গাজায় আগ্রাসন
গাজায় খাবার ও পানি সংকট তীব্র ইসরায়েলের হামলা চলছেই

ছবি: সংগৃহীত
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫ | ২৩:২০
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো ধরনের সহায়তা ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে খাদ্য সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেও সেখানে বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। বুধবার ভোর থেকে জনাকীর্ণ স্থান, আশ্রয়কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁয় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হামলায় অন্তত ৫৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।
আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের আল-ওয়েহদা স্ট্রিটে থাই ও পালমিরা রেস্তোরাঁর কাছে একটি এলাকা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। একই সময়ে ১০০ মিটার দূরে দুটি স্থানে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এর মধ্যে একটি রেস্তোরাঁয় এবং একটি বাইরে আঘাত হানে। এতে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। গাজা শহরের তুফাহ পাড়ায় আল-কারামা স্কুল লক্ষ্য করে একটি হামলায় ১৩ জন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া জাবালিয়ায় একটি বাড়িতে হামলায় আরও তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। দক্ষিণে খান ইউনিস শহরে একজন বাবা, তাঁর সন্তান এবং চাচাতো ভাইবোনসহ আটজন নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজা উপত্যকার দেইর এল-বালাহতে একটি তাঁবু আশ্রয়কেন্দ্রে হামলায় এক শিশুসহ আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। উপত্যকার পূর্বে বানি সুহেলা গ্রামে একটি বাড়িতে হামলায় এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে।
মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে একটি স্কুলে চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলি হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা আহতদের মধ্যে আরও চারজন মারা গেছেন। ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছে, সেখানে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
গাজা সিটি থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, আবাসিক ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। এতে ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেওয়ার নিরাপদ কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। খান ইউনিসের পূর্ব অংশে ফসল কাটার সময় হামলা করে এক কৃষককে হত্যা করা হয়েছে। তিন মাস আগে তিনি এই ফসল রোপণ করে পরিবারের খাদ্যের অভাব পূরণের চেষ্টা করছিলেন।
তিনি বলেন, একটা বিষয় পরিষ্কার যে, ইসরায়েল গাজায় শুধু ত্রাণ প্রবেশই বন্ধ করেনি, তারা ফসল উৎপাদনেও বাধা দিচ্ছে।
গত ২ মার্চ থেকে প্রয়োজনীয় সরবরাহের ওপর ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পুরো উপত্যকাটি জ্বালানি ও খাবারশূন্য হয়ে পড়ছে। ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় খাদ্য সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের কাছাকাছি।
গাজায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ছয় সন্তানের এক মা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন, তাদের কাছে সব ধরনের খাবার ফুরিয়ে গেছে, শুধু রুটি আছে। সংস্থাটি বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে অবরোধ তুলে নিতে হবে। এই মানবিক বিপর্যয়কে নতুন অদৃশ্য স্তরে পৌঁছানো থেকে বিরত রাখতে একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
চলমান বর্বর হামলা ও অবরোধের কারণে গাজার স্বাস্থ্য খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশির ভাগ হাসপাতালে হামলা করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। বুধবার সকালে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করা মিসর ও কাতার যৌথ বিবৃতিতে দিয়েছে। সেখানে তারা বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ ও অভূতপূর্ব মানবিক সংকটের অবসান ঘটাতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
যদিও ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে গাজায় আরও তীব্র আক্রমণ শুরু হবে। অন্যদিকে হামাস বলেছে, এমন অবরোধের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অর্থহীন।
- বিষয় :
- গাজা
- গাজায় হামলা
- গাজা উপত্যকা