রামগতিতে খামার আছে ৬০০, পশু চিকিৎসক নেই একজনও

ফাইল ছবি
মিসু সাহা নিক্কন, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪২ | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৪৪
১১ জন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও মাত্র চারজন দিয়ে চলছে রামগতি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল। চার কর্মচারীর মধ্যে পশু চিকিৎসক নেই একজনও। জনবল সংকটে দুগ্ধ উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত উপকূলীয় জনপদ রামগতির এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়রা গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে গবাদি পশুর চিকিৎসা দিচ্ছেন।
জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ খামারি ও গবাদি পশুর মালিক সেবা নিতে এ হাসপাতালের দ্বারস্থ হন। কিন্তু এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। ফলে হাসপাতালটি ধীরে ধীরে জনশূন্য হয়ে পড়ছে।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রামগতি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘জনবলের অভাবে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
জানা গেছে, একটি পৌরসভাসহ রামগতি উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ১০২টি ছোট-বড় দুগ্ধ ও গরুর খামার, গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার ৭৯টি, ছোট-বড় ১৩৯টি ছাগলের খামার, ৫৯টি ভেড়ার খামারসহ মোট ৩৭৯টি গবাদি পশুর খামার রয়েছে। এ ছাড়া ২২৪টি পোল্ট্রিসহ মোট ৬০৩টি খামার গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া এখানকার অধিকাংশ বাড়িতেই গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করা হয়। এর মধ্যে গরুর সংখ্যায় ৬৭ হাজার ২৫১টি, মহিষ ৮ হাজার ২৯০টি, ছাগল ১৩ হাজার ৩৩৮টি, ভেড়া ১০ হাজার ২২৮টি, দেশি মুরগি ৫ লাখ ৪৩ হাজার, হাঁস ২ লাখ ৮ হাজার ৪৫০টি, কবুতর ১২ হাজার।
হাসপাতালটিতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রাণিস্বাস্থ্য) রফিক উদ্দিন, ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট সুজন চন্দ্র ধর, এফএএআই সমর দাস ও অফিস সহায়ক অহিদ মিয়া।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটিতে একজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, একজন ভেটেরিনারি সার্জন, চারজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, একজন উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রাণিস্বাস্থ্য), একজন ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (এফএএআই বা কৃত্রিম প্রজননকারী), একজন অফিস সহকারী, একজন ড্রেসার ও একজন অফিস সহায়কসহ ১১ জন জনবল থাকার কথা।
চরগাজী ইউনিয়নের খামারি মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, একমাত্র সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় খামারের গবাদি পশু অসুস্থ হলে এখন সবাই গ্রাম্য চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হয়।
চর আবদুল্যাহ ইউনিয়নের সেবাগ্রহীতা নূরনবী বলেন, ‘খামারে কয়েকটি ভেড়া অসুস্থ হওয়ায় পর দুদিন পশু হাসপাতালে যাই। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক না থাকায় সেবা পাইনি। আমার মতো অনেকের গবাদি পশু প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে।’
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রঞ্জন মিত্র বলেন, ‘উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে জনবল সংকটে অচলাবস্থা নিরসনে একাধিকবার মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘উপকূলীয় প্রত্যন্ত এলাকা হিসেবে এখানে চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। দ্রুত যাতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চেষ্টা করব।’
- বিষয় :
- খামারি