বাবা দিবসের বিশেষ আয়োজন
শৈশবের স্মৃতি

রোকেয়া সুলতানা ও তাঁর বাবা
রোকেয়া সুলতানা
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫ | ০০:৩৬ | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ | ১৫:৫৫
বাবা কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স করেন। কলেজে পড়াকালীন লেখক শওকত ওসমান তাঁর বন্ধু ছিলেন। সওগাতসহ আরও কিছু পত্রিকায় লিখতেন। আমাদের ছোটবেলায় পশ্চিম পাকিস্তানে কিছু বাঙালি পরিবার খুব শক্তভাবে বাংলা সংস্কৃতি ধরে রেখেছিল। আমরা বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি সেখানে। বাবা পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। সুযোগ হয়েছিল বাবার একটা ডায়েরি পড়ার। ডায়েরিতে লেখা ছিল– ‘আজ ভাষা দিবস, সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছে; কিন্তু আমি আমার চাকরির কারণে যেতে পারছি না।’
শৈশবে বাবার সঙ্গে খুব খোলামেলা সম্পর্ক ছিল। প্রথম যে স্মৃতি মনে আছে, বাবার একটা ভেসপা ছিল। তখন আমার বয়স দু’বছর ছিল, ষাট দশকের কথা। যে বয়সের কথা মানুষের মনে থাকার কথা নয়। বাবা কোথাও গেলে ভেসপার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তখন আমরা ছিলাম চট্টগ্রামে।
বাবা গান পছন্দ করতেন। খুবই সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। আমাদের গানের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সিগমা হুদা, খুশী কবির, রুনা লায়লাও গান শিখতেন। তারা তখন পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন।
তখন দুপুরবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে যেতাম। বাবা যদি লাঞ্চের পর বাসায় আসতেন, আমাকে আটকানোর চেষ্টা করতেন। আমি লুকিয়ে বের হয়ে যেতাম। ফিরে আসার পর বকা দিতে পারতেন না। আমি ভাইবোনের মধ্যে ছয় নম্বর। ছোট শুধু দুই ভাই। বাবা আমায় কিছুটা প্রশ্রয় দিতেন। আমি ছোটবেলা থেকে বেখাপ্পা। সব ভাইবোন যা করত, তার উল্টোটা করতাম। এখনও ওদের চোখে বেখাপ্পা। আমি অবশ্যই তা মনে করি না। বাবা এটি বুঝতেন, আমি খানিক অন্যরকম, যে কারণে প্রশ্রয় পেতাম। বাবার এই প্রচ্ছন্ন স্নেহ বুঝতে পারতাম। তিনি অনেকটা আগলে রাখতেন। এ নিয়ে বাকি ভাইবোনদের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। তবে একাত্তর আমাদের জীবনে বিশাল রেখাপাত করেছে। আমার বড় ভাইকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া আবার ছেড়ে যাওয়া। সেই ট্রমা আমরা ভুলিনি। আমাদের লুকিয়ে থাকা, গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো। কালারফুল শৈশব একাত্তরে স্তিমিত হয়ে পড়ে।
ম্যাট্রিক পাসের পর চারুকলায় টিকে গিয়েছিলাম। বাবা তাতে মানা করেননি; আবার খুব আগ্রহও দেখননি। আমি সকাল ৭টায় ক্লাসে যেতাম। সেখানে ল্যান্ডস্কেপ করতাম, স্টাডি করতাম। ফিরতাম সন্ধ্যার আগে। কেন এত সময় ক্যাম্পাসে থাকি; অন্যরা তো কলেজে এত সময় থাকে না। এটি বোঝাতে দুই বছর লেগে যায়।
বাবা তখন ডিআইজি ছিলেন। শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমও বাবার দায়িত্বে ছিল। বার্ষিক এক্সিবিশনের পুরস্কার। আমি পুরস্কার পেলাম। মঞ্চে উঠে দেখি, বাবা সামনে বসে আছেন– এটি ছিল আমার জন্য বিশাল সারপ্রাইজ। আমাদের বন্ধুরা জেনেছিলেন আমি কার মেয়ে। যারা রাজনীতির সঙ্গে ছিল, তারা খাতির করার জন্যই সম্ভবত বাবাকে দাওয়াত করেছিলেন। আমার পাওয়া প্রথম পুরস্কারটি হাতে তুলে দিয়েছিলেন খুশী কবিরের বাবা আকবর কবির। এটি ১৯৭৭ সালের কথা। তিনি ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা।
লেখক: চিত্রশিল্পী
- বিষয় :
- বিশ্ব বাবা দিবস
- রোকেয়া সুলতানা