স্মরণ
গণমানুষের নেতা

আহসান উল্লাহ মাস্টার (১৯৫০-২০০৪)
ইজাজ আহ্মেদ মিলন
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২২ | ১২:০০
টঙ্গীর নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সবুজ মাঠে পড়ে থাকা ছোপ ছোপ সেই রক্তের দৃশ্য চোখে ভেসে উঠলেই নবারুণ ভট্টাচার্যের 'এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না' কবিতার কথা মনে পড়ে। ২০০৪ সালের ৭ মে, শুক্রবার। মসজিদে জুমার নামাজের আজান দিতে তখনও অল্প সময় বাকি। মুয়াজ্জিন হয়তো আজানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাড়ির পাশের ওই মাঠজুড়েই মানুষ আর মানুষ। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভাওয়াল বীরখ্যাত আহসান উল্লাহ মাস্টারের বক্তব্য শোনার জন্য বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রশস্ত বক্ষ উঁচু করে দীর্ঘদেহী বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টার শুরু করেন তার বক্তব্য। গণমানুষের এই প্রিয় নেতাকে হত্যা করার জন্য তখন মঞ্চের আশপাশেই অস্ত্র হাতে নিয়ে ওত পেতে বসেছিল একদল সন্ত্রাসী। বক্তব্য দেওয়ার সময় সুযোগ বুঝে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে তিন দিক থেকে আহসান উল্লাহ মাস্টারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। গুলিবিদ্ধ দেহ থেকে স্রোতের মতো বের হতে থাকে রক্ত। শ্রমিক লীগ নেতা থেকে গণমানুষের নেতায় পরিণত হওয়া আহসান উল্লাহ মাস্টারকে নির্মমভাবে হত্যার ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও শেষ হয়নি বিচার কাজ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক অগণিত ছাত্রের প্রিয় শিক্ষক আহসান উল্লাহ মাস্টার মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য (মরণোত্তর) আহসান উল্লাহ মাস্টারকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ১৭ বছরের মাথায় এ পুরস্কার দিয়ে তাকে সম্মানিত করেছে রাষ্ট্র।
১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন শেষে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আহসান উল্লাহ মাস্টার। টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) এবং প্রধান শিক্ষক (১৯৮৪-২০০৪) হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন শিক্ষকদের শিক্ষক, রাজনীতিকদের শিক্ষক। মানুষকে খুব সহজে আপন করে নেওয়ার বড় একটি গুণ ছিল তার মধ্যে। গতানুগতিক স্বার্থবাদী রাজনীতির বদলে মানুষের কল্যাণের রাজনীতির দর্শনকে ধারণ করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর আদর্শই ছিল তার আদর্শ।
খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণের রাজনীতি করে যে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে প্রিয় নেতা হওয়া যায় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার তা প্রমাণ করে গেছেন। ১৯৯৬ সালে গাজীপুর-২ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হলেও আহসান উল্লাহ মাস্টারকে পরাজিত করা যায়নি।
জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের চেয়ারম্যান ছিলেন। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়ন, পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করার জন্য তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে সেই মামলা পরিচালনার জন্য তিনি একটি তহবিল গঠন করেছিলেন। শ্রমজীবী মানুষের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা থাকলে একজন নেতা এমন উদ্যোগ নিতে পারেন।
গণমানুষের নেতা এই রাজনীতিককে হত্যা করা হলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি ঘাতকরা। ভাওয়াল বীরের দেখা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছেন তারই পুত্র যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে হেঁটে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সমৃদ্ধ ও যুব সমাজকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলের যুদ্ধ চলছে। ভাওয়াল বীর আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১৮তম শাহাদাতবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
ইজাজ আহ্মেদ মিলন :সমকালের গাজীপুর প্রতিনিধি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক অগণিত ছাত্রের প্রিয় শিক্ষক আহসান উল্লাহ মাস্টার মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য (মরণোত্তর) আহসান উল্লাহ মাস্টারকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ১৭ বছরের মাথায় এ পুরস্কার দিয়ে তাকে সম্মানিত করেছে রাষ্ট্র।
১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন শেষে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আহসান উল্লাহ মাস্টার। টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) এবং প্রধান শিক্ষক (১৯৮৪-২০০৪) হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন শিক্ষকদের শিক্ষক, রাজনীতিকদের শিক্ষক। মানুষকে খুব সহজে আপন করে নেওয়ার বড় একটি গুণ ছিল তার মধ্যে। গতানুগতিক স্বার্থবাদী রাজনীতির বদলে মানুষের কল্যাণের রাজনীতির দর্শনকে ধারণ করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর আদর্শই ছিল তার আদর্শ।
খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণের রাজনীতি করে যে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে প্রিয় নেতা হওয়া যায় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার তা প্রমাণ করে গেছেন। ১৯৯৬ সালে গাজীপুর-২ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হলেও আহসান উল্লাহ মাস্টারকে পরাজিত করা যায়নি।
জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের চেয়ারম্যান ছিলেন। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়ন, পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করার জন্য তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে সেই মামলা পরিচালনার জন্য তিনি একটি তহবিল গঠন করেছিলেন। শ্রমজীবী মানুষের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা থাকলে একজন নেতা এমন উদ্যোগ নিতে পারেন।
গণমানুষের নেতা এই রাজনীতিককে হত্যা করা হলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি ঘাতকরা। ভাওয়াল বীরের দেখা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছেন তারই পুত্র যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে হেঁটে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সমৃদ্ধ ও যুব সমাজকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলের যুদ্ধ চলছে। ভাওয়াল বীর আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১৮তম শাহাদাতবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
ইজাজ আহ্মেদ মিলন :সমকালের গাজীপুর প্রতিনিধি