ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

বাবা দিবসের বিশেষ আয়োজন

সব থেকে বড় আশ্রয়

সব থেকে বড় আশ্রয়

বাবার সঙ্গে শামিমা আক্তার

শামিমা আক্তার

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫ | ০০:৩৩ | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ | ১৪:১৭

যে কোনো বিজ্ঞাপনে যদি বাবার গল্প থাকে, তবে বাবাই হন সুপারহিরো। যদি সিনেমায় বাবা ও মেয়ের কোনো গল্প থাকে, তবে বাবা হবেন মেয়ের আস্থার সব থেকে বড় অবতার। বাবা দিবসে লিখতে গিয়ে মনে হলো এর কোনোটাই অতিরঞ্জিত নয়। আমার বাবা দুরন্ত, হাস্যোজ্জ্বল, কর্মঠ ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী একজন মানুষ। পেশায় তিনি একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ছিলেন। আকাশের যানকে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতেন! ছোটবেলায় বাবাকে ম্যাকগাইভার মনে হতো। কারণ, তাঁর আসক্তি ছিল ইলেকট্রনিক ডিভাইস মেরামত করা। প্রথম জীবনে তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মচারী ছিলেন এবং ঢাকা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে কাজ করতেন। চাকরি শেষে বাসায় এসে যে কোনো পুরোনো টিভি, রেকর্ড প্লেয়ার; এমনকি পুরোনো ফ্রিজও মেরামত করতে লেগে যেতেন।

বাবা বিপ্লবীও ছিলেন। ১৯৯০-এ এরশাদ সরকারের পতনে বাবার একটি ছোট ভূমিকা ছিল বলা যায়। যখন এরশাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, আমার বাবা এবং আরও তিন সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের রেডিও নেটওয়ার্ক অকেজো করে দেন এবং এয়ারপোর্ট তিন দিন বন্ধ ছিল। সে সময় আন্দোলনের তীব্রতার কথা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে এজন্য তাঁকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সেটি আমাদের পরিবারের জন্য খুব কঠিন একটা সময় ছিল। বাবা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে স্কিল্ড মাইগ্র্যান্ট হিসেবে বিদেশে পাড়ি দেন। পরিশ্রম, অ্যাডভেঞ্চার মানসিকতার জন্য তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতিকূল সময়ে ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করেছেন। বাবা অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মানুষ। সবসময় দেখেছি, তিনি যে কোনো পেশা ও শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন। তাই তিনি সবসময় মানুষের ভালোবাসা ও অনুরাগে সিক্ত হয়েছেন। বাবার আরেকটি গুণ– তিনি যে কোনো সময়, যে কোনো মাটিতে বাগান করতে পারেন। বাবার স্পর্শ পেলেই গাছ হয়ে যায় সতেজ। 

বাবা ভ্রমণ করতে খুব ভালোবাসেন। আজ সত্তরের মাঝামাঝি বয়সেও তিনি প্রতি বছর নতুন একটি দেশে যাওয়ার পরিকল্পনায় মেতে ওঠেন! বাবার এই সবক’টি বিষয় আমি এবং আমার বোনকে ধাবিত করেছে আমাদের নিজস্ব সত্তা তৈরিতে। আজ আমি বুঝি যে, কেন আমি আমার সাইকেলে চড়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরতে মুখিয়ে থাকি, কারণ আমার বাবার ভ্রমণপিপাসু মন আমার মধ্যেও আছে। পরিবেশ নিয়ে কাজের আগ্রহও আমার বাবার জন্য। বাবাকে দেখেছি, তিনি কতটা আনন্দ নিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশকে লালন করতেন। পরিশেষে তাঁর কাজের উদ্যম ও যে কোনো পরিস্থিতিতে নতুন সমাধান আজও আমাকে সব থেকে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়। 

যে কোনো সন্তানের মতো বাবা আমার কাছে সব থেকে বড় মানুষ, যিনি তাঁর সব সাধ্য ও কীর্তি দিয়ে আমাদের দিয়েছেন স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাণবন্ত একটি জীবন। বাবা দিবসে আমার বাবার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা জানাই।

লেখক: ডিরেক্টর– করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ

আরও পড়ুন

×