ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অন্ধ মেকানিক

অন্ধ মেকানিক

মোটরসাইকেল মেকানিক হোসেন আলী

রুবেল নাহিদ

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৮ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:৫৬

শব্দ শুনেই গাড়ির সমস্যা বুঝে মেরামত করেন অন্ধ মোটরসাইকেল মেকানিক হোসেন আলী। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌর শহরের কেএম লতিফ সুপারমার্কেটে ছোট্ট একটি ভাড়া দোকানে মেকানিকের কাজ করেন তিনি।

হোসেন আলীর বয়স পঞ্চাশের মতো। তবে জন্ম থেকেই অন্ধ ছিলেন না তিনি। প্রায় ১০ বছর আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর চোখে সমস্যা দেখা দেয়। তারপর চিকিৎসার অভাবে দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
তবে দমে যাননি আলী হোসেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি যে কোনো প্রতিবন্ধকতাকেই হার মানাতে পারে; এর বড় উদাহরণ হোসেন আলী। ইচ্ছাশক্তির কারণে তাঁর পিছু হটতে হয়নি। এমনকি কারও অনুদান বা সাহায্যের প্রয়োজনও হয়নি। মোটরসাইকেলের শব্দ শুনেই এর সমস্যা ধরতে পারেন তিনি। সে অনুযায়ী কাজ করেন। তবে আগের মতো রোজগার নেই; সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। কোনোদিন হয়তো ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় হয়; আবার কোনোদিন খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়।

ভাইয়ের দোকানে মাত্র ৯ বছর বয়সে মোটরসাইকেল ও জেনারেটরের মেরামতের কাজে হাতেখড়ি হয় হোসেন আলীর। এরপর মেকানিকের কাজ আস্তে আস্তে রপ্ত করেন। শব্দ শুনেই সমস্যা নির্ণয় করেন এবং সেগুলো মেরামতের কাজ করেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মী শিবু মজুমদার জানান, ‘প্রতিবন্ধকতা নিয়েও তিনি কেএম লতিফ সুপারমার্কেটে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এক মোটরসাইকেল মেকানিক হিসেবে পরিচিত মুখ। ক্লাচ প্লেট, ক্লাচ ডিস্ক, হেডলাইট, ইঞ্জিনের পিস্টনসহ মোটরসাইকেলের যাবতীয় কাজ দৃষ্টি হারানো সত্ত্বেও নির্ভুলভাবে মেরামত করেন তিনি। মানুষ বিশ্বাস করেই তাঁর কাছে প্রিয় মোটরসাইকেলটি সারাতে নিয়ে আসে।’

হোসেন আলীর কাছ থেকে মেকানিকের কাজ শেখা পলাশ জানান, চোখে না দেখলেও অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজ করেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে কাজ শিখে আজ তিনি একটি দোকান দিয়েছেন। তিনি ভালো কাজ করে দেখে সবাই তাঁর কাছে আসেন।

মোটরসাইকেল মেরামত করতে আসা জালাল মৃধা বলেন, ‘আমার মোটরসাইকেলের বয়স ৩৫ বছর। অনেক আগে থেকে তাঁর কাছে মেরামত করাচ্ছি। চোখে না দেখলেও নিখুঁতভাবে মেরামতের কাজ করতে পারেন। সে জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছি মেরামতের জন্য।’ 

হোসেন আলীর ছেলে মো. তুহিন বলেন, ‘আমার বাবা ২০১৫ সালের শেষ দিকে স্ট্রোক করেন। এরপর থেকে তিনি চোখে দেখেন না। আমার বাবা আমারও ওস্তাদ। কোনো কাজেই তিনি দমে থাকেন না। যে কোনো কাজ তিনি শব্দ শুনে করতে পারেন। আমাদেরও বলেন– এখানে সমস্যা, আমরা সেভাবে কাজ করি।’

কেএম লতিফ সুপারমার্কেটের ব্যবসায়ী মো. রিপন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল পার্টসের ব্যবসা করছি। মোটরসাইকেল মেকানিক হোসেন আলীর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। হোসেন আলী ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়ায় আসেন। এখানে যতজন মেকানিক আছেন সবাই তাঁর শিষ্য। তিনি যথেষ্ট পারদর্শী একজন মোটর মেকানিক ছিলেন। অসুস্থতার পর চোখে না দেখলেও শব্দ শুনে বলে দিতে পারেন মোটরসাইকেলের কী সমস্যা।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শফিকুল আলম জানান, হোসেন আলীর দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার কথা শুনে সমাজসেবা অফিস তাঁকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করে দিয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো সহযোগিতা এ মুহূর্তে নেই। শুনেছেন তিনি একজন ভালো মোটরসাইকেল মেকানিক। অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকলে তারা অবশ্যই তাঁকে দেবে।

আরও পড়ুন

×