ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অনুষঙ্গ

জলকাদার জুতা

জলকাদার জুতা

মৌ মণি পুষ্প

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪ | ০৮:৪৩

বর্ষাকাল মানেই সময়ে অসময়ে রিমঝিম বৃষ্টি। আবার একটু বৃষ্টিতেই নগরীতে পানি জমে একাকার। তাই বলে তো ঘরে বসে থাকা যায় না, প্রতিদিনের কাজে বের হতেই হয়। এ সময়ে আমাদের শখের জুতা তেমন কাজে আসে না, বরং বৃষ্টিজলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। বৃষ্টির মৌসুমে দরকার হয় বিশেষ ধরনের জুতা ও তার আলাদা যত্ন। 
কী ধরনের জুতা চাই
বর্ষা মৌসুমে আদর্শ হলো রাবার বা প্লাস্টিক ধরনের ম্যাটেরিয়ালের জুতা অথবা রেক্সিন ও সিনথেটিক চামড়ার জুতা। আসল চামড়ার জুতা খুব সেনসেটিভ হয়। এ কারণে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ও কাদা লেগে দীর্ঘক্ষণ ভেজা থাকলে ছত্রাক পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। রাবার বা স্পঞ্জ ধরনের কৃত্রিম ম্যাটেরিয়ালের জুতায় এ সমস্যা নেই। 
বর্ষাকালে উঁচু হিল, অথবা খুব নকশা করা জুতা এড়িয়ে চলতে হবে। কাদাপানির মধ্যে হিল জুতা পরে সহজে হাঁটা যায় না। হিল জুতা পরলেও ব্যালান্স হিল বা অল্প উচ্চতার প্ল্যাটফর্ম হিল পরা ভালো। এ সময় আদর্শ হচ্ছে ফ্লিপ ফ্লপ স্যান্ডেল। ওয়াই আকৃতির দুই স্ট্র্যাপের এই স্যান্ডেলকে আমরা দুই ফিতা জুতাও বলে থাকি। এগুলো পরতে বেশ আরামদায়ক, সহজেই পরিষ্কার করা যায় এবং ঝটপট পায়ে দিয়ে যে কোনো জায়গায় বের হয়ে পড়া যায়।
এ ছাড়াও ক্রকস ধরনের জুতাও বর্ষায় বেশ মানানসই। এ ধরনের জুতা দেখতে কিছুটা হাফ শুর মতো হয়ে থাকে এবং এতে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলো থাকার ফলে জুতার মধ্যে পানি জমে থাকে না। পা ভিজে গেলেও শুকিয়ে যায় দ্রুতই। ফ্রক্স জুতাগুলো সাধারণত একটু উঁচু লেভেলে হয়ে থাকে। যে কারণে কাদাপানি এড়িয়ে চলা যায়।
বর্ষাকালে পায়ে দেওয়ার আরেকটি ভালো অপশন হচ্ছে স্নিকার্স। স্নিকার্সে একবার অভ্যস্ত হলে আর চিন্তা নেই। স্নিকার্স বেশ আরামদায়ক, পিছলে পড়ার ভয় থাকে না এবং কাদাপানি থেকে তাকে রক্ষা করে বেশ ভালো মতোই। 
কোথায় পাবেন
প্রায় প্রতি বছরই বর্ষা ঋতুর কথা মাথায় রেখে জুতার ব্র্যান্ডগুলো নতুন নতুন কাজ সামনে আনে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দেশের অন্যতম পরিচিত জুতার ব্র্যান্ড বাটা বর্ষাকে মাথায় রেখেই নিয়ে এসেছে তাদের কালেকশন বাটা ফ্লোটজ। কৃত্রিম রাবার ম্যাটেরিয়ালে তৈরি এই কালেকশন বানানো হয়েছে এমনভাবে, যাতে বর্ষার দিন হোক অথবা সাগরপাড়ে ছুটির দিন, নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়। ফ্লোটজে আছে পুরুষদের পা ঢাকা জুতা, ফ্লিপ ফ্লপ স্যান্ডেল, ক্রক স্টাইলের জুতা এমনকি বাচ্চাদের সাইজেও। 
এই কালেকশনের জুতাগুলোর সোল খাঁজকাটা হওয়ায় সহজে স্লিপ করার ভয় নেই। অ্যান্টি স্লিপ ও স্কিড, ওয়াটারপ্রুফ এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এই জুতাগুলো কাদাপানির মধ্যেও সহজে নষ্ট হবে না এবং আপনার পা সুরক্ষিত রাখবে।
এ ছাড়াও বাটার নতুন প্রিন্টেড পাতা পাতা কালেকশনের স্যান্ডেল এবং ফর্মাল লুকের জন্য স্যান্ডাক সেমি শু ও বর্ষার কাদাপানির জন্য বেশ উপযোগী।
আরেক জনপ্রিয় জুতার ব্যান্ড এপেক্সেও রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর ওয়াটারপ্রুফ ও স্কিডপ্রুফ কালেকশন। লোটোতেও পাবেন বেশ কিছু ওয়াটারপ্রুফ স্পোর্টস স্যান্ডেল ও জুতা। 
এসব বড় ব্র‍্যান্ড ছাড়াও এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, নিউমার্কেট, গুলিস্তান ইত্যাদি মার্কেটে একটু খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন বর্ষার উপযোগী ও ওয়াটারপ্রুফ ম্যাটেরিয়ালে তৈরি সুন্দর সুন্দর সব দেশি ও বিদেশি জুতা। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বাজেট ও স্টাইলের মধ্য থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের জুতাটি। 
জুতার যত্নে
শুধু কি জুতা কিনলেই হলো? ঠিকঠাকমতো যত্ন করে না রাখতে পারলে, এই বর্ষায় ভিজে খুব অল্পতেই আপনার শখের জুতার বারোটা বেজে যাবে। তাই পছন্দের জুতা কেনার সঙ্গে সঙ্গে তার যত্ন ও সংরক্ষণের বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পরই সম্ভব হলে হালকা শ্যাম্পু মেশানো পানি দিয়ে জুতা পরিষ্কার করে নিন। তা না হলেও অন্তত জুতায় লেগে থাকা কাদা ভালোভাবে মুছে, জুতা শুকিয়ে তার পর তুলে রাখুন। ভেজা জুতা খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এ থেকে বাজে গন্ধ ছড়ায়। 
অনেকেই কড়া রোদে জুতা শুকিয়ে তার পর তুলে রাখেন। খেয়াল রাখতে হবে, সব ধরনের জুতা এভাবে রাখা যাবে না; বিশেষ করে চামড়ার জুতার জন্য কড়া রোদ একেবারেই ভালো নয়। আগুনের তাপে অথবা হেয়ার ড্রয়ার দিয়েও জুতা শুকানো উচিত না। ভালোভাবে মুছে বাতাসে শুকিয়ে তার পর জুতা তুলে রাখতে হবে। 
ভেজা জুতায় যে বাজে গন্ধ হয়, তা থেকে মুক্তি পেতে একটা কাপড়ের সামান্য ভিনেগার ভিজিয়ে জুতা মুছে রাখতে পারেন। অথবা, ব্যবহার করা গ্রিন টি ব্যাগ বা পাতা একটি টিস্যুতে মুড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য জুতায় রেখে দিতে পারেন। জুতায় থাকা বাজে গন্ধ শুষে নেবে। জুতায় গন্ধ হওয়া এড়াতে নিয়মিত পরিষ্কার মোজা ব্যবহার করতে হবে। 
আজকাল অনেক জুতার দোকানেই শু কন্ডিশনার আর জুতা পরিষ্কারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি শু ক্লিনার পাওয়া যায়। আপনার আশপাশে থাকলে এ ধরনের প্রডাক্ট কিনে এগুলো দিয়েও জুতা পরিষ্কার করতে পারেন। চামড়ার জুতার জন্য আলাদা ধরনের ক্লিনার ও শাইনার ব্যবহার করতে হবে।
একটু খেয়াল রাখলেই এই বর্ষায় নিজের পছন্দের জুতাটি যেমন ব্যবহার করতে পারবেন, তেমনি যত্ন করে রাখলে টিকবে অনেক দিন। v

মডেল: ঈশিতা আক্তার তানিয়া; ছবি: কাব্য

আরও পড়ুন

×