সাক্ষরতার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি

ছবি:: সমতা
বাসন্তি সাহা
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৪
মো. বাসেত আলী। হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দা। তিন সন্তান, স্ত্রীসহ সারাদিন মাছের পোনা ধরেন। সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে রান্না এবং খাওয়ার আয়োজন, ঘুম; আবার সকালে মাছের পোনা ধরতে বের হন। তারা কেউই জীবনে কখনও স্কুলে যাননি। নামও লিখতে পারেন না।
নোয়াখালী কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে ১০ ও ৮ বছরের আদুরী আর গোলাপী। ওরা স্কুলে ভর্তি হয়নি। তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করে। এমন কিছু চিত্র দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে এখনও রয়ে গেছে। যদিও কাগজে-কলমে শতভাগ ভর্তির কথা আমরা বলছি।
আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রমোটিং মাল্টিলিঙ্গুয়াল এডুকেশন: লিটারেসি ফর মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং অ্যান্ড পিস’; যা বাংলায় ‘বহু ভাষায় শিক্ষার প্রসার: পারস্পরিক সমঝোতা ও শান্তির জন্য সাক্ষরতা’। এক সময় মনে করা হতো সাক্ষরতা হলো–লেখা বা পড়ার ক্ষমতা। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে স্বাক্ষর করতে পারাকে সাক্ষরতা বলে উল্লেখ করা হয় এখনও। তবে ধীরে ধীরে সাক্ষরতার ধারণার পরিসর
বৃদ্ধি পেয়েছে। সাক্ষরতা কেবল অক্ষরজ্ঞান নয়। সাক্ষরতা বলতে মাতৃভাষায় পড়তে পারা, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লিখিতভাবে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারা, যোগাযোগ স্থাপন করতে পারা এবং গণনা করতে পারা বোঝায়।
একজন মানুষ লেখাপড়া শেখার সঙ্গে সঙ্গেই তার মাথা, তার মেধা সমাজের চারপাশ থেকে অভিজ্ঞতা ধারণ করে। এটি একজন মানুষকে একদিকে যেমন নিজেকে বুঝতে ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্য তৈরি করে; তেমনি সমাজে বসবাস করার, পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতার মনোভাব তৈরি হয়।
জাতিসংঘের ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়তে চায় বাংলাদেশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও সাক্ষরতা অর্জনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু এসব লক্ষ্য অর্জনে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই।
দেশে সাক্ষরতা বাড়ানোর কাজ করছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। এই শিক্ষা ব্যুরো বলছে, দেশে এখনও নিরক্ষর তিন কোটির বেশি মানুষ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের নাগরিকদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই হিসাবে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর।
পৃথিবীতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কভিড-১৯, বেশ কয়েকটি চলমান যুদ্ধ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এ পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার না জানা এবং ইন্টারনেট সেবা গ্রামে দরিদ্র পরিবারগুলোতে সহজলভ্য না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। ফলে শহর ও গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাক্ষরতা অর্জনের জন্য তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ থেকে জানা যায়, দেশের দারিদ্র্যের হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বাস্তবে এই সংখ্যা ৩০ ভাগের মতো। ফলে দারিদ্র্য কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেটিকে সাক্ষরতার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ, দেশের ৩০ ভাগ মানুষের যদি কেবল তিনবেলা খাবার জন্যই যুদ্ধ করতে হয়, তবে অন্য কোনোকিছু তাকে শেখালেও কাজে আসবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সামর্থ্য, দেশপ্রেম, নারী ও শিশুর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও কর্মসংস্থানের জ্ঞানকেও সাক্ষরতার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
লেখক: কোঅর্ডিনেটর-রিসার্স অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন
দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা
- বিষয় :
- সমতা