নারী অভিযাত্রীর খোঁজে ‘ট্রেক উইথ নিশাত’

২০২২ সাল থেকে নারী পর্বতারোহীদের উৎসাহ দিতে যাত্রা শুরু করে ‘ট্রেক উইথ নিশাত’
সোহাগ বিশ্বাস
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫ | ০০:৫১ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ | ২১:০৪
এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার অনেক দিন ধরে চিন্তা করছিলেন, পর্বত আরোহণে নারীকে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করা যায়। অভিযাত্রী গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে আলাপও করেছেন এই বিষয়ে। আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়– মেয়েদের নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কাজটি শুরু করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। সদস্যরা সবাই ঠিক করলেন এই আয়োজনের নাম হবে ‘ট্রেক উইথ নিশাত’।
২০২২ সালে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। ট্রেক উইথ নিশাতে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের বয়স ২৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। মৌখিক ও ফিটনেস পরীক্ষার মাধ্যমে এখান থেকে ১০ জনকে বাছাই করা হয়। এই ১০ জন ১৫ কেজি ওজনের ব্যাগ কাঁধে বহন করে সিলেট অঞ্চলের কালাপাহাড়ে সারাদিন হাঁটতে হবে। ফিরে এসে লিখিত পরীক্ষা হবে। এর পর শেষে ভোটের একটি ব্যবস্থা থাকবে; যেখানে ভলান্টিয়াররা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শেষ পর্যন্ত যে ক’জন টিকে থাকবেন, তাদের মধ্যে একজনকে নির্বাচিত করবে।
আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ফিটনেস পরীক্ষা কীভাবে নিতে হবে। আমিও এর মধ্যে ফিটনেস পরীক্ষার একটি পরিকল্পনা তৈরি করে ফেললাম। নিশাত মজুমদার তাদের অভিযাত্রী দলের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলে দিন-তারিখ ঠিক করে ফেলেন। অভিযাত্রী সদস্যরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত এই আয়োজনের জন্য।
তারিখ ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আমাদের একটা চিন্তার বিষয় ছিল। এ রকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক নারী রেজিস্ট্রেশন করবেন কিনা। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো– শেষ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা এবং এর বাইরে থেকে রেজিস্ট্রেশনকারীর সংখ্যা আমাদের ধারণার থেকেও বেশি। এ রকম উৎসাহ দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি। বিষয়টি ভালো লাগল যে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মৌখিক পরীক্ষায় এমনও নারী পেয়েছি– যিনি কখনও খেলাধুলা করেননি। এর পরও আমরা তাদের বাদ দিইনি। আমরা চেয়েছি তিনি ফিটনেস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জানুন, তাঁর শরীরের কী অবস্থা?
এর মাধ্যমে পরে অনেক মেয়ের আগ্রহ আরও বেড়েছে। তারা কল দিয়ে জানতে চাইতেন ফিটনেস ভালো করার জন্য আর কী কী করতে পারি? আমি মনে করি, এই জায়গাতেও ট্রেক উইথ নিশাতের বড় সফলতা।
ফিটনেস পরীক্ষায় এমনও দেখা গেছে, বমি করেও কেউ থেমে থাকেননি। কী অসম্ভব আগ্রহশক্তি! আমাদের এই আয়োজনে সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক আছেন।
ট্রেক উইথ নিশাতের ২০২২ সালের প্রথম প্রতিযোগিতায় সব বিষয়ে সফলভাবে শেষ করে নির্বাচিত হন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। নিশাত মজুমদার প্রজ্ঞাকে নেপালের ৮ হাজার মিটারের পর্বত মানাসলুর বেসক্যাম্পে নিয়ে যান এবং তিনি বেসক্যাম্প সফলভাবে শেষ করে ফিরে আসেন। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় বছর প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত নারীর নাম তাহুরা সুলতানা রেখা।
নিশাত মজুমদারের সঙ্গে আমাদাবলাম বেসক্যাম্প সফলভাবে অভিযান শেষ করে ফিরে আসেন তিনি। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে নিশাতের সঙ্গে শীতকালীন অভিযানে যে পাঁচজন নারী অংশগ্রহণ করেন, তার মধ্যে রেখা একজন। এখন রেখা অভিযানের জন্য নেপালেই সময় কাটাচ্ছেন। ২০২৪ সালে তৃতীয় আয়োজনে নির্বাচিত হন উম্মুল আখিয়ার। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, তিন বিজয়ীর বাড়িই চট্টগ্রামে।
এ বছর শুরু হয়েছে ট্রেক উইথ নিশাতের চতুর্থ আয়োজন। নারীদের এখন পর্বত অভিযানের ইচ্ছা আগে থেকে অনেক বেড়েছে। ট্রেক উইথ নিশাত মূলত এক বছরের মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম। নিশাত মজুমদারের কাছ থেকে এক বছর মেন্টরিং পাবে। তারপর বছর শেষে এই মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের শেষ ধাপ হলো হিমালয়ে নিশাত মজুমদারের কাছ থেকে ট্রেকিংয়ে হাতেখড়ির সুযোগ। নিশাত মজুমদার প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে নারীদের হিমালয়ের বিভিন্ন অভিযানে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসে আবেদন আহ্বান করা হয়ে থাকে। এবারের রেজিস্ট্রেশন শেষ। জুন মাসের শেষ নাগাদ বাছাই পর্ব শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য তারিখ কিছুদিনের মধ্যে জানানো হবে।
- বিষয় :
- নারী
- নিশাত মজুমদার