ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বোয়ালখালীতে অনাবাদি দুই হাজার একর ফসলি জমি

বোয়ালখালীতে অনাবাদি দুই হাজার একর ফসলি জমি

কধুরখীলে পরিত্যক্ত বিস্তীর্ণ ফসলি জমি সমকাল

 বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩২

বোয়ালখালীতে বছরের পর বছর অনাবাদি প্রায় দুই হাজার একর ফসলি জমি। জলাবদ্ধতা, পানি চলাচলের পথ না রেখে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, জমির উর্বরতা হ্রাস ও খাল দখলের কারণে পানি সেচের অভাবে এসব জমি পরিত্যক্ত পড়ে আছে।  
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৯২০ একর। এর মধ্যে এক ফসলি জমি ৩ হাজার ৫৩২ দশমিক ৪০ একর, দুই ফসলি ১২ হাজার ১৫২ দশমিক ৪০ একর ও তিন ফসলি ১ হাজার ১৩৬ দশমিক ২০ একর। সম্প্রতি কৃষি অফিসের জরিপে দেখা গেছে, নানা কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৫২ একর জমি। অনাবাদি এসব জমিতে আগে আমন মৌসুমে ২-৩ হাজার হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো। এ ছাড়া রবিশস্য বা সবজি উৎপাদন হতো অন্তত ৫ হাজার মেট্রিক টন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘বিস্তীর্ণ ফসিল জমি অনাবাদি থাকার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো জলাবদ্ধতা। খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে চাষের আওতায় আসবে এসব অনাবাদি জমি। অন্য কারণটি হলো কৃষকদের অনীহা। কৃষকরা  চাষ  করতে  না চাইলে তো জমি অনাবাদি থাকবেই। স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে বোয়ালখালী খাল ও ছন্দরিয়া খালের মুখে স্লুইসগেট স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।’ 
পৌরসভাসহ উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী, কধুরখীল, শাকপুরা  সারোয়াতলি, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিত্যক্ত জমি কচুরিপানা আর আগাছায় ভরপুর। আমুচিয়া ইউনিয়নের বগাচড়া বিলের কৃষক ফজলুল হক বলেন, ‘এই বিলে ৩০ বছর ধরে ধরে চাষাবাদ করছি। এবারও ১৬ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। সম্প্রতি এক প্রভাবশালী ব্যক্তি পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বোরো মৌসুমে শত একর জমি অনাবাদি থাকতে পারে।’
পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের চরখিদিরপুর এলাকার চরের বিল, বড়ুয়াপাড়া বিলের কৃষক মফিজুর রহমান, কল্যাণ বড়ুয়া, রাজু বড়ুয়া, ইদু মিয়া ও মো. রফিক বলেন, ‘শত বছর ধরে চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল এলাকার বেশির ভাগ মানুষ। এসব বিলে চাষাবাদ হতো কাকনিয়া খাল ও জেঠি খালের পানি দিয়ে। কাকনিয়া খালটি একটি শিল্পকারখানার পেটে  ঢুকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জেঠি খালটিও আধমরা। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে দুই দশক ধরে চাষাবাদ বন্ধ।’ তারা জানান, পানি নিষ্কাশনে কয়েকবছর আগে পৌরসভার উদ্যোগে কাকনিয়া খালে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। তবে এটি অপরিকল্পিত হওয়ায় জলাবদ্ধতা আরো বেড়েছে। 
পোপাদিয়া ইউনিয়নের চড়ই বিলের কৃষক অমল দে, আমিনুল ইসলাম, ঝন্টু চৌধুরী কৃষক বলেন, ‘অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, খাল ভরাট করে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় গত ১০ বছর ধরে বিলের ১২০ একর জমি অনাবাদি হয়ে গেছে । আগে এই বিলে আমন ও বোরো আবাদের পাশাপাশি শীতকালীন প্রচুর শাক সবজি উৎপাদন হতো।
তাঁরা আরো জানান, অবৈধভাবে খাল দখল করে কারখানা ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে বোয়ালখালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কানিজ ফাতেমা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিমাদ্রি খীসা বলেন, ‘কয়েকটি বিলে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। অপরিকল্পিত আবাসন, কারখানা স্থাপন, খাল দখল ও যত্রতত্র কালভার্টের কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

×