ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার

আগামীতে এলপিজি হবে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প জ্বালানি

আগামীতে এলপিজি হবে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প জ্বালানি

-

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩ | ০২:১২ | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ | ০৭:০২

সমকাল : বাংলাদেশে এলপিজির মার্কেট বৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে বলুন।

আহমেদ আর্যুমান পোলাত : শুধু এশিয়াতেই নয়, প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনায় বাংলাদেশের এলপিজি মার্কেট সারাবিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্ব বহন করে। আমাদের ধারণা, বাংলাদেশের এলপিজি মার্কেট আগামী দশকে দ্বিগুণ হবে। আমরা আরও বিশ্বাস করি, আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের শিল্পায়নে এলপিজির গুরুত্ব অনেক বাড়বে। এ ছাড়া সরকারের ঘোষণা অনুসারে প্রাকৃতিক গ্যাস শুধু বিশেষ কিছু খাতে ব্যবহার হবে। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আগামীর বাংলাদেশের জন্য এলপিজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প জ্বালানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এলপিজি সহজেই পরিবহন ও মজুত করা যায়। এটি প্রায় সব ধরনের কাজে ব্যবহার করা যায়। এলপিজি পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জ্বালানি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য জ্বালানির অত্যন্ত টেকসই সমাধান প্রয়োজন। এ কারণে এলপিজি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প জ্বালানি হবে।

সমকাল : দেশীয় বাজারে যতটা প্রবৃদ্ধি অনুমান করা হয়েছিল ততটা কি হয়েছে?

আহমেদ আর্যুমান পোলাত : হ্যাঁ হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং পরিবর্তনশীল বিনিময় হারের কারণে প্রতিনিয়ত দামও পরিবর্তিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক অবস্থা শুধু বাংলাদেশে নয়, সব জায়গায় খরচের পরিমাণকে প্রভাবিত করে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। সুতরাং বর্তমান সময়ের তুলনায় এর ব্যবহারের উপযোগিতা বাড়ানো গেলে ব্যবসা আরও বাড়বে। সরকার ও মার্কেটের বড় বড় কোম্পানিকে এলপিজি ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের বাজারে বাল্ক গ্যাস এবং অটো গ্যাসের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। বাল্ক সিস্টেমগুলো এসএমই এবং শিল্পকারখানার জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প জ্বালানি। আর সিএনজির তুলনায় বাংলাদেশে এলপিজি অটো গ্যাস বেশি পাওয়া যায়। কারণ প্রাথমিক বিনিয়োগ কম, রেঞ্জ বেশি এবং দ্রুত রিফিল করা যায়।

সিএনজি স্টেশনের সামনে লম্বা লাইন দেখলে আমার খুব কষ্ট লাগে। এলপিজির ব্যবহার বাড়ানো গেলে এত বড় লম্বা লাইন থাকত না, মানুষের কষ্টও হতো না।

সুতরাং আমি মনে করি, অপার সম্ভাবনায় এই সেক্টরটি পেশাদারিত্বের সঙ্গে ও সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।

এলপিজি ব্যবহারের পরিমাণ বাড়লে বায়ুদূষণ কমবে এবং মানুষের জীবনযাত্রা এখনকার চেয়ে অনেক সহজ ও উন্নত হবে।

সমকাল : এলপিজি মার্কেট সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

আহমেদ আর্যুমান পোলাত : মার্কেটে সিলিন্ডারের দাম খুবই পরিবর্তনশীল। এ কারণে ডিপোজিট খরচও অনেক বেশি। দুর্ভাগ্যবশত এই খরচের ২/৩ অংশ এলপিজি কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি দিতে হয়। এটি আমাদের কাঁধে একটি বড় বোঝা। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো সিলিন্ডারগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা ব্যবস্থা। রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে না করার কারণে সিলিন্ডারগুলো সহজেই পুরোনো হচ্ছে এবং লাইফটাইম কমে যাচ্ছে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বেশি।
এ ছাড়াও নন-এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটরশিপ এবং খুচরা বিক্রেতারা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই কাঠামোর কারণেই এলপিজি মার্কেট ভালোভাবে গড়ে উঠছে না এবং কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে সাহস নাও পেতে পারে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, এলপিজি ব্যবহারের সংস্কৃতি এখনও আমাদের দেশের বাজারে সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তাই সরকারকে এলপিজি কোম্পানি, ডিস্ট্রিবিউটর এবং খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে এ মার্কেট প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে।

সমকাল : সরকার কি এই খাতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে? আপনি এখন কী ধরনের নীতি সহায়তা আশা করছেন?

আহমেদ আর্যুমান পোলাত : অবশ্যই। সরকার এ খাতকে সাপোর্ট করার চেষ্টা করে। তবে তারা এলপিজি ব্যবসার উন্নয়নে কিছু নীতিমালা তৈরি করলে সবার জন্য ভালো হতো। আমদানি কর খুব বেশি। এ কারণেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির দাম অনেক বেশি। এর জন্য কিছু প্রণোদনা বা করছাড় সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। কাস্টমসে পণ্য ছাড় করাতেও অনেক সময় প্রয়োজন হয়। এটিও একটা বড় সমস্যা। এসএমই এবং শিল্পকারখানার মালিকদের বাল্ক গ্যাস ব্যবহারে উৎসাহিত করতে এবং ডিজেল বা এইচএফওর ব্যবহার কমাতে সরকারি ভর্তুকি দরকার। এ ছাড়া  বায়ুদূষণ-সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে এবং টেক্সটাইল, গ্লাস, ফার্মাসিউটিক্যালস, খাদ্য, কৃষি ইত্যাদির মতো যে কোনো খাতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশের জন্য এলপিজি অনিবার্য।

আমরা যদি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করি, অটো গ্যাসের ব্যবহারকেও উৎসাহিত করতে হবে এবং সিএনজি স্টেশনের সামনে লম্বা লাইন কমানোর জন্য এলপিজি প্রতিস্থাপন করে অটোমোবাইলস, থ্রি-হুইলার এবং স্টেশন মালিকদের বিনিয়োগে সমর্থন করতে হবে।

সমকাল : অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে এলপিজির খুচরা মূল্য প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। আপনি কী মনে করেন?

আহমেদ আর্যুমান পোলাত : আমি তা মনে করি না। এলপিজির দাম (সিপি) সৌদি আরামকোর মাসিক মূল্যের ওপরে নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ডলারের বিনিময় হারের প্রভাব দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) খুব সুশৃঙ্খলভাবে দাম নির্ধারণের বিষয়টি অনুসরণ করে এবং নজরদারির মাধ্যমে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে।

সমকাল : কেউ কেউ মনে করেন, এখানে কোম্পানির সংখ্যা বাজারের আকারের তুলনায় অনেক বেশি। আপনি কী মনে করেন?

আহমেদ আর্যুমান পোলাত : এটি সম্পূর্ণরূপে একটি মুক্তবাজার। তাই আমি বড় বড় কোম্পানির সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত নই এবং আমি তা মনে করি না। কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন, বিক্রয় ও বিক্রয়োত্তর সেবার পরিপ্রেক্ষিতে খুব ভালোভাবে পার্থক্য করা যায় এবং বোঝা যায় কারা ভালো করবে। এলপিজি ব্যবসা করতে এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। কারণ এ ব্যবসা অন্য ব্যবসা থেকে খুব আলাদা। এটি শুধু পণ্য বিক্রি করার ব্যবসা নয়; এটি সম্পূর্ণরূপে একটি সাপ্লাই ও ডিস্ট্রিবিউশননির্ভর ব্যবসা।

ভবিষ্যতে একটি এলপিজি কোম্পানির অন্য আরেকটিকে অধিগ্রহণ বা কোম্পানিগুলোর একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন

×