সুরের গহিনে

ন্যান্সি
রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ০৫:২৭
‘গান আমার নেশা, পেশা, ভালোবাসা– সবকিছু। গান ছাড়া একটি দিনও কাটে না। অথচ কিছুদিন ধরে অনুভব করছি, এখনকার গানে ততটা প্রাণের ছোঁয়া নেই। গাইছি, কিন্তু সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠতে পারছি না। তাই নিজের কাছে প্রশ্ন– আমি কি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না? নাকি আমার কণ্ঠ, গায়কি মাথায় রেখে কেউ গান তৈরি করছেন না? জানি, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে লাভ নেই। যে সময়ে মানুষ গানের চেয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে জামা, জুতার ভিডিও দেখতে বেশি আগ্রহী, টিকটকে পোস্ট করা উদ্ভট কাণ্ডকারখানার দৃশ্যে মজে আছে, সেই সময়ে আর যা-ই হোক, গানের নান্দনিকতার বিচার চলে না।
এরপরও এত বছর গানের ভুবনে কাটিয়েও তাই মনে হচ্ছে, সবকিছুই কেমন ওলটপালট হয়ে গেল।’ ন্যান্সির মুখে এ কথা শুনতে পাব– সত্যি আশা করিনি। যাঁর কণ্ঠসুধা সংগীতপ্রেমীকে মুগ্ধতায় বিভোর করে রাখে, অনিন্দ্য গায়কি হৃদয়ে অনুরণন তুলে যায় দীর্ঘ সময় ধরে, দেশবরেণ্য শিল্পীরাও যাঁর কণ্ঠ ও গায়কির প্রশংসায় পঞ্চমুখ, সেই ন্যান্সিই শোনালেন হতাশার কথা! আমরা জানি, নন্দিত এই কণ্ঠশিল্পী সব সময় সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করেন।তিলকে তাল বানিয়ে বলার অভ্যাস তাঁর নেই। স্পষ্টবাদী। যে জন্য তাঁকে অনেকে যেমন শ্রদ্ধা করেন, সমীহ করে চলেন; তেমনি ভয় পাওয়া, দূরে সরে থাকা মানুষের সংখ্যাও কম নয়।
কিন্তু ন্যান্সির আছে ঈশ্বর-প্রদত্ত শ্রুতিমধুর অসাধারণ এক কণ্ঠ, অনবদ্য গায়কির মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন অনন্য এক শিল্পী– সে কথা অস্বীকার করেন না কেউই। তাই কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি কখন কী আয়োজন করছেন, তা জানার কৌতূহল থাকাই স্বাভাবিক। আর সামনে যখন ঈদের মতো একটি উৎসব, তাঁকে নিয়ে বিশেষ কোনো আয়োজন থাকবে– এমন প্রত্যাশা থাকাটা বাড়াবাড়ি নয়। অখচ ‘দ্বিধা’ [বাহির বলে দূরে থাকুক], ‘পৃথিবীর যত সুখ’, ‘আমি তোমার মনের ভেতর’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘পাগল তোর জন্য’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের এই শিল্পীকে নিয়ে কোনো টিভি চ্যানেল বিশেষ কোনো আয়োজন করছে না।
ন্যান্সি জানালেন, এখনও কোনো একক বা লাইভ নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘ঈদ ছাড়া সেভাবে বড় কোনো আয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করে টিভি আয়োজন সাজানো হয়, সেই বিজ্ঞাপনী বাজেটও নানা মাধ্যমে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে অনুষ্ঠানের বাজেট। তাই চাইলেও একটি আয়োজনে কাঙ্ক্ষিত মিউজিশিয়ান পাওয়া যাচ্ছে না। অনুষ্ঠানে থাকছে না ভালো সেট, মিউজিশিয়ান টিম, সাউন্ড সিস্টেম। তাই একই গান, একই কথা-সুর, একই শিল্পী গাইলেও তাঁর পরিবেশনা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এদিকে আবার মিউজিশিয়ানদের সম্মানী বাড়লেও শিল্পীদের বাড়েনি। এর চেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, নন্দিত, শ্রোতাপ্রিয় শিল্পী থেকে শুরু করে তরুণদেরও প্রায় একই কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিল্পী সম্মানীর ক্ষেত্রে সবার অঙ্কই একই রকম হয়ে যাচ্ছে। আয়োজকদের এমন দৃষ্টিভঙ্গি আর গানের ভুবনে বৈষম্য শিল্পীসত্তাকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে।’ তাহলে কি এই ঈদে আপনাকে দেখা যাবে না? ন্যান্সি বলেন, “দেখা গেলেও যেতে পারে। কিন্তু কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়।
তবে নতুন গান হয়তো প্রকাশ পাবে। কারণ, গান গাওয়ায় বিরতি দেইনি। দিলে হয়তো অনেকেই বলতেন, ‘বাচ্চা-কাচ্চা হয়েছে, এখন আর ন্যান্সি কী গান গাইবে।’ এর মধ্যে বেশ কিছু গান রেকর্ড করা হয়ে গেছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে কোন গান কবে প্রকাশ পাবে– নিজেও জানি না। এটা প্রযোজক, প্রকাশকরাই চূড়ান্ত করবেন।” ন্যান্সির এ কথায় এটা বোঝা গেল যে, টিভি আয়োজন আর স্টেজ শোর চেয়ে এখন তিনি একক গান ও প্লে-ব্যাককে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘চটকদার শিল্পী হয়ে না থাকতে পারলে ডিমোশন অবধারিত। এখন আর শিল্পীদের নিজস্বতা ধরে রাখার সুযোগ নেই। স্টেজে উঠে সব শিল্পীকে একই ধরনের গান গাইতে হচ্ছে। সম্মানী নিয়েও অনেকের প্রশ্ন– এই শিল্পী এত টাকা চায় কেন, বাদ দিয়ে দাও। এমনই যাদের মনোভাব, সেই সব আয়োজক সংগীতের সৌন্দর্য, শক্তি উপলব্ধি করছে কীভাবে? এই প্রশ্ন মনে নাড়া দেয় বলেই সেই আয়োজনে অংশ নিচ্ছি, যেখানে শিল্পী হিসেবে পাচ্ছি ন্যূনতম সম্মান আর সুরের গহিনে ডুবে যাওয়ার সুযোগ।’