ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মুজিববর্ষে ঘর উপহার

গৃহহীনের হাতে গর্বের চাবি

গৃহহীনের হাতে গর্বের চাবি

ডা. জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ (বায়ে) ও ডা. শাহরিয়ার খান

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ | ১৫:১৯

সরকার সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে অসহায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, তার আনন্দে আমরাও সমান অংশীদার। 'মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না'- প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীন চলমান গৃহ ও জমি প্রদান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের ঘর ও ভূমি বন্দোবস্তকরণের জন্য সরকারকে আমরা সাধুবাদ জানাই। শনিবার ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, এর চেয়ে বড় উৎসব আর হতে পারে না। এটা ঠিক যে, দেশে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বিবেচনায় প্রথম ধাপে উপকারভোগীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। তার পরও একসঙ্গে এত মানুষের ঘরের ব্যবস্থার মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, সবার জন্য গৃহ নিশ্চিত করতে সরকার সচেষ্ট। এটি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত কার্যক্রমের ফল।

আমরা বিশ্বাস করি, প্রকল্পের কাজ এখানেই থেমে থাকবে না। বরং সরকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর করে দিতে যে ৯ লাখ পরিবারকে তালিকাভুক্ত করেছে, বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে ভূমি ও ঘর দেওয়া হবে। আমরা জানি, বাংলাদেশে নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভিটা হারায় মানুষ। আবার দারিদ্র্য নিয়ে শহরে এসে উচ্চমূল্যের ভাড়ায় অনেকেই বাসায় থাকতে পারে না বলে ফুটপাত ও বস্তিই ভরসা। আবাসন মানুষের মৌলিক চাহিদার অংশ হলেও নিঃস্ব মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে মানুষ যে নিরন্তর সংগ্রাম করছে, সেখানে সরকারের গৃহ ও জমি প্রদানের ব্যবস্থা কেবল সহায়-ই নয়, জরুরিও বটে। আমরা দেখেছি, সরকার স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসারে সাশ্রয়ী মূল্যে নগর আবাসন নিশ্চিত করতে অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের কাজেও হাত দিয়েছে। এমনকি কোনো নাগরিকের যাতে বস্তিতে বসবাস করতে না হয়, সেজন্য সরকার বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাটও নির্মাণ করছে। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকারের এসব মহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে উপকারভোগীরা এর সুফল পাবেন।

ভালোভাবে বাঁচার জন্য আবাসন কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলা বাহুল্য। আমরা জানি, সেটি অনেকেরই স্বপ্ন। আর সেজন্যই দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের অনেকেই সারাজীবনের সঞ্চয় একটি কাঙ্ক্ষিত আবাসনের পেছনে খরচ করেন। আমরা মনে করি, দেশের উন্নয়নের অংশ হিসেবেই গৃহহীনের আবাসনের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তবে এসব প্রকল্পে একদিকে যেমন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ করা চাই, একই সঙ্গে উপকারভোগী বাছাইয়েও যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিঃস্ব ও অসহায়ের জন্য সরকারের প্রকল্পের সুফল সামর্থ্যবানরা পেলে সেটা দুঃখজনক। আমরা দেখেছি, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া দেশের নিম্ন আয়ের ৫০ লাখ পরিবারের জন্য যে নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে, সেখানেও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

আমরা চাই, সব ক্ষেত্রেই সরকারের যে সাহায্য বা প্রণোদনা রয়েছে তা উপকারভোগী যাচাই-বাছাই করেই নির্ধারণ করতে হবে। আমরা জানি, গৃহহীন সমস্যা একটি বৈশ্বিক সংকট। উন্নত বিশ্বেও গৃহহীন মানুষকে ঘরে ফেরাতে নানা উদ্যোগ রয়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ করছে, সবাইকে আশ্রয় প্রদানের যে বিশাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সর্বোপরি প্রথম পর্যায়ে যেভাবে একসঙ্গে এত মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করেছে, তাতে বিশ্বের জন্যও উদাহরণ হয়ে থাকবে। দেশের সব গৃহহীনের আবাসন নিশ্চিত করা যেহেতু খরচেরও বিষয়, সেহেতু আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদেরও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে প্রথম পর্যায়ের সফলতা কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। একই সঙ্গে গৃহহীন সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া চাই।

একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা রোধে উন্নত বিশ্বের দায়িত্ব ও এ-সংক্রান্ত প্রকল্প ও তহবিলের সদ্ব্যবহার প্রত্যাশিত। 'মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না' এটি সরকারের চ্যালেঞ্জ। আমরা জানি, নগর ও গ্রামের বৈষম্য দূরীকরণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন। মুজিববর্ষে গৃহহীনকে ঘর উপহার বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্নেরই অংশ এবং একইসঙ্গে এটি আমাদের সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকারও বটে। সুতরাং এ চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়া কেবল সরকারের নয়, মানবতারও জয়।

আরও পড়ুন

×