ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

একাকিত্ব ঝেড়ে ফেলুন

একাকিত্ব ঝেড়ে ফেলুন

মডেল: মৌসুমী নাগ; ছবি: আর্কাইভ

অনন্দ্যি শুভ

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০৮:৫৫

একা থাকা মানেই কিন্তু একাকিত্ব নয়। কখনও কখনও চারপাশে অনেক মানুষ থাকলেও নির্দিষ্ট মানুষ বা সত্তার অভাবে একজন মানুষ নিজেকে নিঃসঙ্গ ও একাকী মনে করে। আবার নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হলে একা থেকেও ভীষণ আনন্দে থাকা যায়। লিখেছেন অনিন্দ্য শুভ।

'কেন এই নিঃসঙ্গতা/ কেন এই মৌনতা/ আমাকে ঘিরে'- সোলসের এই গান যেন একাকিত্বে ভোগা একজন মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। একাকিত্ব নিয়ে আমরা সব সময় ভুল ধারণা পোষণ করে থাকি। আমরা মনে করি, একা থাকাটাই হচ্ছে একাকিত্বের কারণ। অথচ একা থাকা মানেই একাকিত্ব নয়। কেননা, হাজার মানুষের ভিড়েও কেউ কেউ একাকী বোধ করে, একাকিত্ব পুষে বেড়ায়। আবার নিশ্চুপ নির্জনে বসেও কেউ কেউ একাকিত্বের থাবা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। নিঃসঙ্গতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন জার্মান সাইকিয়াট্রিস্ট ফ্রম্ম রিচম্যান। তাঁর মতে, নিঃসঙ্গতা একটি আবেগের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতা যারা বয়ে বেড়াচ্ছে, এর মূলে রয়েছে তাদের মনের সাধারণ অসন্তোষ, অসুখী, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, শূন্যতা ও একঘেয়েমি অনুভূতি।

একা থাকলেই যে একাকিত্ব নয়- এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নাইমা ইসলাম অন্তরা। তিনি বলেন, একা থেকেও নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব কাটিয়ে ভালো থাকা যায়। একা থাকার প্রথম এবং প্রধান সুবিধা হলো স্বাধীনতা। স্বাধীন থাকার কারণে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়া যায়। ফলে জীবন সম্পর্কে বাস্তবধর্মী ধারণা তৈরি হয়।

একা থাকলে পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ সময় মানুষ ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় নিজের কাজ নিজে করতে শেখে। একা থাকার ফলে যে কোনো কাজে আগ্রহ এবং পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে সুবিধা পাওয়া যায়। নিজেকে জানার এবং গবেষণা করার সুযোগ তৈরি হয়। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মুক্তচিন্তা কিংবা মুক্তবুদ্ধি চর্চার জন্য যে মানসিক শান্তির দরকার, একাকিত্ব ব্যক্তিকে সেই শান্তির সন্ধান দিতে সক্ষম। নিজেকে আবেগের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া যায় এবং একজন যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে তৈরি করা যায়। একা থাকলে নিজেকে চেনা অনেক সহজ হয়। নিজের সবলতা-দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। একা থাকা মানুষ সম্পর্কের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে। এই সময়ে আপনি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন। যেমন- বই পড়া, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তথ্য জানা, বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যাওয়া, শপিং ইত্যাদি কাজের পেছনে সময় ব্যয় করা প্রভৃতি। প্রয়োজনে সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন।

তবে একা থাকা মানে একাকিত্ব না হলেও অনেক সময় আবার বিপরীত পরিস্থিতিও চোখে পড়ে। একা থাকার কুফলও রয়েছে। সব সময় একা থাকলে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন জগতের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে। এতে সময়ের অপব্যবহার হয়; আত্মকেন্দ্রিকতা বাড়ে। একা থাকলে নিজের দুনিয়ার বাইরেও যে আরেকটা দুনিয়া আছে এটি ব্যক্তি ভুলে যায়। ফলে অন্য মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে বা যে কোনো সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণে অনিচ্ছা বা অপারগতা তৈরি হয়।

একা থাকলে বিপদ-আপদে পাশে কাউকে পাওয়া যায় না। সব বিপদ একাই সামাল দিতে হয়। পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি, নিষ্ঠুরতা বাড়তে পারে। নিজের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বোধ এবং হতাশা তৈরি হতে পারে। তীব্র হতাশা মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

আরও পড়ুন

×