ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা
যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে যাচ্ছে

মার্কিন বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় রোববার ইসরায়েলে আরও বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন জরুরি পরিষেবা বিভাগের সদস্যরা। তেল আবিবে তোলা এএফপি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫ | ০২:১৬ | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ | ০৭:০৪
অবশেষে ইরানে হামলা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতে সরাসরি নিজেকে জড়াল যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার মধ্যরাতে বোমা ফেলে দেশটির তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের ঘোষণা দেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তেহরান দ্রুত শান্তির পথে না এলে আরও হামলা চালানো হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। এ হামলার মাধ্যমে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করা হয়েছে জানিয়ে ‘চিরস্থায়ী পরিণতি’ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। এরই মধ্যে গতকাল রোববার বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। তবে ইরান মার্কিন নৌবহর কিংবা সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করবে কিনা, তা নিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মাটি থেকে ইরানে হামলা করায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় আছে তেহরান। কারণ, তাদের যে কোনো পাল্টা পদক্ষেপের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালাতে পারে, যা ইরানের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এ অবস্থায় দেশটি প্রতিক্রিয়া জানাতে কিছুটা সময় নিতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। এ সময়ে তারা তাদের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিতে চায়। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গতকালই রাশিয়ায় গেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। আজ সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা রয়েছে।
মার্কিন বাহিনী শনিবার রাতে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। স্থাপনাগুলো হলো ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান। রাতেই এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অন্যতম প্রধান স্থাপনা ফর্দো ‘আর নেই’। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ইরানে এ হামলায় অংশ নেয়।
ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তেজনার মধ্যে এ হামলায় যোগ দিল যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ সংঘাতে জড়াল।
ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান– এই তিনটি মূল পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। ফর্দোর ওপর ছয়টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য দুটি স্থাপনায় ৩০টি টমা হক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। রোববার ট্রুথ সোশ্যালে নতুন পোস্টে ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের হাত থেকে বোমা কেড়ে নিয়েছি। হামলার সমালোচনা করায় তিনি পাল্টা রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসির সমালোচনা করেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, আগ্রাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এ কথা বলেন।
শান্তি রক্ষার্থে পুনরায় হামলা না করার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো এ আহ্বান জানায়।
সিবিএস নিউজ জানায়, হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে ইরানকে জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলাগুলোই তাদের চূড়ান্ত পদক্ষেপ, তেহরানে সরকার পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
এ হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি একে ‘অকল্পনীয় আগ্রাসন’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, এই হামলার ‘চিরস্থায়ী পরিণতি’ হবে। এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আজ সকালের ঘটনাগুলো চরম উদ্বেগজনক এবং এগুলোর পরিণতি চিরস্থায়ী হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি বন্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট (মজলিস)। জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সংসদীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য এসমাঈল কাওসারি বলেন, ‘মজলিস এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা উচিত। তবে এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল থেকে।’
এসমাঈল কাওসারি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার জবাবে আমরা এ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চীনকে হরমুজ প্রণালি খোলা রাখার জন্য ইরানকে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। হরমুজ প্রণালি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিবহন রুট। বিশ্বের মোট সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ এ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত হয়। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে জ্বালানি তেলের দাম প্রথম সপ্তাহেই ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস: ট্রাম্প
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার পর টেলিভিশনে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি প্রধান পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। এখন আর কোনো বিপদ নেই, এখন শান্তির সময়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেন, ইরানের সামনে এখন দুটি পথ– শান্তি কিংবা ধ্বংস। যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট লিস্টে আরও অনেক সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো দ্রুত, নিখুঁত ও দক্ষভাবে ধ্বংস করা হবে, যদি ইরান দ্রুত শান্তির পথে না আসে।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র: আরাগচি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান নয়। যুক্তরাষ্ট্রই প্রমাণ করেছে যে, তারা কূটনীতির লোক নয়। ট্রাম্প ইরান ও মার্কিন জনগণ উভয়ের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন আরাগচি। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়ানো বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি কূটনীতির নামে প্রতারণা করেছেন।
পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে রাশিয়ায় যাচ্ছেন আরাগচি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি আজই রাশিয়া যাচ্ছেন এবং সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ইস্তাম্বুলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ইরানের বন্ধু এবং আমাদের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে।’ আরাগচি বলেন, আমরা সবসময় একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করি এবং আমাদের অবস্থান সমন্বয় করি। আগামীকাল (সোমবার) আমি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব এবং আমরা একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।
দায়িত্বজ্ঞানহীন ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন : রাশিয়া
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘যে কোনো যুক্তিই দেখানো হোক না কেন, একটি সার্বভৌম দেশের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালানোর মতো এ দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
তীব্র নিন্দা চীনের
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেছে বেইজিং। গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে অবিলম্বে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানে মার্কিন হামলা এবং আইএইএর নিরাপত্তা তত্ত্বাবধানে থাকা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণের কঠোর নিন্দা জানায় চীন। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের কার্যকলাপ জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য, নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বাইরে তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধির তথ্য নেই: আইএইএ
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফর্দো, ইস্পাহান ও নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর এখন পর্যন্ত এই স্থানগুলোর বাইরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সংস্থাটি জানিয়েছে, আরও তথ্য পাওয়া গেলে আইএইএ ইরানের পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন দেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ’: জাতিসংঘ মহাসচিব
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলাকে মধ্যপ্রাচ্যে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেছেন। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, ‘আজ ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বলপ্রয়োগে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই সংঘাত এখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যেখান থেকে ফেরার পথ খুবই কঠিন হবে। গুতেরেস সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।
ইরান নয়, যুদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ইরান নয়, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। ভ্যান্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অনেক বছর পিছিয়ে গেছে। পারমাণবিক কর্মসূচি গুরুতরভাবে ধ্বংস হয়েছে। তিনি মনে করেন, হামলা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত দৃঢ় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যবেক্ষণ করছে– ইরান যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা হামলা চালায়, নাকি পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যায়।
‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’
‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় গত রাতের হামলার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছে পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ারম্যান অব জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ জেনারেল ড্যান কেইন জানান, স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে বিটু স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো যাত্রা শুরু করে। কিছু বিমান প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে চলে যায় বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য, যা ছিল একটি কৌশল। মূল আঘাতকারী বিমানগুলো পূর্ব দিকে এগিয়ে যায় এবং ১৮ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা করে ইরান পৌঁছায়।
শনিবার সন্ধ্যার দিকে একটি মার্কিন সাবমেরিন ইরানের ইস্পাহান পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানার জন্য ২৪টির বেশি টমাহক ক্রুজ মিসাইল ছোড়ে। এটি ছিল হামলার প্রথম ধাপ। যুক্তরাষ্ট্রের সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ফর্দো পরমাণু স্থাপনায় প্রথম বি-২ বোমারু বিমান দুটি বিশাল বাঙ্কার বাস্টার বোমা ফেলে। এর পর অন্য লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। এই হামলাগুলো সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট থেকে ৭টা ৫ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয়। ইরানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী, এই সময় ছিল রোববার রাত ২টা ১০ মিনিট। হামলায় মোট ১৬টি জিবিইউ-৫৭ ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ বোমা ফেলা হয়। প্রতিটি বোমার ওজন ছিল ৩০ হাজার পাউন্ড।
দুই দফায় ২৭ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান, ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান দুই দফায় মোট ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। প্রথম দফায় ২২টি এবং দ্বিতীয় দফায় ৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। ১০টি পৃথক স্থানে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র অথবা বড় শার্পনেল আঘাত হেনেছে এবং এই স্থানগুলোয়, বিশেষ করে তেল আবিব এবং হাইফা এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই হামলাগুলোয় ইসরায়েলজুড়ে ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জরুরি পরিষেবা সূত্র।
ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা। আইআরজিসি জানিয়েছে, বিমানবন্দরের পাশাপাশি ইসরায়েলের গবেষণা কেন্দ্র, সহায়তা ঘাঁটি এবং কন্ট্রোল ও কমান্ড সেন্টারও ছিল হামলার লক্ষ্যবস্তু।
এই হামলার পর ইসরায়েলের প্রধান বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো– এল আল, ইসরায়েল এয়ারলাইন্স, আরকিয়া এবং ইসরাইর সব ফ্লাইট স্থগিত ঘোষণা করেছে।
পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও। ইরানের বুশেহর শহরের কাছে দুটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে। ইয়াজদ প্রদেশের কিছু স্থানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে ইরান। ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইয়াজদের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশে দুটি সামরিক স্থানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৯ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন। কর্মকর্তাদের মতে, নিহতদের মধ্যে ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পসের সাত সদস্য এবং দু’জন সৈন্য রয়েছেন।