ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফে

বইয়ের জন্য ভালোবাসা

বইয়ের জন্য ভালোবাসা

চলতি বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফের সংকলন ‘প্রতিস্বর’

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ১৩:০৩

গত ৬ মে সন্ধ্যায় অফিস শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যাংকার নিয়মিত কাজের সময়ের শেষে বই আড্ডায় মেতেছেন। তারা ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফের সদস্য। প্রতি মাসে রিডিং ক্যাফে সদস্যরা একটি বই পড়েন এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে একত্র হন পাঠচক্রে। 

সর্বশেষ পাঠচক্রে রিডিং ক্যাফের সদস্যরা আলোচনা করেছেন ‘সাদাত হাসান মান্টোর গল্প’ নিয়ে। বইটি অনুবাদ করেছেন হাইকেল হাশমী। পাঠচক্রে অনুবাদকও উপস্থিতি ছিলেন। এর আগে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শিবব্রত বর্মনসহ অনেক লেখক ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফের পাঠচক্রে অংশ নিয়েছেন। 

রিডিং ক্যাফের উদ্যোগটি গ্রহণ করেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা ইকরাম কবীর; যিনি নিজেও একজন লেখক, কলামিস্ট। তাঁর অফিস রুমের দেয়ালে বইয়ের স্তূপ। একটি ছোটোখাটো লাইব্রেরিও বলা যেতে পারে। ব্যাংকে বই পড়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য ইকরাম কবীর বরাবরই উৎসাহ দিয়ে আসছেন সহকর্মীদের। এরই অংশ হিসেবে এ নিয়ে আড্ডা দেওয়ার চিন্তা করলেন তিনি। এটি গত বছরের কথা। এ প্রসঙ্গে ইকরাম কবীর বলেন, ‘‘ব্যাংকার এবং বই। অনেকটা অপ্রত্যাশিতই! যখন আমরা কয়েকজন পাঠচক্র করার বিষয়ে নিশ্চিত হলাম, তখন এ সম্পর্কে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেনকে জানালাম। তিনি অনেকটা অবাক হয়ে বললেন, ‘ব্যাংকে পাঠচক্র? কিন্তু ব্যাংকাররা তো বই পড়েন না।’ আমরা তখন সবাইকে গিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। অনেকেই জানালেন, তারা বই পড়েন। গত কয়েক মাসে কী কী বই পড়েছেন, সেগুলোর নামও বললেন। বুঝতে পারলাম, তারা আসলেই বই পড়েন। এটা গত বছরের জানুয়ারি মাসের কথা। ১০-১১ জনকে নিয়ে আমরা বসলাম। তাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ কেমন, কোন ধরনের বই পড়তে আগ্রহী– সে সম্পর্কে কথাবার্তা বললাম। সেখানে আমরা সবাই মিলে একটা বই নির্ধারণ করি, শংকরের ‘চৌরঙ্গী’। এক মাস ধরে বইটি পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে এ বইটি দিয়ে আমাদের প্রথম আলোচনা শুরু হয়।’’ 

এর আগে যেসব বই রিডিং ক্যাফেতে আলোচিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে– সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সেরা প্রবন্ধ’, শিবব্রত বর্মনের ‘বানিয়ালুলু’, আহমদ ছফার ‘অলাতচক্র’, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ফারুক মঈনুদ্দীনের ‘সেরা দশ গল্প’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’, রাহুল সাংকৃত্যায়নের ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’, বিশ্বজিৎ চৌধুরীর ‘নার্গিস’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’-এর মতো গ্রন্থ।

রিডিং ক্যাফে ব্যাংকারদের মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশনস অ্যান্ড সিএসআর) শফিক আর ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে আমরা অনেক চাপের মধ্যে কাজ করি। পাঠচক্র থেকে ফিরলে চাপমুক্ত লাগে। সেই সঙ্গে আমরা যারা লিখতেও চাই, রিডিং ক্যাফে তাদের আত্মবিশ্বাসের জোগান দিচ্ছে।’

ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফের উদ্যোগে ব্যাংকের ৫৭ জন সহকর্মীর লেখা ৬৭টি ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিকথা ও রম্যরচনার সংকলন ‘প্রতিস্বর’ প্রকাশিত হয় এবারের বইমেলায়। এ সম্পর্কে ইকরাম কবীর বলেন, ‘রিডিং ক্যাফের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, আমাদের মধ্যে অনেক লেখকও আছেন। তাদের অনেকের লেখা হয়তো প্রকাশিত হয়নি কোথাও; কিন্তু তারা লেখেন। যেহেতু অফিস আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে এ রিডিং ক্যাফে নিয়ে এগোনোর, আমরা আমাদের প্রায় ১০ হাজার সহকর্মীর কাছে লেখা আহ্বান করলাম। সেসব লেখা আমরা সম্পাদনা বোর্ড গঠন করে বাছাই ও সম্পাদনা করলাম। বইটি প্রকাশিত হলো। এতে লেখকরা উজ্জীবিত হলেন। তাদের কাছ থেকে সামনে আরও ভালো লেখা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’

ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফে এখন ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম– তিনটি অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৩ জন, খুলনায় ১৪ জন এবং চট্টগ্রামে ১০-১২ জন ব্যাংকার রিডিং ক্যাফের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

আরও পড়ুন

×