মালিতে মানবতার বিপর্যয়

মালি-নাইজার সীমান্তে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের বার্তা দিচ্ছে
প্রমিত দেবনাথ
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ২২:৪২
মালিতে সশস্ত্র দলের হাত থেকে পালিয়ে আসা নারীরা জানান, তারা দেশে যেমন সশস্ত্র দলের সদস্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তেমনি দেশ ছেড়ে পালানোর সময় নাইজার সীমান্তে মালিয়ান সেনাদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের সেই দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা উঠে আসে।
জুন মাসের শুরুর দিকে দিনটি ছিল শুক্রবার। সন্ধ্যা ৭টা বাজার কয়েক মিনিট আগে ১৭ বছর বয়সী কানি ও আরও ১০ জন উত্তর-পূর্ব মালির সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা নাইজারের সীমান্তের কাছে লাবেজাঙ্গার একটি চেক পয়েন্টে পৌঁছান। সে সময় ছয়জন সশস্ত্র লোক, যাদের মধ্যে তিনজন সামরিক পোশাক পরা, তারা চেক পয়েন্টে তাদের থামান। কানি ও অন্যরা আগের দিন তাদের গ্রাম থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছিল। কানি বলেন, ‘বন্দুকধারীরা পুরুষ ও নারীদের আলাদা করে। তারপর তাদের মধ্যে তিনজন চারটি মেয়েকে একটি ছোট তাঁবুতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। তারা বন্দুকের মুখে আমাদের ধর্ষণ করে।’
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চলে। তারা জানায়, যে তিনজন সশস্ত্র লোক মেয়েদের তাঁবুতে নিয়ে গিয়েছিল তারা তাদের ধর্ষণ করে। কাউম্বা বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছিল, আমরা নাইজারে প্রবেশ করার একমাত্র উপায় এটাই যে, আমাদের তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে হবে। তারা মেয়েদের ধর্ষণ করার পর এবং যাদের পকেটে নগদ টাকা ছিল তাদের কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেওয়ার পরে সবাইকে যেতে দেয়।’
ধর্ষণের শিকার অল্পবয়সী মেয়েরা জানায়, তারা আক্রমণকারীদের কাছে বারবার আকুতি জানায়। তারা ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ছিল। খাবার ও পর্যাপ্ত পানি ছাড়াই তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। ধর্ষণের শিকার আরেক তরুণী (১৭) বলেন, ‘আমরা যা বলেছি তা যেন কোনো বধিরের কানে মন্ত্র পড়ার মতো। এক পর্যায়ে তারা বন্দুক ও চাবুক দিয়ে আমাদের মারতে শুরু করে শুধু আমাদের মুখ বন্ধ করার জন্য।’
কাউম্বা একটি কালো হেড স্কার্ফ এবং নীল, বাদামি গাউন পরে ছিলেন। ধর্ষণের ঘটনা তাঁর মনকে বারবার আতঙ্কিত করে তোলে। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে আমার সঙ্গে যা ঘটেছিল, তা যতবারই মনে পড়ে, আমি খুব ভয় পাই।’ কানি এবং কাউম্বা জানান, সশস্ত্র ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ ছিল মালিয়ান সৈন্য, তারা সামরিক ছদ্মবেশী শার্ট পরেছিল। তারা মেয়েদের যৌন নির্যাতন করে।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, মালির উত্তরে অবস্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্রামে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট চালাচ্ছে। কানি বলেন, ‘তারা (সশস্ত্র সন্ত্রাসী) গভীর রাতে আমাদের এলাকায় আসে। সেখানে প্রায় প্রত্যেক নারীকে ধর্ষণ করে। আমার বাবা ও একমাত্র ভাইকে সেই রাতে তারা অপহরণ করে। আমাদের মধ্যে ১০ জনকে পাঁচজন লোক বন্দুকের মুখে রেখে ধর্ষণ করে।’
- বিষয় :
- মানবতাবিরোধী