হাঁটু ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা

.
তাসমিন আরা
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫ | ০০:১৯ | আপডেট: ০৬ মে ২০২৫ | ১২:০৩
ব্যথা কোনো রোগ নয়, ব্যথা বিভিন্ন লক্ষণ মাত্র। ব্যথা হচ্ছে এক প্রকার অনুভূতি, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি আমাদের শরীরের কোনো একটি অংশ স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না। ব্যথা মানব শরীরের বিভিন্ন অংশ হতে পারে। যেমন জোড়াগুলোতে ও মাংশপেশিতে। তবে জোড়ার ব্যথায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। এসব জোড়ার ব্যথার মধ্যে হাঁটুর ব্যথা বয়স্ক লোকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বয়স হলে হাঁটুর ব্যথা নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। এ বয়সে কাউকে না পেলে একাই চলতে হয়। এ একা চলার পথকে ধরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে। এই একলা চলার পথের সঙ্গী হচ্ছে আমাদের হাঁটু। হাঁটা ছাড়া আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারি না। ব্যথা সব বয়সেই হয়, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় অস্টিও-আর্থ্রাইটিস।
কী কী সমস্যা হতে পারে
- বসা থেকে উঠতে কষ্টবোধ করা
- বেশিক্ষণ হাঁটতে না পারা
- নামাজ পড়তে গিয়ে হাঁটু যখন তখন টন টন করে
- কখনও কখনও হাঁটুতে শব্দ হয়
- হাঁটু নড়াচড়া করলে বা ভাঁজ করলে কষ্ট বাড়ে
- তীব্র ব্যথা হলে ফুলে যায় বা লাল হয়ে যায়
এমন ব্যথার কারণ
- আঘাতের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
- লিগামেন্ট বা মিনিসকাস-এর ইনজুরির কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
- খেলাধুলা বা দাঁড়ানোর সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে হাঁটু মচকে গিয়ে ব্যথা হতে পারে
- বারসা বা টেনডনের আঘাতের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
- লিগামেন্ট ইনজুরির কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
হাঁটু মজবুত রাখার উপায়
হাড়ের মূল উপাদান আমিষ কোজেন এবং ক্যালিসিয়াম। প্রাকৃতিক নিয়মে ৩০ বছরের পর থেকে হাড়ের ঘনত্ব ও পরিমাণ কমতে থাকে। হাঁটু দুর্বল ও ভঙ্গুরও হতে থাকে। ৫০ থেকে ৬০ বছরের দিকে হাড় অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য হাড়কে মজবুত রাখতে হলে আমিষ কোলাজেন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে।
হাঁটু ব্যথা প্রতিরোধে উপায়
- হাঁটু ভাঁজ করে বেশিক্ষণ বসে কাজ করবেন না।
- অতিরিক্ত ওজন পরিহার করুন এবং স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখুন
- এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না
- ভারী বস্তা বহন করবেন না
- হাই কমোড ব্যবহার করুন
- খাওয়ার সময় চেয়ারে বসে খান
- সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার সময় সিঁড়ির রেলিং ব্যবহার করুন
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা করে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। কারণ সমস্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করে, সঠিক চিকিৎসা দিলে অবশ্যই ভালো হবে। ব্যথা যখন খুব বেশি হয়, তখন অনেকে ব্যথানাশক ওষুধ, মালিশ ও গরম শেক দিয়ে ব্যথা কিছুটা কমায়। কারণ তারা না বুঝে নিজেদের চিকিৎসা নিজেরাই করে। এভাবে চলে দীর্ঘ দিন। যখন এগুলোও কাজ করে না, তখন ব্যথা তাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়। যদি প্রথম পর্যায়ে এসব রোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিত এবং নিয়মকানুন মেনে চলত, তাহলে এ রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা করা সম্ভব এবং অস্টিও আর্থ্রাইটিস নামক রোগটিও হতো না। এ রোগটি পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। ফলে এ রোগ থেকে তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করা যেত। জীবন অনেক সুন্দর। সুন্দরভাবে বাঁচতে বা ব্যথামুক্তভাবে জীবন-যাপন করতে হলে এ অবস্থায় দৈনন্দিন জীবন-যাপনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। সঠিক ও মানসম্মত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। v
[বাত-ব্যথা, আর্থ্রাইটিস, প্যারালাইসিস ও ব্যাক পেইন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড]