পথিকৃৎ
জাহানারা ইমাম ও ‘একাত্তরের দিনগুলি’

সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:১০ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:১০
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অন্যতম স্মরণীয় গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’। জাহানারা ইমাম এই গ্রন্থের রচয়িতা। একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থে জাহানারা ইমাম ডায়েরির আকারে ১৯৭১–এর দিনের পর দিন লিখেছেন। ১ মার্চ ১৯৭১ থেকে বইটির শুরু।
পুত্র রুমী তখন কেবল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে ৭ মার্চ ১৯৭১– বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। উত্তাল ঢাকার রাজপথে লক্ষ মানুষের সঙ্গী হন পুত্র রুমী। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নেমে আসে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। শুরু হয় প্রতিরোধপর্ব এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। রুমী যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। এরপর দিনের পর দিন হৃদয়ের রক্তক্ষরণ উপস্থাপন করেন জাহানারা ইমাম তাঁর একাত্তরের দিনগুলিতে। উত্তর প্রজন্মের কাছে এটি একটি মহাগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
মুক্তিযুদ্ধে তিনি পুত্র রুমী ও স্বামীকে হারান। স্বাধীনতার পর রুমীর বন্ধুরা মা জাহানারা ইমামকে সব মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করেন। রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্র ধরেই তিনি ‘শহীদজননী’র মযার্দায় ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালালবিরোধী আন্দোলনের কাণ্ডারি ছিলেন। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়করূপেও তাঁর পরিচিতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জাহানারা ইমাম ১৯২৯ সালের ৩ মে অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঘাতক রাজাকারবিরোধী বিরানব্বইয়ের গণআন্দোলনে নিজের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জাহানারা ইমাম লিখেছেন, ‘মানুষ কী চায়, কোন পথে চায়, তা প্রতিফলিত হয় সংগঠিত হওয়ার মধ্যে- আন্দোলনের মাধ্যমে। কয়েকজন ব্যক্তির ভাবনা অনেককে যুক্ত করতে পারে। অনেকের ঐকমত্য সংগঠনের জন্ম দেয়। সংগঠন আন্দোলন গড়ে তোলে। বিরানব্বইয়ের জানুয়ারি থেকে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে এই আন্দোলন বিবৃতি, অজস্র বৈঠক, সংগঠন, বহু মিছিল, অনেক জনসভা, গণআদালত, ছোটখাটো সংঘর্ষ ও হরতালের মধ্য দিয়ে। আর এই আন্দোলনে আমার সম্পর্ক, সংযুক্তিও খুবই ঘটনাবহুল।’
গণ আদালতে ঘাতক গোলাম আযমের বিচারের কর্মসূচি নিঃসন্দেহে এদেশের চিরাচরিত আন্দোলনের কর্মসূচিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।
জাতীয় সমন্বয় কমিটির এ আন্দোলনের বিরুদ্ধশক্তি তাদের জনসভায় কিংবা তাদের প্রভাবাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন পত্রিকায় সুযোগ পেলেই নেতৃবৃন্দের নামে কুৎসা প্রচার করেছে, সমন্বয় কমিটিতে বিভ্রান্তি ও হতাশা ছড়ানোর জন্য। এসব বিষয়ে জাহানারা ইমাম কঠোর মনোভাব পোষণ করতেন। জামায়াতি ও তাদের সমর্থকদের কোনো পত্রিকা যখন কোনো উদ্দেশ্যমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক লেখা ছেপেছে, তিনি তার প্রতিবাদ করেছেন হয় লিখিতভাবে, নয় জনসভার প্রদত্ত ভাষণে।