অপসারণ না অভিশংসন

সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ | ১৫:২৪
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনক বিদায়ের মুখোমুখি হচ্ছেন। তাকে বিদায় করার জন্য দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ দুটি বিকল্প নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত, ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা তাকে অপসারণ করবে। দ্বিতীয়ত, সেটা না হলে দ্রুত তাকে অভিশংসন করা হবে। গতকাল সোমবার প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। আমেরিকার গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল ভবনে হামলায় উস্কানির জন্য তার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাকে আমেরিকার গণতন্ত্র ও বিশ্বের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা।
কংগ্রেসম্যানদের কাছে লেখা একটি চিঠিতে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী বলে ট্রাম্পকে অপসারণ করার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করা হবে। এ জন্য পেন্সকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হবে। প্রস্তাবটি আজ মঙ্গলবারই পাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
পেলোসি বলেছেন, মাইক পেন্স তাতে রাজি না হলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সংসদে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। ট্রাম্পের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকলেও পেন্স তাকে অপসারণ করতে আগ্রহী নন বলে জানা গেছে। ফলে অভিশংসনই হয়তো শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের ভাগ্যলিখন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অভিশংসন প্রস্তাব কত দ্রুত পাস হবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি পেলোসি। তবে শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা বলেছেন, তারা 'স্মরণীয় দ্রুততার' সঙ্গে প্রস্তাবটি নিয়ে অগ্রসর হবেন। ডেমোক্র্যাট নেতারা বলেছেন, স্থানীয় সময় বুধবারই প্রস্তাবটি পাস হবে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হবে।
সহকর্মী আইন প্রণেতাদের কাছে পেলোসি লিখেছেন, 'আমাদের সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে, কারণ এই প্রেসিডেন্ট উভয়ের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন। দিন যত যাচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের ওপর এই প্রেসিডেন্টের আঘাতের বীভৎসতাও ততই বাড়ছে। কাজেই অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণও জরুরি হয়ে পড়েছে।'
পেলোসির এই পদক্ষেপের ফলে ট্রাম্পের সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে। হয়তো দায়িত্ব পালনে অক্ষম হওয়ার অভিযোগে নিজ মন্ত্রীদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হওয়া অথবা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার অভিশংসন হওয়া। ২০১৯ সালেও তিনি আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হয়েছিলেন। অবশ্য ট্রাম্পের সামনে আরও একটি পথ খোলা আছে- সেটিও বিদায়ের পথ। তিনি চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন। তবে ট্রাম্প ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন, এ পথে পা বাড়াবেন না তিনি।
ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের প্রতিকূলে ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত গড়াচ্ছে। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিশংসন প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন ২২২ ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতার মধ্যে ২১১ জন। প্রস্তাব পাসে প্রয়োজন ২১৮ ভোট। প্রস্তাবটিতে কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্যও সমর্থন দিতে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মাইক পেন্স ট্রাম্পকে অপসারণে রাজি না হলে বুধবারই অভিশংসন প্রস্তাবটি পাস হবে বলে জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জেমস ই ক্লাইবার্ন। বাইডেনের অভিষেকের এক সপ্তাহ আগেই ট্রাম্প অভিশংসিত হচ্ছেন। এ জন্য প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের ওয়াশিংটনে উপস্থিত থাকার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বিমানে তাদের ভ্রমণে নিরাপত্তার জন্য ফেডারেল এয়ার মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে সংসদের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি পাস হলেই ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হচ্ছে না। প্রস্তাবটি দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সিনেটে পাস হলেই কেবল তিনি বিদায় নিতে বাধ্য হবেন। সেটি প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তা ছাড়া ২০ জানুয়ারির আগে সিনেট অধিবেশনও বসছে না। প্রস্তাবটি অবশ্য পরে সিনেটে গড়াবে। সেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ট্রাম্পের পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্প গত চার দিন ধরেই লোকচক্ষুর আড়ালে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করছেন। তিনি চলমান ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এ সময়ে কোনো মন্তব্যও করেননি। ট্রাম্পের এই দুরবস্থায় আরও দুঃসংবাদ হলো, তার স্ত্রী মেলানিয়াও তার ওপর ক্ষিপ্ত। বিশেষ করে বাইডেনের অভিষেকে না থাকার যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন, তাতে হতাশ বিদায়ী ফার্স্ট লেডি। সূত্র :নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন।