আমিরাতে সুবাস ছড়াচ্ছে চট্টলার মেজবান

.
কামরুল হাসান জনি, ইউএই
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০:২৯
খাবারের টেবিলে লাল টকটকে ঝোল মিশ্রিত গরুর মাংস, ছোলার ডাল, পায়ার ঝোল আর ভর্তার পরিবেশন বলে দেয় এটি দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের খাবার। এর সঙ্গে যোগ হওয়া বোরহানী আর সাদা ভাত চট্টলার মেজবানের ষোল আনা তৃপ্তি এনে দিচ্ছে সুদূর প্রবাসে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন এই খাবার সুবাস ছড়াচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশীয় হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর ব্যবসায় লাভজনক মেন্যু হিসেবে তাই সবার আগে জায়গা করে নিচ্ছে চট্টলার মেজবান। দেশটির বেশকিছু শহরে এটি এখন বাংলাদেশি হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিশেষ পদের খাবার হিসেবে বিবেচিত। কোনো কোনো খাবারের হোটেল সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন পরিবেশন করছে মেজবানের এই খাবার।
আমিরাতের ভিন্ন ভিন্ন শহর ঘুরে দেখা গেছে, দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে শতকরা ৬৫ ভাগের বেশিই চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এই সুবাদে দুবাই, শারজাহ, আবুধাবিসহ বেশ কিছু শহরে চট্টলার মেজবানের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে। এই খাবারে মুগ্ধ হচ্ছেন বিদেশিরাও। প্রবাসীরা সপ্তাহের নির্দ্দিষ্ট তিনদিন কেবল এই খাবারের স্বাদ নিতে ভিড় করছেন সেসব হোটেল-রেস্তোরাঁয়। ভোজন রসিকদের আকষর্ণ বাড়াতে প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় ছোটবড় ব্যানার-ফেস্টুনে এই খাবারের প্রচার করছে। দুবাইয়ের দেরা, শারজার রোলা ও আবুধাবির মূল শহর ছাড়াও উপশহর মোচ্ছাফার কিছু হোটেল রেস্তোরাঁয় রয়েছে চট্টলার মেজবানের খাবারের আয়োজন। কোথাও বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার আবার কোথাও শুক্র-শনি ও রবিবার জুড়ে থাকে এই আয়োজন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের মেজবানের স্বাদ পুরোপুরি ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। মেজবানের খাবার পরিবেশনে রাখা হয়েছে বৈচিত্র্য। এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী মাটির পাত্রে পরিবেশন হচ্ছে এই খাবার। ভিনদেশে দেশীয় এই ঐতিহ্যের উপস্থাপন বাড়তি নজরও কাড়ছে প্রবাসীদের। একেকটি খাবারের জন্য ব্যবহার হচ্ছে একেক ধরনের মাটির পাত্র। কোনো প্রতিষ্ঠান মেজবানের নির্দ্দিষ্ট খাবারের পাশাপাশি ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে বিনামূল্যে যোগ করেছে তরমুজের জুস, বিশেষ সালাদ ও রং চা। এমন আয়োজন রীতিমতো ভোজন রসিকদের আগ্রহ বৃদ্ধি করে চলেছে। চট্টগ্রামের মেজবান আর মাটির পাত্রে খাবারের স্বাদ নিতে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, খাবারের স্বাদ আর পরিবেশনে বৈচিত্র্য আনতে মাটির পাত্রের ব্যবহার করছেন তারা। এতে বাড়তি ক্রেতা টানার সুযোগ তৈরি হয়েছে। চট্টলার মেজবান ও ঘরোয়া আয়োজনে মাটির পাত্রের ব্যবহার প্রবাসীরা দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাচ্ছেন। ভারি খাবারের পাশাপাশি চা, দধি আর মিষ্টান্ন পরিবেশনেও ব্যবহার করা হচ্ছে মাটির পাত্র। এতে খাবারের গুণগত মান ও যথাযথ স্বাদ পাচ্ছেন ভোক্তারা। পাশাপাশি দেশের এই ঐতিহ্য ভিনদেশীদেরও নজর কাড়ছে, তাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ও বাড়ছে কয়েকগুণ।
প্রবাসীরা বলছেন, দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও বাংলাদেশি হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর এমন আয়োজনে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ পাচ্ছেন তারা। একদিকে যেমন মাটির পাত্রে খাবার গ্রহণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত তেমনি ভিনদেশে চট্টলার মেজবান তাদের দেশীয় ঐতিহ্যের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে।
দুবাইয়ের দেরা মেজবান বাড়ি হোটেলে স্বত্বাধিকারী সাতকানিয়া প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আঞ্চলিক এই খাবারের চাহিদা বিবেচনা করে ২০১৮ চট্টলার মেজবান চালু করে তারা। বর্তমানে সপ্তাহে ৪ দিন তার প্রতিষ্ঠানে এই রেসিপির স্বাদ নিতে পারেন প্রবাসীরা। কেবল এই খাবারের কাস্টমার পান দিনে তিন থেকে চার’শ জন।
দুবাইয়ের মনপুরা রেস্টুরেন্টের মালিক সিরাজুল হক বলেন, মেজবানের খাবার আমিরাতে খুবই প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। আমরা চেষ্টা করি সবসময় এটি রাখতে। প্রতি প্যাকেজের দাম ধরা হয় ২২ দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক বলেন, মেজবান চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার। আমিরাতের হোটেল রেস্তোরাাঁগুলো নিয়মিত এই আয়োজনের কারণে একদিকে আঞ্চলিক খাবারের স্বাদ পাচ্ছেন প্রবাসীরা অন্যদিকে ভিনদেশীদের কাছে ঐতিহ্যবাহী এই খাবারের পরিচিতি তুলে ধরছেন তারা।
- বিষয় :
- মেজবান
- সংযুক্ত আরব আমিরাত