জয়-লেখকের অপকর্মের ফিরিস্তি
ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতারা দিতে পারেননি অভিযোগপত্র

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২৩:১১
ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সংগঠনটির শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সই করা অভিযোগপত্র আওয়ামী লীগের দপ্তর সেল নেয়নি। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে অভিযোগপত্র জমা দিতে গেলে দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ূয়া তা নেননি বলে সমকালকে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। তাঁরা বলেছেন, অভিযোগপত্র জমা না নেওয়া পর্যন্ত তা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হবে।
গত শুক্রবার জয়-লেখকের বিরুদ্ধে এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রীয় নেতার সই করা অভিযোগপত্র শনিবার দপ্তর সেলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হবে- এ-বিষয়ক একটি প্রতিবেদন সমকালে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়। পরে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগপত্র জমা দিতে গেলে তাঁরা জানতে পারেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ূয়া তাঁর কক্ষ থেকে বের হয়ে ওপরের তলায় গেছেন। কার্যালয়ের কর্মচারীকে দিয়ে খবর পাঠানো হলে তিনি নিচে নামবেন বলে জানান। এ সময় তিনি ছাত্রনেতাদের বসতে বলেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর নেতারা জানতে পারেন, দপ্তর সম্পাদক বের হয়ে গেছেন।
অভিযোগ দিতে যাওয়া ছাত্রনেতারা বলেন, 'আমরা আগামীকাল (রোববার) আবারও অভিযোগপত্র জমা দিতে যাব। এ ছাড়া ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আমরা বসব এবং দপ্তর সম্পাদকের কাছেও আবার যাব। রোববার সম্ভবত আমরা বিকেলের দিকে যাব।'
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ূয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কামাল খান সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত সম্মেলন দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা আমাদের জানান, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নাকি তাঁদের কাছে আসেনি। এজন্য আমরা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণাসহ আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে আমাদের কিছু লিখিত দাবি পেশ করতে চেয়েছিলাম। এ ছাড়া জয়-লেখকের নেতৃত্বে সংগঠনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের যে ঘটনা ঘটেছে এবং যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, সেগুলোর সারাংশ এই পত্রে রয়েছে।
তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি অনাস্থা জানাচ্ছেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এক নেতা বলেন, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।
শতাধিক নেতা অভিযোগপত্রে সই করার কথা বলা হলেও অভিযোগ দিতে মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতা কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা অভিযোগপত্র দিতে এসেছি। তবে আমাদের অভিযোগপত্রে কমিটির এক-তৃতীয়াংশ নেতা সই করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র ঘিরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সংগঠনের ওই সময়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দুই শীর্ষ নেতাকে 'ভারমুক্ত' করে পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জয়-লেখক ভারমুক্ত হওয়ার পর নানা অপকর্মে জড়ান বলে অভিযোগ আনেন কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। তাঁরা বলছেন, জয়-লেখক ভারমুক্ত হলেও ঝামেলামুক্ত হয়নি ছাত্রলীগ। বরং এই দুই নেতার কর্মকাণ্ডে দেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীনতম এই ছাত্র সংগঠনটিই নতুন করে বিতর্কিত হয়ে পড়ছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে জয়-লেখকের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা বরাবর অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিক্ষুব্ধ নেতারা।
- বিষয় :
- ছাত্রলীগ
- আল-নাহিয়ান খান জয়
- লেখক ভট্টাচার্য