সরিষার ভূতই কর্ণফুলীর সংকট

প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৪ | ২৩:৫৯
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলিয়া খ্যাত চট্টগ্রাম মহানগরীর পার্শ্ব দিয়া বহমান কর্ণফুলী নদী রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগ বারংবার কেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইতেছে, উক্ত প্রশ্নের উত্তর মিলিতে পারে রবিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। দেখা যাইতেছে, শাহ আমানত সেতু এলাকায় নদীর ভরাটকৃত ভূমিতে ‘সাম্রাজ্য’ গড়িয়া তুলিয়াছেন ক্ষমতাসীন দলের মহিউদ্দিন বকুল নামক স্থানীয় নেতা। তথায় তিনি বরফকল, কোল্ডস্টোরেজ, বালুর আড়ত, ট্রাকস্ট্যান্ড স্থাপন করিয়াছেন। যাহা অধিক বিস্ময়কর, এই ভূমি তিনি খোদ বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে ‘ইজারা’ লইয়াছেন। আমাদের প্রশ্ন, নদীর ভূমি বন্দর কর্তৃপক্ষ ইজারা দিয়াছে কোন আইনে? আর একখণ্ড ইজারার বদৌলতে আরও কত খণ্ড যে বেদখল হইতে পারে, সেই উদাহরণ দেশের বিভিন্ন নদীতীরেই দৃশ্যমান। কর্ণফুলীতেও উহার ব্যতিক্রম ঘটে নাই। প্রতিবেদনে দেখা যাইতেছে, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ঐ ইজারাকাণ্ডের পর ‘বকুলপুর’ সাম্রাজ্য, তৎসহিত কর্ণফুলী ঘিরিয়া মৎস্য বাজারসহ দুই সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়িয়া উঠিয়াছে। ফলে উক্ত এলাকায় নদীর প্রশস্ততা ১৯৮৫ সালের ৯৫২ মিটার হইতে বর্তমানে ৪৪৬ মিটারে নামিয়াছে।
প্রতিবেদনে কর্ণফুলীর দখল উচ্ছেদ না হইবার বিষয়কে ‘রহস্যজনক’ আখ্যা দেওয়া হইলেও, উহার কারণ স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ। ইহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই– কর্ণফুলী দখলের ক্ষেত্রে এইভাবেই প্রশাসনিক অবিমৃষ্যকারিতা, অর্থনৈতিক অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাবের ত্র্যহস্পর্শে পরিস্থিতির অবনতি ঘটিতেছে। বস্তুত এই ত্রিমুখী প্রভাবের কারণেই এই সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশ রহিয়া যায় বহাল তবিয়তে। এমনকি নদী কমিশনের তাগাদাও আমলে লয় না কর্তৃপক্ষ। আমরা জানি, কর্ণফুলী রক্ষা করিতে নীতিগত উদ্যোগের ঘাটতি নাই। কয়েক বৎসর পূর্বে একো মহাপরিকল্পনাও প্রণীত হইয়াছিল। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে যদি আদালতের নির্দেশ কিংবা নদী কমিশনের তাগাদা প্রতিপালিত না হয়, তাহা হইলে তো সকলই গরল ভেল! আমরা মনে করি, চট্টগ্রামের প্রাণপ্রবাহ কর্ণফুলী নদীকে দখল-দূষণমুক্ত করিতে হইলে সরিষার ভূত তাড়াইতে হইবে সর্বাগ্রে। প্রশাসনিক অবিমৃষ্যকারিতা ও রাজনৈতিক প্রভাব রুখিতে না পারিলে কর্ণফুলী রক্ষার নীতি ও পরিকল্পনা নিছক কাগজের তোড়ারূপেই দেরাজের শোভা বর্ধন করিতে থাকিবে।
- বিষয় :
- কর্ণফুলী নদী