কোরবানির চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫ | ২৩:০০
২০১৮ সালে কোরবানির ঈদে চামড়া বিক্রি না হওয়ার পাশাপাশি কেনা দামের ধারে-কাছেও দাম না পাওয়ায় রাস্তায়, ডাস্টবিনে, এমনকি নালা-খালে চামড়া ফেলে রেখে গিয়েছিলেন মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহকারীরা। এরপর থেকে প্রতিবছর কোরবানি পশুর হাজার হাজার চামড়া রাস্তা-ঘাটে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। এবারের কোরবানির ঈদেও নগরীর রাস্তায় পাওয়া যায় ১০ টনের বেশি গরুর চামড়া। এভাবে টানা সাত বছর ধরে চামড়া নিয়ে তুঘলকি কাজ-কারবার চলে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকায় সবাই মনে করেছিলেন, এবার অন্তত চামড়া নিয়ে চলমান নৈরাজ্য কমবে। ফলে লাভের আশায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাদের সেই আশায় এবারও গুড়েবালি। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও শেষমেশ হাজার হাজার চামড়ার ঠাঁই হয় ময়লার ভাগাড়ে। সংগ্রহ করা কোরবানির চামড়া কেউ কেউ লোকসানে বিক্রি করলেও অনেকেই বেচতে না পেরে রাগে-ক্ষোভে রাস্তায় ফেলে চলে যান। এতে পথে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদের চৌমুহনী, অক্সিজেনের নয়াহাট এলাকার সড়কে হাজার হাজার চামড়া পড়েছিল। ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষোভে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে কিংবা ডাস্টবিনে রেখে যান চামড়াগুলো। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে, নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে ১০ টনেরও বেশি চামড়া। এসব চামড়া ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী তথ্য জানান।
বিভিন্ন পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও মনিটরিং না থাকায় ট্যানারি মালিকরা অলিখিতভাবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেন আড়তদারদের। নিজেদের লাভের বিষয়টি মাথায় রেখে আড়তদাররা মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহে নামমাত্র দাম নির্ধারণ করে দেন। কয়েক বছর ধরে এভাবে কোরবানির চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে।
চামড়া সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর চামড়ার আকারভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় গরুর চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গড়ে তারা ৪০০ টাকা করে প্রতিটি চামড়া সংগ্রহ করেন। এর ওপর চামড়া পরিবহন ভাড়া, শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য খরচসহ প্রতিটি চামড়ার দাম পড়ে কমবেশি ৫০০ টাকা। কিন্তু আড়তদাররা গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি দাম দিতে রাজি হননি। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হয় মৌসুমি চামড়া সংগ্রহকারীদের। এ ছাড়া ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ। তিনি সমকালকে বলেন, ‘প্রতি পিস চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছি। এভাবে প্রায় ২০০ চামড়া সংগ্রহ করেছি। চামড়ার দামের সঙ্গে শ্রমিকদের বেতন ও পরিবহন ভাড়া যুক্ত করলে প্রতিটি চামড়ার দাম গড়ে ৬০০ টাকার ওপরে পড়েছে। কিন্তু আড়তে বেচতে গিয়ে দেখি ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি দাম মিলছে না। ফলে লাভ তো দূরের কথা বাধ্য হয়ে অর্ধেকেরও বেশি লোকসান দিয়ে আতুরার ডিপোতে একটি আড়তে চামড়া বেচে দিয়েছি।’
জেলার বোয়ালখালী থেকে ট্রাকে করে ১৮০টি পশুর চামড়া নিয়ে নগরীতে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ। তিনি জানিয়েছেন, এসব চামড়ার মধ্যে বড়গুলো কেনা দামের অর্ধেকে বিক্রি করতে পারলেও ছোট আকৃতির চামড়াগুলো বিক্রি করতে না পেরে প্রায় ১০০ চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছেন। এভাবে লোকসানে চামড়া বিক্রি এবং বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার মতো কষ্টের কথা সমকালের কাঠে তুলে ধরেন আরও কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে যে পরিমাণে কোরবানি হয় সেই পরিমাণে চামড়া কেনার মতো আড়তদার নেই। তাছাড়া চামড়া সংগ্রহ করার পর লবণ দিতে হয়। তাহলে কিছুদিন রেখে বিক্রি করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তা না করে চামড়া নষ্ট করে ফেলেন।’
- বিষয় :
- চামড়া খাত