ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন

যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন

বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত- সমকাল

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ | ১৬:৪৫

দারিদ্র্য ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় সরকার প্রতি বছর নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ালেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সোমবার সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের জরিপ রিপোর্টে প্রকাশ- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে অদক্ষতা রয়েছে। আমরা জানি, এবারও প্রস্তাবিত বাজেটে দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় বড়সড় কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল অনেকের অস্বচ্ছতার কারণে যথাযথভাবে সরকারের কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানা রকম বৈরী পরিস্থিতি করোনা দুর্যোগেও পরিলক্ষিত হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে অসাধু জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বশীল অনেকেরই অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের জরিপ চিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার খুব একটা অবকাশ থাকে না। উপকারভোগীরা যে বা যাদের কারণে বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে নিন্দার বিষয়। আর এ কারণেই এসব জনবাস্তব কর্মসূচির প্রত্যাশিত ফল মিলছে না, উপরন্তু সরকারি বরাদ্দের অপচয় হচ্ছে ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা মহল বিশেষের উদরপূর্তি হচ্ছে।

আমাদের এখানে চলমান কয়েকটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ওপর পরিচালিত বিশ্বব্যাংকের জরিপ চিত্রে যে কদর্যতা উঠে এসেছে তাতে অনেকাংশেই প্রতিভাত হয় ব্যবস্থাপনা-পরিচালনাগত ত্রুটি। আমরা জানি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আমাদের দেশে বরাদ্দের পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে- দরিদ্র নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিএফ ও ভিজিডি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতাসহ এমন দরিদ্রবান্ধব ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি যে বা যাদের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তারা দেশ-সমাজের মিত্র হতে পারে না। সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার করলেও স্বেচ্ছাচারী-অসাধুদের অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। আর এ কারণে সরকারের মহৎ প্রচেষ্টা কিংবা উদ্যোগ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভেস্তে যাচ্ছে। করোনাজনিত সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সামাজিক অনুজ্জ্বলতা ঘোচাতে বা দূর করতে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ এখনই না নিলে সামাজিক প্রণোদনার সরকারের সদিচ্ছার সুফল অধরাই থেকে যাবে। দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের যদি কল্যাণই না হয়, তাহলে সরকারের গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তৃত করার লাভটাই-বা কী। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অনেক কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় ও বাস্তবায়ন দক্ষতার অভাব দূর করতেই হবে বৃহৎ স্বার্থে। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র নির্ধারণক্রমে এক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি-দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতেই হবে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, যে কোনো কর্মসূচি কিংবা প্রকল্পের বিস্তৃতকরণই বড় কথা নয়, যথাযথ বাস্তবায়নই হলো মূল বিষয়। যে বা যারা অপকৌশলে সুবিধাবঞ্চিতদের সুযোগবঞ্চিত করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে অপতৎপরতায় লিপ্ত, তাদের শিকড় উৎপাটনের মধ্য দিয়ে প্রতিকার-প্রতিবিধান নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এও জানি, আমাদের প্রেক্ষাপটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির যে নিরিখ বিবেচনা ক্রমে ক্রমপ্রসারিত হচ্ছে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ বহুমুখী ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব আরও দৃশ্যমান হতো। করোনা-দুর্যোগ দারিদ্র্যসীমার হ্রাসমান পরিসর বাড়িয়েছে। এমতাবস্থায় ঝুঁকির মুখে পড়া মানুষদের সুরক্ষা দিতে সরকারকে আরও টেকসই নীতি নিয়ে কাজ করতে হবে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেক মধ্যবিত্তকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনা দুর্যোগের ক্ষত জীবন-জীবিকায় নতুন করে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তাতে দরিদ্র্যের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ত্রুটি কিংবা দুর্বলতা দূরীকরণে মনোযোগ গভীর করতে হবে। যেসব কর্মসূচির ফাঁকফোকর আছে তা বন্ধ করে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করতে হবে সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীলদের নির্মোহ অবস্থান নিয়ে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রকল্পগুলোর বিষয়ে আরও সজাগ হওয়াও জরুরি।

নানা অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সদিচ্ছা ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ও কারও কারও মূল্যবোধ ধসের কারণে বিনষ্ট হবে- তা মেনে নেওয়া যায় না। প্রান্তিক কিংবা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি ন্যায়ানুগ আচরণ করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই হবে। অনস্বীকার্য- সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টায় অনেক ক্ষেত্রেই দারিদ্র্য ঘুচেছে, সচ্ছলতা ফেরার দৃষ্টান্তও কম নয়। সরকারের ভালো উদ্যোগ যাতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে অনিয়মের কারণে বিনষ্ট না হয় এ জন্য নজর আরও বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন

×