ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

শিশুর অপুষ্টি দূরীকরণে প্রান্তিক উদ্যোগ

শিশুর অপুষ্টি দূরীকরণে প্রান্তিক উদ্যোগ

ফাইল ছবি

 হাসান জাকির, সাতক্ষীরার দেবহাটা থেকে ফিরে

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৩৯ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ১৩:৪৭

সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইছামতীর অদূরে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া গ্রাম। এ গ্রামের পুরোনো ক্লাব  ‘পারুলিয়া যুবক সমিতি’। এ সমিতির পুরোনো ভবনে জনাবিশেক তরুণ-যুবা সভা করছেন। তাদের আলোচ্য বিষয়– পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যভ্যাস। শিশুর অপুষ্টি দূরীকরণে এ উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছে উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ। এ ভবনে বসে কথা হয় সমিতির সদস্য সাফায়েত, নাজমুল, রোকেয়া, রেহানা, সামাদ প্রমুখের সঙ্গে।

সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাফায়েত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, তারা সুশীল সমাজ সংগঠনের (সিএসও) প্রতিনিধি হিসেবে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন, যারা অপুষ্টির শিকার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠেনি; খর্বকায়, কম ওজন এবং শারীরিকভাবে দুর্বল। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ ধরনের শিশু এবং ওই পরিবারকে চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানে কাজ করেন। 

সমিতির আরেক সদস্য নাজমুল শাহাদাত জানান, কারও পাঁচ বছরের কম বয়সী অপুষ্টির শিকার শিশু থাকলে, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা না থাকলে বা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা না থাকলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য সেবাটি নিশ্চিতে তারা কাজ করছেন। তবে তারা নিজেরা অর্থ দিয়ে বা ফান্ড তৈরি করে সহায়তা করছেন না। ভুক্তভোগীরা যেন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পুষ্টি সমস্যা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় সেবা পান, এ জন্য যোগসূত্র হিসেবে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কাজটি করতে গিয়ে বেশ কিছু উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।  ইউনিয়নের ওয়ার্ডভিত্তিক এসব উপকমিটির সদস্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে অপুষ্টির শিকার শিশু জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে খুঁজে বের করেন। শিশু কেন অপুষ্টির শিকার সেটিও তারা খুঁজে বের করেন। এরপর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর হয়ে জেলা প্রশাসকের পুষ্টি সম্পর্কিত সমন্বিত সভায় জরিপের ফলাফল ও করণীয় উপস্থাপন করেন।

নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে ছয়টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা, খুলনা, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর পাঁচটি উপজেলায় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘রাইট টু গ্রো’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটায় পাঁচটি ইউনিয়নে কাজ করছে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কনসোর্টিয়ামের অন্য পাঁচ সংস্থা হলো– অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার, দ্য সেন্টার ফর ইকোনমিক গভর্ন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি আফ্রিকা, ম্যাক্স ফাউন্ডেশন, সেভ দ্য চিলড্রেন ও দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট।

এদিকে প্রকল্পের সহায়তায় শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে স্বল্পশিক্ষিত রেহেনা, সবিতা বা জোহরার মতো স্থানীয় নারী উদ্যোক্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুষ্টিকণা ও স্যানিটারি পণ্য বিক্রি করে নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পারুলিয়ায় একটি ত্রৈমাসিক উঠান বৈঠকে অংশ নিয়ে দেবহাটা উপজেলা সিএসও প্ল্যাটফর্মের সাংধারণ সম্পাদক লিটন ঘোষ বলেন, ‘আমরা এ উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুর অপুষ্টি রোধে দারুণ ফল পেয়েছি। একসময় আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে পুষ্টি নিয়ে আলাদা বাজেট ছিল না। আমাদের এ কার্যক্রমের ফলে গত বাজেটে শিশুর পুষ্টি খাতে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রেখেছিল পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। আশা করছি, বাজেট আগামীতে আরও বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিএসও প্রতিনিধিরা তাদের ইউনিয়নে অপুষ্টির শিকার শিশুদের শনাক্ত করে পুষ্টিসেবার জন্য নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করেন। সিএসও প্রতিনিধিরা ওয়ার্ড সভা, ইউনিয়ন উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা ও ওপেন বাজেট মিটিংয়ে অংশ নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও মতামত তুলে ধরেন। এ মতামতের ভিত্তিতে ইউনিয়নে এখন পুষ্টি বাজেট বরাদ্দ করা হচ্ছে।’

পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু বলেন, ‘শিশুর পুষ্টিহীনতা রোধ, স্যানিটেশন এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিতে এভাবে যে কাজ হতে পারে, সেটি আমার ধারণাতে ছিল না। ইউনিয়ন পর্যায়ে পুষ্টি খাতে বাড়তি বরাদ্দের পাশাপাশি সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে শিশুর অপুষ্টিজনিত ভয়াবহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।’

আরও পড়ুন

×