ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

কোটাবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে জি এম কাদেরের অবস্থান

কোটাবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে জি এম কাদেরের অবস্থান

জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪ | ২১:৪৭

জাতীয় সংসদের অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। বৃহৎ পরিসরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় (বাজেট) অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের চাকরির জন্য বিশেষ বড় অংকের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গঠন এই মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে। আগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল, ৪৪ শতাংশ হতো মেধার ভিত্তিতে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দাবি ছিল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের। তিনি বলেন, মেধাভিত্তিক সমাজ হচ্ছে না। মেধাকে দাম দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা দাম দেব। কিন্তু তাদের বংশ পরম্পরায় তাদের নাতি নাতনিসহ তাদের সবাইকে দিতে হবে বিষয়টি সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে দ্বিমত আছে। তারা এর সঙ্গে একমত হতে পারছে না।’

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিল করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি এটা ছিল না। তাঁদের দাবি ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে বাকী কোটাগুলো থাকবে। কিন্তু হঠাৎ করে ২০২১ সালে করা মামলার রায়ে বলা হয়েছে, কোটা আগের মতো থাকবে। এর ফলে ছাত্রদের মধ্যে আবার ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই সমস্যা সামনে আসছে।

জিএম কাদের বলেন, সংবিধানে সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জন্মস্থানের কারণে কাউকে প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য হবেন না। সরকারকে অথরিটি দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য, অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন সেজন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। অনগ্রসর যারা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীকে দেওয়া যেতে পারে, সংখ্যালঘুদেরকে দেওয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্ম যারা থাকবেন তারা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজি না।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানকে যদি মানতে হয় তাহলে মানতে হবে, অনগ্রসর যারা নন, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর বা এরকম পিছিয়ে পড়া অবস্থানে নেই। কাজেই তার বিষয়টি ওইভাবে দেখাটা সংবিধান সম্মত নয়।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে প্রথম দরকার মেধা। সামনের বিশ্ব আমাদের আবেগ বা চেতনার ওপর থাকবে না। আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে। সেখানে মেধাকে প্রাধান্য না দিলে প্রতিযোগিতা করা হবে কিসের ভিত্তিতে-সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।

সার্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আগে যেটা সার্বজনীন পেনশন স্কিম দেওয়া হয়েছিল, সেটাতে খুব একটা সাড়া আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বেশিরভাগ সরকারের সমর্থক, সরকারের কাছের লোক। পেনশন স্কিম তারা মানতে চাইছেন না। অনেকে মনে করছেন সুযোগ সুবিধা আগের চেয়ে কম। অনেকে এটাও মনে করছেন না, তারপরও মানছেন না। মানুষের আস্থাহীনতার কারণে এসব হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‌সরকার যেটা কমিট করছে আল্টিমেটলি সেটা দিতে পারবে কি না, দিবে কি না, মানুষ পাবে কি না। এটা বড় ধরনের একটা আস্থাহীনতা। এটা আমাদের সরকারের কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

আরও পড়ুন

×