ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের একমাত্র স্কাইডাইভার আশিক চৌধুরী

পতাকা হাতে বিশ্ব রেকর্ডের পথে

পতাকা হাতে বিশ্ব রেকর্ডের পথে

স্কাইডাইভার আশিক চৌধুরী

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪ | ০১:০৬

স্কাইডাইভার আশিক চৌধুরী দেশের লাল-সবুজ পতাকা হাতে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চলেছেন। ৪১ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে লাফ দেবেন ৪০ বছর বয়সী ব্যাংকার। দেশের পতাকা ছাড়াও তাঁর সঙ্গে থাকবে এক সিলিন্ডার অক্সিজেন। কারণ যে উচ্চতা থেকে তিনি লাফ দেবেন, সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা খুবই কম।
আশিক জানান, তাঁর এ উদ্যোগের নাম ‘দ্য হাইয়েস্ট এভার স্কাইডাইভ উইথ আ ফ্ল্যাগ’। আবহাওয়াসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তাই তারিখ আগে-পড়ে হতে পারে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী, ২৫ মে মেমফিসের একটি এয়ারফিল্ড থেকে এ বিশ্ব রেকর্ড গড়ার চেষ্টা চালাবেন আশিক। সফল হলে ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল এয়ার স্পোর্টস এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দুটি রেকর্ড ভাঙব। রেকর্ড দুটি হলো– ‘দ্য হাইয়েস্ট এভার স্কাইডাইভ উইথ আ ফ্ল্যাগ’, অর্থাৎ পতাকাসহ সবচেয়ে উঁচু থেকে লাফ এবং ‘গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ফ্রি ফল উইথ দ্য ফ্ল্যাগ’, অর্থাৎ ৪১ হাজার ফুট বা তারও বেশি উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়ার পর তিন হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত প্যারাশুট ছাড়াই নামবেন। এত উঁচু থেকে প্যারাশুট ছাড়া লাফিয়ে পড়াও একটি বিশ্ব রেকরর্ড।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডাইভ করার কারণ হলো, বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সাধারণত ৩৫ হাজার ফুটের নিচ দিয়ে চলাচল করে। এর ওপরে উঠতে দরকার হয় বিশেষায়িত বিমান। যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসের এয়ারফিল্ডে এ ধরনের বিশেষ বিমান পাওয়া যায়। সেখানকার আবহাওয়াও এই রেকর্ড গড়ার জন্য অনুকূল। আশিক জানান, সম্ভব হলে ৪১ হাজারেরও বেশি ফুট উচ্চতায় নিয়ে যাবে বিমান। এই এয়ারফিল্ডে দু’দিন অনুশীলন করার কথাও ২১ মে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশিকের এ প্রচেষ্টায় স্পন্সর হিসেবে পাশে থাকছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি)। সংবাদ সম্মেলনে আশিক চৌধুরীর হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন ইউসিবির ব্র্যান্ড মার্কেটিং ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান আবুল কালাম আজাদ।
দাদার বাড়ি চাঁদপুরে হলেও, বাবার চাকরির সুবাদে আশিকের বেড়ে ওঠা যশোরে। পড়েছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। ২০১১ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যান যুক্তরাজ্যে। ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আশিক চৌধুরী প্রথমবারের মতো বিমান থেকে লাফিয়ে পড়েন। তখন অবশ্য তাঁর সঙ্গে ছিলেন দু’জন প্রশিক্ষিত স্কাইডাইভার। এরই মধ্যে লন্ডন বিজনেস স্কুল থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের লন্ডন অফিসে যোগ দিয়েছেন আশিক। ২০১৪ সালে ভর্তি হন একটি প্রাইভেট পাইলট প্রশিক্ষণ স্কুলে। এক বছর ধরে চলে প্রশিক্ষণ। এরপর একদিন ককপিটে বসেন আশিক। পাইলট হলেও স্কাইডাইভিংয়ে যেভাবে গোটা বিশ্বকে নিজের ভেতর ধারণ করা যায়, যেভাবে চ্যালেঞ্জ নেওয়া যায়; তা বিমানের সুরক্ষিত অবস্থানে থেকে অনুভব করা যায় না। এমনটাই মনে করেন আশিক। তবে আকাশের সঙ্গে আশিকের সম্পর্কটা নতুন কিছু নয়। এ সম্পর্ক তাঁর শৈশবের। 

আশিকের বাবা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর হারুন চৌধুরী। বাবার কাছ থেকে গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছেন। শৈশব থেকেই তিনি মহাশূন্যে পাখির মতো ওড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
আশিক বর্তমানে বহুজাতিক ব্যাংক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক। গতবছর সিঙ্গাপুরের অফিস শুরু করার পর জানতে পারেন, থাইল্যান্ডে স্কাইডাইভিংয়ের দারুণ সুযোগ আছে। লিখিত পরীক্ষাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে অনুশীলন শুরু হয়। প্রশিক্ষণে চার সপ্তাহে ২৫ বার লাফ দেন আশিক। আরও কয়েকবার লাফ দেওয়ার পর আশিকের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্কাইডাইভারের লাইসেন্স। এই লাইসেন্স দেখিয়ে বিশ্বের যে কোনো দেশে স্কাইডাইভিং করতে পারবেন আশিক।
দুই সন্তানের জনক আশিক জানান, পরিবারের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মা-বাবার সমর্থন তো আছেই। আমার স্ত্রী আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। সে আগে থেকেই জানে, আকাশ থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামার সময় এক ধরনের স্বাধীনতা ও রোমাঞ্চকর অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই রোমাঞ্চকর অনুভূতি আমাকে সবসময় নিজের সীমাবদ্ধতাকে জয় করে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার আমি ৪১ হাজার ফুট থেকে লাফ দেব। আমার হাতে থাকবে দেশের পতাকা। আমি আমার কাজটি যথযাথভাবে করতে পারলে  বাংলাদেশকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে নিয়ে যেতে পারব। ভূপৃষ্ঠ ছাড়িয়ে ১০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী জায়গাকে বলা হয় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করব। সেদিন ৭১ জন স্কাইডাইভার জাতীয় পতাকা হাতে একসঙ্গে লাফ দেব। সেটি বাংলাদেশেই করব।’ v

আরও পড়ুন

×