প্রকৃতি
পাখির দ্বীপ

মনোমুগ্ধকর গ্রিমসি দ্বীপে পাখিদের নিত্য বিচরণ- বিবিসি
তুহিন তৌহিদ
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:০৬
আইসল্যান্ডের উত্তর উপকূল থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে সাগরে মাথা উঁচু করে আছে ছোট্ট দ্বীপ গ্রিমসি। নোনাজলের ঢেউ আছড়ে পড়ছে এর খাড়া পাহাড়ের গায়ে। বাতাসের প্রবাহ থামছেই না। কোথাও পাহাড় থেকে ঢালু হয়ে নেমে এসেছে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। দ্বীপজুড়ে লাখ লাখ প্রাণের আবাস। তবে মানুষ মাত্র ক’জন; বাকি সব পাখি। হরেক রঙের, হরেক জাতের। দ্বীপটি যেন সামুদ্রিক পাখিদের সুবিশাল নীড়। পাহাড়ের পরতে পরতে সবুজ ঘাসের চাদর, সেখানে তাদের ওড়াউড়ি, কলরব।
শেষ আগস্টের এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনেও গ্রিমসিতে বাতাসের তীব্র প্রবাহ অনুভূত হয়। ১৯৩১ সাল পর্যন্ত দ্বীপটিতে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ছোট নৌকা। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। দ্বীপে রয়েছে একটি ছোটখাটো বিমানবন্দরও। আইসল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডের আকুরেইরি শহর থেকে বিমানে মাত্র ২০ মিনিটেই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। অসাধারণ বৈচিত্র্যময় পাখির-সাম্রাজ্য দেখতেই মূলত পর্যটক সেখানে ভিড় জমান। দেখা মেলে কালো পায়ের কিটিওয়েক, রেজারবিল ও গিলেমটসের। উন্মুক্ত পরিবেশে তারা ফিরছে সাবলীলভাবে। দ্বীপে মানুষের বসবাস থাকলেও পাখির তুলনায় তা আনুমানিক প্রতি ৫০ হাজারে একজন। স্থানীয় ট্যুর গাইড হাল্লা ইনগলফডত্তির জানান, শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে, এ দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দা মাত্র ২০ জন।
দক্ষিণ-পূর্ব আইসল্যান্ডেই বেড়ে উঠেছেন হাল্লা। পরে বোনের বাড়ি ঘুরতে এসে তিনি গ্রিমসিতে সময় কাটিয়েছেন। স্থানীয় এক জেলেকে বিয়ে করে তাঁর বোন দ্বীপেই থাকেন। এভাবেই হাল্লার আসা-যাওয়া। ২০১৯ সালে তিনি গ্রিমসিতে স্থায়ী বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। হাল্লা বলেন, ‘আসলে আমি দ্বীপটিকে ভালোবেসে ফেলেছি। এখানে একটা জাদু আছে। এখানকার মানুষ ও প্রকৃতি অসাধারণ।’ তিনি জানান, এ দ্বীপের প্রকৃতি খুব শক্তিশালী। শীতে প্রকৃতি ভিন্ন রূপ ধারণ করে, ঝড় ও তারকা উভয়ই থাকে। বসন্তে আসে আলো ও পাখিরা। এখানে প্রতিটি ঋতুই অনন্য।’
জাতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন গ্রিমসি। তাই অভ্যন্তরীণভাবেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। হাল্লা বলেন, ‘আইসল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডের মানুষ যা করে আমরাও
এখানে একই ধরনের কাজ করি। আমরা কাজ করি, ব্যয়াম করার জন্য জিমে যাই। প্রকৃতির কারণেই আমি এখানে থাকি।’ তবে গ্রিমসিতে হাসপাতাল, চিকিৎসক বা পুলিশ স্টেশন নেই। জরুরি পরিস্থিতিতে কোস্টগার্ডরাই মূল ভূখণ্ডে
নিয়ে যান।
দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে পরিপাটি কয়েকটি ঘর দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে পর্যটকের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। সেখানে একটি মুদি দোকানও আছে, যেটি দিনে এক ঘণ্টার জন্য খোলা থাকে। আছে রেস্তোরাঁ, বার, সুইমিং পুল, পাঠাগার, গির্জাও। আইসল্যান্ডের অন্য ছোট্ট শহরগুলোর মতো গ্রিমসির ইতিহাসও এর আঞ্চলিকতায় নিমগ্ন। স্থানীয় নর্স জনগোষ্ঠীর লোকজন এখানে প্রথমে বসবাস শুরু করেন। এক সময় অনেক মানুষের বাস ছিল দ্বীপটিতে। ১৮ শতকের শুরুতে আকস্মিক জনসংখ্যা কমতে শুরু করে। নিউমোনিয়া ও মাছ ধরা-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে দ্বীপ ছাড়তে থাকেন লোকজন।
২০০৯ সালে আকুরেইরি পৌর সীমানার অন্তর্ভুক্ত হয় গ্রিমসি। এর পরই দ্বীপটির অনেক উন্নয়ন ঘটে। এর আকর্ষণ প্রসঙ্গে গ্রিমসির পর্যটন ব্যবস্থাপক মারিয়া এইচ ট্রিগবাদত্তির বলেন, এ দ্বীপে তাঁর যা বেশি ভালো লাগে, তা হলো– নির্জনতা, অনন্য আলোর ঝলক ও অসাধারণ পাখিজীবন। গ্রিমসির ঘাসে আচ্ছাদিত পাহাড়ে ওঠাও বেশ রোমাঞ্চকর। সেখানে থেকে দেখা যায় দৃশ্য, শোনা যায় পাখিদের গান। যেখানে সেখানে দেখা মেলে সামুদ্রিক পাখির। সবচেয়ে বড় বিষয়– দ্বীপের বাসিন্দারা অসম্ভব আন্তরিক।
এমন সুন্দর দ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা হবে– এটাই স্বাভাবিক। ট্যুর গাইড হাল্লা জানান, তিনি এতে পর্যটকের ঢল চান না। এ দ্বীপের নির্জনতাই তাঁর বেশি প্রিয়। সীমিত সংখ্যক পর্যটকের অনুমোদন দেন তারা। সূত্র : বিবিসি।
- বিষয় :
- প্রকৃতি