ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

ডায়াবেটিক রোগীরা কি মধু, গুড়, শীতের পিঠা খেতে পারবেন?

ডায়াবেটিক রোগীরা কি মধু, গুড়, শীতের পিঠা খেতে পারবেন?

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১৪:২৩ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১৪:২৪

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ওজন ও নানা কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস রোগী দেখা যায়। ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৪ কোটি মানুষ জানেন না, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই। কেননা চিকিৎসকরা মনে করেন, এ রোগ কখনও পুরোপুরি ভালো হয় না। এ জন্য আক্রান্ত রোগীকে খুব মেপে মেপে খাবার খেতে হয়। বেশি চিনি, মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। শর্করা জাতীয় খাবার খুব কম পরিমাণে খেতে হয়। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা সবসময় ভয়ে থাকেন তারা কোন খাবার খাবেন আর কোন খাবার খাবেন না। অনেকেই ভাবেন ডায়াবেটিসের রোগীরা মধু, গুড়, শীতের পিঠা খেতে পারবেন কিনা। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিডিএন পল্লবী ডায়াবেটিস সেন্টারের কনসালট্যান্ট ডায়েটিশিয়ান ইসরাত জাহান ডরিন। 

ডায়াবেটিসের রোগীরা গুড় খেতে পারবেন কিনা? 
ইসরাত জাহান ডরিন জানান, সাধারণত খেজুর কিংবা আখের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়, যা পটাশিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুড় খাওয়ার অভ্যাস মোটেও নিরাপদ নয়। গবেষণায় দেখা যায়, ১০০ গ্রাম গুড়ে প্রায় ৩৮৩ ক্যালরি থাকে এবং এটি ৬৫-৮৫ শতাংশ সুক্রোজ সমৃদ্ধ। এ ছাড়া এতে ১০-১৫ শতাংশ গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই মিষ্টিজাতীয় উপাদানগুলো দ্রুত রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়ায়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে। গুড়ের উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) রক্তের গ্লুকোজকে তাৎক্ষণিকভাবে বাড়িয়ে দেয়, যা কিডনি, হার্ট ও অন্যান্য অঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুড়ের মতো উচ্চ জিআইযুক্ত খাবার বর্জন করাই ভালো। 

ডায়াবেটিসের রোগীরা মধু খেতে পারবেন? 
মধুতে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ধরনের শর্করা থাকে। যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সুক্রোজ ও ম্যালটোজ। প্রতি গ্রাম মধুতে প্রায় ১.৮৮ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্য। তবে সবার জন্য মধু উপকারী নয়। যারা বাজারজাত বা প্রক্রিয়াজাত মধু খান, তারা অনেক সময় অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ করেন, যা ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষতি করতে পারে। তবে খাঁটি প্রাকৃতিক মধু স্বল্প পরিমাণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হতে পারে বলে জানান পুষ্টিবিদ ইসরাত। এ পুষ্টিবিদের মতে, খাঁটি মধু দিনে একবার এক চামচ করে খাওয়া যেতে পারে। 

ডায়াবেটিসের রোগীরা শীতের পিঠা খেতে পারবেন কিনা? 
শীতের আগমন মানেই বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলির উৎসব। চিনি, গুড়, চালের গুঁড়া ও ময়দার তৈরি এই পিঠাগুলো মিষ্টিজাতীয় খাবার হিসেবে পরিচিত। পুষ্টিবিদ ইসরাত মনে করেন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবার সাধারণত নিষিদ্ধ হলেও পিঠাপুলিকে একেবারেই বাদ দেওয়া যায় না। তবে পিঠার ধরন, এর উপাদান এবং পরিমাণ বিবেচনা করে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় কিছু কিছু পিঠা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা সকালে বা রাতে রুটির বিকল্প হিসেবে চিতই পিঠা, চাপটি, কম মিষ্টি ভাপা পিঠা খেতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশি পরিমাণে পিঠা খেলে দ্রুত ওজন বেড়ে যাবে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই খাবার গ্রহণের সময় খাবারের তিনটি প্রধান উপাদান– শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাট সঠিক অনুপাতে রাখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ পিঠার সঙ্গে সবজি ও ডিম, মাছ বা মাংস খেলে খাবার সুষম হয়। তবে বেশি তেলে ভাজা বা অতিরিক্ত মিষ্টি দেওয়া পিঠা এড়িয়ে চলাই উত্তম।

আরও পড়ুন

×