ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

‘কুম্ভকর্ণের ঘুম’ তাসকিনের

‘কুম্ভকর্ণের ঘুম’ তাসকিনের

ছবি: তাসকিনের ফেসবুক থেকে নেওয়া

সঞ্জয় সাহা পিয়াল

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪ | ২০:৪৯ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ | ২১:০৪

ইন্দ্রের আদেশে ব্রহ্মা রাক্ষস কুম্ভকর্ণকে ‘মৃত্যুর মতো ঘুমিয়ে পড়ার’ অভিশাপ দেন। রামায়ণের পৌরাণিক কাহিনিতে উল্লেখ আছে– কানের কাছে ঢোল–কাঁসি বাজিয়ে বহু চেষ্টায় কুম্ভকর্ণের সেই ঘুম ভাঙিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছিল রাবণ। আচ্ছা, সেদিন তাসকিনও কি এমনই কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমে ছিলেন? ভারত ম্যাচের দিন তাঁকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। গভীর ঘুমের কারণে দেরিতে ওঠায় তিনি মিস করেছেন টিম হোটেল থেকে মাঠে যাবার বাস! একজন সহঅধিনায়কের এমন কাণ্ড–জাস্ট ভাবা যায় না। ভারতীয় একটি মিডিয়ায় এমন খবর প্রকাশের পর বিসিবির কয়েকজন পরিচালকও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন নাম ছাপা যাবে না এ শর্তে। তবে সাকিব কোন রাখঢাক রাখেননি।

পুরো ঘটনার জন্য তাসকিন ‘সরি’ বলায় ব্যাপারটি ওখানেই শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সাকিব। ‘টস হওয়ার হয়তো ৫–১০ মিনিট আগে তাসকিনকে একাদশে রাখাটা ম্যানেজমেন্টের জন্য কঠিনই ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই তাসকিন দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং দলের সবাই এটা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে। আর যা হয়েছে তা ওখানেই শেষ।’

সাকিবের কাছে হয়তো মনে হচ্ছে এটি নেহাতই সাধারণ ঘটনা, তবে ঘটনাটি বোধহয় এতোটা সাদামাটা নয়। ২১ জুন এন্টিগাতে স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ম্যাচ শুরু হয়, আইসিসির নির্দেশনা  অনুযায়ী ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে টিম হোটেল থেকে বাস ছেড়েছিল। বাস ছাড়ার মুহূর্তে দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের দায়িত্ব ছিল সব যাত্রী বাসে উপস্থিত হয়েছেন কিনা তা দেখে নেওয়ার। তখনই তিনি দেখতে পান তাসকিন আহমেদ ওঠেননি বাসে। এরপর তাসকিনের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। টিম বাসের সঙ্গে না গিয়ে এরপর একা একাই মাঠে পৌঁছান তাসকিন। ততক্ষণে ম্যাচের একাদশের তালিকা জমা পড়ে গিয়েছিল ম্যাচ রেফারির কাছে।

এবারের বিশ্বকাপ সফরে দলের যে কয়েকজন পরিবার নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে তাসকিন একজন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোতে তাসকিনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। কেউই কি তাঁর ঘুম ভাঙাতে পারেননি সেদিন? এর আগে গত বছর অক্টোবরে হাংজু এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের কারাতে কোচ-ম্যানেজার ঘুমিয়ে ছিলেন, তাদের এ উদাসীনতার কারণে কাতারে খেলোয়াড় মোহাম্মদ হাসান নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর ইভেন্টে নাম লেখাতে পারেননি। সে ঘটনার পর বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশে কারাতে ফেডারেশন সেই কোচ মোয়াজ্জেম হোসেন সেন্টু এবং ম্যানেজার ইকবাল হোসেনকে নিষিদ্ধ করেছিল।

একজন ক্রীড়াবিদের জন্য ম্যাচ কিংবা কোনো ইভেন্টের আগে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার একটা শৃঙ্খলা থাকে। সেখানে তাসকিনের এমন উদাসীনতা অবাক করেছে অনেককেই। সেদিন নিশ্চয় টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তাসকিন নাকি তাঁর ভুলের জন্য কোচ এবং সতীর্থদের কাছে দুঃখ প্রকাশও করেছেন। এটি বোধহয় নেহাত ‘সরি’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার নয়। এটি স্পষ্ট শৃঙ্খলাভঙ্গ, এবং সেটি ভাঙার জন্য যেসব শাস্তি রয়েছে তার সবকিছু প্রযোজ্য হওয়া উচিত তাসকিনের ওপর।

আরও পড়ুন

×