নিত্যপণ্য আমদানির কোটা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী ভারত

মেসবাহুল হক
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০
চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদা– ছয়টি নিত্যপণ্য আমদানিতে বাংলাদেশকে বার্ষিক কোটা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। সম্প্রতি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন এ প্রস্তাব দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভার প্রস্তুতি গ্রহণে আজ বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে।
গত ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশ খাদ্যপণ্য সরবরাহের অনিশ্চয়তার কারণে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও মসুর ডাল- এই সাতটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে আলাদা কোটা চাওয়া হয়। সভায় বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিয়ুশ গয়াল নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ডাল বাদে ছয়টি পণ্যে কোটা দিতে প্রাথমিকভাবে আগ্রহ দেখায় ভারত। তবে পণ্যের পরিমাণ সংশোধন করে ফের প্রস্তাব পাঠাতে বলে দেশটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ভারতের পরামর্শে পণ্যের পরিমাণ সংশোধন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, এ বিষয়ে ভারতের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ একটি ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সমকালকে বলেন, বাংলাদেশে যদি কোনো পণ্যের উৎপাদন অনেক ভালো হয় এবং আমদানির চাহিদা না থাকে তাহলে কোটা অনুযায়ী আমদানি করবে কিনা, সেই বিষয়টি আলোচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তারা মনে করছেন, কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ পণ্য আমদানি না করলে ভারতের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই কোটা অনুযায়ী পণ্য আমদানির নিশ্চয়তা চায় ভারত সরকার। তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরিমাণ সংশোধন করে ফের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগির কোটা দিতে সম্মত হবে ভারত সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে প্রতি বছর ৪৫ লাখ টন গম, ২০ লাখ টন চাল, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ১৫ লাখ টন চিনি, ১ দশমিক ২৫ লাখ টন আদা, ৩০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১০ হাজার টন রসুনের কোটা চায় বাংলাদেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভারত থেকে হঠাৎ করে চাল, গম ও চিনি আমদানি বেড়ে যায়। সেই অনুযায়ী এসব পণ্যের পরিমাণ উল্লেখ করে কোটা চাওয়া হয়। কিন্তু ভারত সরকার বলেছে, শুধু এক বছর নয়, অন্তত ১০ বছরের আমদানি তথ্য বিশ্নেষণ করে এসব পণ্যের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২৫ লাখ টন গম, ১৫ লাখ টন চাল, ১০ লাখ টন চিনি, ৬ লাখ টন পেঁয়াজ, ১ লাখ টন আদা এবং ৫০ হাজার টন রসুনের বার্ষিক কোটা চেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০ লাখ টন চাল এবং ৫ থেকে ৭ লাখ টন গম সরকারিভাবে আমদানির সুপারিশ করা হয়। বাকি চাল, গম এবং অন্যান্য পণ্য বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা আমদানি করবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে ভারত পেঁয়াজ ও গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ। সম্প্রতি চাল রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। কিন্তু নিত্যপণ্য আমদানিতে বার্ষিক কোটা দিলে সামগ্রিকভাবে কোনো পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করলে বাংলাদেশ তার আওতায় থাকবে না। ভুটান ও মালদ্বীপকে এ সুবিধা দিয়ে আসছে ভারত।
চাল, গম, পেঁয়াজসহ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ভারতের ওপর বেশ নির্ভরশীল। ভারতে এসব পণ্যের উৎপাদন কম হলে কিংবা দাম বাড়লে অনেক সময় সেগুলোর রপ্তানি নিষিদ্ধ করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এতে বাংলাদেশে এসব পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ২০১৯ সালে ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর বাংলাদেশে পেঁয়াজের কেজি প্রায় ৩০০ টাকায় ওঠে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর চলতি বছরের মে মাসে ভারত গম রপ্তানিও নিষিদ্ধ করে। এর প্রভাবে বাংলাদেশে গমের সংকট দেখা দেয় এবং আটাসহ বেকারি পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
- বিষয় :
- নিত্যপণ্য আমদানি
- আমদানির কোটা
- ভারত