখা 
দীর্ঘক্ষণ পেট খালি থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা বা সমস্যা শুরু হতে পারে। এর কারণ হলো– খালি পেটে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মাথাচাড়া দেয়, যা মাইগ্রেনের ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। 
ঘুমে অনিয়ম 
ঘুমের জন্য অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বরাদ্দ রাখতেই হবে। একান্ত না পারলে অন্তত ৬ ঘণ্টা ঘুমান। দিনের পর দিন রাত জাগলে, ঘুম কম হলে কিন্তু মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়বে। রাত জেগে ওয়েব সিরিজ় দেখা কিংবা মোবাইল ঘাঁটার অভ্যাসে রাশ টানুন।
চিনিমুক্ত খাবার
চিনি আছে– এমন খাবার এড়িয়ে চলুন। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে মাইগ্রেনের যন্ত্রণাও বাড়তে পারে।
কম্পিউটারের দিকে একটানা তাকানো 
একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ? মাঝে মধ্যে বিরতি না নিলে কিন্তু মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়বে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু চোখ-মুখে জল দিয়ে আসুন, বসার আসন থেকে উঠে ঘুরে আসুন।
শরীরে পানির ঘাটতি
গরমের দিনে এমনিতেই ডিহাইড্রেশন হয়। এই ডিহাইড্রেশনের সমস্যা থেকেও কিন্তু মাইগ্রেন হতে পারে। তাই বাইরে বেরোলেই সঙ্গে পানি রাখুন। পানি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পানীয়, যেমন ডাবের জল, টাটকা ফলের রস, ছাতুর শরবত খেতে পারেন। তবে সোডাযুক্ত নরম পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো।
আবহাওয়া 
অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরির কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত আর্দ্রতার তারতম্যে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে। চিকিৎসা ছাড়া দীর্ঘদিন মাইগ্রেনে ভুগলে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ রকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়ম মেনে ওষুধ খেতে হবে। সাধারণত মাইগ্রেনের ব্যথায় পেইনকিলার দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে পেইনকিলার খেলে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রোগী নিজে থেকে যদি কোনো পেইনকিলার খেতে শুরু করেন, তার পরিণাম আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।

[সহকারী রেজিস্ট্রার, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল]

আরও পড়ুন

×