মায়াবী চোখের জাদু

অলংকরণ :: দেওয়ান আতিকুর রহমান
স্বাধীন আরিফীন
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪ | ০৯:১১
র্ষাকাল। অন্ধকার রাত। অফিস শেষে নূহা ফিরছিল। ট্রেন দেরি করায় সুকুন্তপুর স্টেশনে পৌঁছাতে দেরি হয়। সে যখন ট্রেন থেকে নামে, তখনও বৃষ্টি পড়ছিল। তাই একটি বেঞ্চে বসে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছিল।
ঝুমবৃষ্টির কারণে স্টেশনে মানুষ গুটিকয়েক। কিছুক্ষণ পর এই অন্ধকারের মধ্যেই তিনজন ছেলেকে দেখতে পেল নূহা। প্রথমে কোনো সন্দেহ হয়নি। যখন দেখতে পেল অন্ধকারের মধ্যেও এক ছেলের হাতে একটি ধারালো ছুরি চকচক করে উঠছে, তখনই খটকা লাগল। নূহা ভয় পেয়ে গেল। চেয়ার ছেড়ে উঠে দ্রুত পায়ে সামনের চায়ের দোকানের দিকে পা বাড়াল।
– কেমন আছেন?
আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে নূহার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। সে চলতি অবস্থায় ত্বরিত গতিতে পেছনের দিকে তাকাল। নূহার চোখে চোখ পড়তেই আগন্তুক যুবক তার বুকে প্রথম ধাক্কাটি খেল।
লোকটিকে নূহা চিনতে পারেনি। আগন্তুকের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সে ছেলেগুলোর দিকে তাকাল। তারা এখনও আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে এই লোকটা কী ওদের দলের কেউ নয়, এমন ভাবতে লাগলো।
কী দেখছেন ওই দিকে? আগন্তুক প্রশ্ন করল।
‘না কিছু না।’ খানিক থেমে নূহা বলল, আপনাকে চিনতে পারছি না। কে আপনি?
– ‘আমি আপনার পরিচিত নই।’ আগন্তুক যুবক জবাব দিল। আপনাকে তখন থেকে লক্ষ্য করছি, একা একা বসে আছেন। দেখে মনে হচ্ছিল ভয় পাচ্ছেন। তাই পরিচিত হতে এলাম।
ছেলেগুলোর সঙ্গে কথা বলবে কিনা তা একমুহূর্ত চিন্তা করল নূহা। ‘আসলে ছেলে তিনটি...’
– কিছু বলেছে?
‘না, বলেনি কিছু।’ খানিক নীরব থেকে নূহা বলল, আপনি কি বৃষ্টি থামা পর্যন্ত আমার পাশে একটু দাঁড়াবেন?
ভয়ার্ত মায়াবী কণ্ঠ শুনে দ্বিতীয়বারের মতো বুকে ধাক্কা খেল আগন্তুক যুবক। মনে মনে ভাবল, বৃষ্টি থামা পর্যন্ত কেন? আপনি বললে সারাজীবন এইখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। কিন্তু মুখে কেবল ‘অবশ্যই’ বলে ক্ষান্ত হলো।
অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেল। আগন্তুক যুবক নূহাকে বাসায় পৌঁছে দিতে চাইলে নূহা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল, এমনিতেই আপনার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে আপনাকে আর কষ্ট দিতে চাই না।
আগন্তুক যুবক মিথ্যে করে বলল, আপনার বাসা পার হয়েই আমার বাসায় যেতে হবে। চলুন।
নূহার আর আপত্তির জায়গা রইল না। বাসার কাছে এসে আগন্তুক যুবককে বিদায় দেওয়ার সময় নূহা বলল, আপনি আমার অনেক বড় উপকার করলেন।
যুবকের সঙ্গীরা অপেক্ষা করছে তার জন্য, সে নিশ্চয়ই মেয়েটির সব ছিনতাই করে নেবে। কিন্তু তাদের ‘আশায় গুড়ে বালি’।
মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে মৃদু হাসি ফুটে উঠল যুবকের মুখে। সে মনে মনে ভাবল, এই প্রথম আমি আমার কাজে ব্যর্থ হয়েছি। কাউকে ছিনতাই করতে গিয়ে তার মায়াবী চোখে ছিনতাই হয়ে গেছি। v
সুহৃদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- বিষয় :
- জাদুশিল্পী