ভারত–মিয়ানমার সীমান্ত কাঁটাতারে ঘেরা হচ্ছে

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ধরে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যটিতে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়েছে এবং এতে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। এ অবস্থায় মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে ভারত।

ইতোমধ্যে মিয়ানমার সীমান্তের ৩০ কিলোমিটার অঞ্চল কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সঙ্গে ভারতের ১৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে মণিপুর রাজ্যের সীমান্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। বুধবার পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই এবং সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে পিটিআই বলছে, ভারত ও মিয়ানমারের পুরো সীমান্তকে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে। সেই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত প্রায় ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার বিস্তৃত। ৩১ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে ওই সীমান্ত বরাবর কাঁটাতার বসানো হবে। এছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তের ৩০ কিলোমিটার অঞ্চল ইতোমধ্যেই কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।

মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর এলাকায় মাদক ও অস্ত্রের চোরাচালানের অভিযোগ প্রায়ই উঠে থাকে। মণিপুরে অশান্তির অন্যতম কারণ হিসাবেও সীমান্তের এই পরিস্থিতিকেই ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।

মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর কাঁটাতার বসানো ও সড়ক নির্মাণের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। মণিপুর ছাড়াও মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশের ৫২০ কিলোমিটার, নাগাল্যাণ্ডের ২১৫ কিলোমিটার, মনিপুরের ৩৯৮ কিলোমিটার এবং মিজোরামের ৫১০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

পিটিআই জানিয়েছে, মণিপুরের মোরের কাছে মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর প্রায় ১০ কিলোমিটার কাঁটাতার বসানোর কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। মণিপুর ও অন্য রাজ্যগুলোতে আরও ২১ কিলোমিটার জুড়ে কাঁটাতার বসানোর কাজ চলছে। মণিপুরে অশান্তির আবহে মিয়ানমারের সঙ্গে গোটা সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। 

দ্য হিন্দু বলছে, ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে মণিপুরের উপজাতীয় কুকি-জো এবং মেইতেই জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত সহিংসতায় কমপক্ষে ২৩৭ জন নিহত হয়েছেন। সংঘাত-সহিংসতায় ৬০ হাজারেরও বেশি লোক তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অতীতে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল পর্যন্ত অবাধ যাতায়াতের সুযোগ ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের লুক ইস্ট নীতির অংশ হিসাবে ২০১৮ সালে এটিকে চালু করা হয়েছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বসবাসকারী মানুষ সীমান্তের দু’দিকেই ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনও নথিপত্র ছাড়াই যাতায়াত করতে পারতেন। সেই চুক্তিও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাতিল করে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।