ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

পাটের শপিং ব্যাগ তৈরিতে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ

পাটের শপিং ব্যাগ তৈরিতে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ

.

মুহাম্মদ মোরশেদ আলম

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৭

পলিথিন অপচনশীল পণ্য। এটি পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে। যেমন– জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, মাটির উর্বরতা নষ্ট করাসহ ড্রেনেজ সিস্টেমের ক্ষতি করে। অপচনশীল প্লাস্টিক ভেঙে ধীরে ধীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে পরবর্তী সময়ে ফুড চেইনে যুক্ত হয়ে যায় এবং বিভিন্ন খাদ্যের মাধ্যমে প্রবেশ করে মানবদেহের ক্ষতি করে। সরকার বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর মাধ্যমে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি বা বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। 
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টের আদেশে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও কঠোর তদারকির মাধ্যমে নিষিদ্ধ পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদনকারী সব কারখানা বন্ধ করা, সব ধরনের যন্ত্রপাতি জব্দ করা এবং এক বছরের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পরিবহন, বিক্রি, ব্যবহার, বাজারজাতকরণ বন্ধসহ একই সময়ের মধ্যে সব হোটেল, মোটেল এবং রেস্টুরেন্টে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ধারা ৬(ক) অনুযায়ী পলিথিন শপিং ব্যাগের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প পণ্যের বিষয়ে সচেতনতা ও বিকল্প পণ্য সরবরাহ সহজ করতে গত ১ অক্টোবর  থেকে সুপারশপে পলিথিন শপিং ব্যাগ এবং পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ১ নভেম্বর থেকে সব মার্কেটে পলিথিন শপিং ব্যাগ এবং পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করার  উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 
সারাদেশে পলিথিনের বিকল্প পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি নির্দেশনার আলোকে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পাটের বিভিন্ন রকমের শপিং ব্যাগের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। গত ২৩ থেকে ২৮ নভেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘পলিথিনের বিকল্প শপিং ব্যাগ তৈরি’ প্রশিক্ষণে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট, ফেব্রিক ব্যবহার করে কীভাবে শতভাগ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ধরনের শপিং ব্যাগ তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষিত করা হয়। প্রশিক্ষণে প্যাটার্ন মেকিং, ব্যাগ উৎপাদন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবেশগত বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সম্যক ধারণা প্রদান করা হয়। 
প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আব্বাস আলী। ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পলিথিনের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে সফল হলে উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা করেন। পরবর্তী সময়ে এ প্রশিক্ষণ ঢাকাসহ সারাদেশে আয়োজন করা যেতে পারে বলে আশ্বাস দেন। প্রশিক্ষণে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, বগুড়া, চট্টগ্রাম জেলার ৩০ জন উদ্যোক্তা অংশ নেন। বাংলাদেশে লাখো মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাট উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 
পরিবেশ ও মানুষের ওপর পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব ও দূষণের মাত্রা বিবেচনায় এর বিকল্প তৈরির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। পলিথিনের বিকল্প পণ্য হতে পারে বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বা পাট থেকে তৈরি ব্যাগ। অধিকতর গবেষণার মাধ্যমে সোনালি ব্যাগের বর্তমান বাজারমূল্য কমিয়ে আনা গেলে এর প্রসার সহজতর হবে। পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগের বাজারজাতকরণে বিএসটিআইর সার্টিফিকেশন পেলে তা দেশে বাজারজাতকরণ সম্ভব হবে। অন্যদিকে বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য ও পেট্রোলিয়ামজাত প্লাস্টিক পণ্যের এইচএস কোড একই হওয়ায় পরিবেশবান্ধব বায়োডিগ্রেডেবল পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত কর সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পরিবেশবান্ধব বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য ও পেট্রোলিয়ামজাত প্লাস্টিকের এইচএস কোড আলাদা করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি। সোনালি ব্যাগসহ অন্যান্য বায়োডিগ্রেডেবল পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফ ও কর রেয়াত প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হলে এর বাজারজাতকরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের গ্রিন বাজেট প্রস্তাবনায় এ সুপারিশ করা হয়েছে। 
লেখক : সহকারী মহাব্যবস্থাপক
এসএমই ফাউন্ডেশন

আরও পড়ুন

×