শিরোপার সঙ্গে হৃদয়ও জিতে এসেছেন সালমা

প্রথমবার নারী আইপিএল খেলতে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ফেরেন সালাম খাতুন
--
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ | ০১:৩৩
গেলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। নারী আইপিএলে নিজের প্রথম অভিযানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্মরণীয় করে রাখলেন সালমা খাতুন। শুধু ট্রফি জেতেননি, ট্রেইলব্লেজার্সের প্রত্যেক সদস্যের হৃদয় জিতে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি এ ক্রিকেটার। ফাইনালে ম্যাচসেরা না হলেও জয়ের কারিগর মানা হচ্ছে এ অলরাউন্ডারকে। ৪ ওভার বল করে ১৮ রানে তিন উইকেট শিকার তার। সালমার হৃদয় জুড়ে রেখেছে ২০২০ নারী আইপিএলে খেলার রোমাঞ্চ। বাংলাদেশের টি২০ অধিনায়ক সালমার আইপিএল মিশনের অভিজ্ঞতা জেনেছেন আলী সেকান্দার
সমকাল: আইপিএলের প্রথম অভিযানেই জাদু দেখালেন। পেছনের গল্প শুনতে চাই।
সালমা: ঢাকায় থাকতেই আমি চিন্তা করেছি, সুযোগ যেটুকু পাব কাজে লাগাব। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করব। ওখানে ব্যাটিং না পেলেও বোলিং ভালো করেছি। প্রথম ম্যাচে যেভাবে উইকেট পড়ছিল তাতে বোলিং পাব কিনা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত দুই ওভার বোলিং করেছি। সেরাটা দিয়ে ভালো করার চেষ্টাও ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচও ভালো গেছে। ফাইনাল ম্যাচের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। চিন্তা ছিল, যে পরিস্থিতিতেই বোলিং পাই না কেন, কিছু একটা করে দেখাব। সে অনুযায়ী বোলিং করে সফল হয়েছি। দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, আমরা দু'জনই দেশের মুখ উজ্জ্বল করে এসেছি।
সমকাল: এত কম সময়ে অধিনায়ক স্মৃতি মান্ধানার এত আস্থাভাজন হলেন কী করে?
সালমা: আগের দুই ম্যাচে আমার বোলিং দেখেছে অধিনায়ক। ফাইনাল ম্যাচে যখন আমাকে বোলিংয়ে আনে, স্মৃতিকে আমার পরিকল্পনার কথা বলি। সে বলেছে, দিদি আপনি আমার থেকে অনেক অভিজ্ঞ। আপনি যেটা করবেন সেটাই সেরা। আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে না। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবে ফিল্ড সেট করব। এ কথা শুনে খুব ভালো লেগেছে। অধিনায়ক আমার প্রশংসা ও উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি আমার পরিকল্পনায় সফল, অধিনায়কও খুশি। সে পরে বলছে, দিদি যেটা করছিলেন ওটাই করেন, আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। আমি বলেছি, না তোমারও তো পরিকল্পনা থাকে। সে তখন বলেছে, আপনি আমার থেকে অনেক অভিজ্ঞ। আপনার পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ। আমি বোলিং দিয়ে দলের চাপমুক্ত করায় সবাই খুব খুশি হয়েছে। ওটাই বড় পাওয়া।
সমকাল: এ রকম কিছু হবে যাওয়ার আগে কল্পনা করতে পেরেছিলেন?
সালমা: দেশ থেকে যাওয়ার আগে চিন্তা করেছিলাম দলকে কিছু দেব। স্বপ্ন ছিল ফাইনাল খেলব। ফাইনাল ওঠার পর প্রত্যাশা বেড়ে গেছে, চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিলাম। আর কার কী লক্ষ্য ছিল, জানি না। আমার লক্ষ্য ছিল প্রথম এসেছি চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। আমাদের ব্যাটিং সাইড ভালো থাকলে বেশি রান করতে পারিনি। এর পরও বিশ্বাস ছিল এই উইকেটে জেতা সম্ভব। তিনটি উইকেট পড়ার পর চাঙ্গা ছিলাম। হারমান প্রিত ও শশীকলা জুটি গড়ায় চাপে পড়ে যায় দল। সে মুহূর্তে বোলিং দেওয়া হয় আমাকে। আমার ভেতরে কাজ করছিল, সবাই ভালো বোলিং করেছে, আমাকেও ভালো করতে হবে। আমি জুটি ভাঙার পর কয়েকটি উইকেট হারায় ওরা। হারমান আউট হওয়ার পর নিশ্চিত হই চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছি। আমার বোলিংয়ে সবাই সন্তুষ্ট। সবাই খুব প্রশংসা করেছে। আমি নিজেও খুশি। সে জন্যই তো খেলা শেষে একটি স্টাম্প তুলে নিই।
সমকাল: যাওয়ার পরের অভিজ্ঞতা এবং আসার সময়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই?
সালমা: যাওয়ার পর সবার সঙ্গে দেখা হয়নি। ছয় দিন কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম। প্র্যাকটিস শুরুর পর দেখা গেল ঘনিষ্ঠ হতে দু-তিন দিন লেগেছে। আমরা সবাই সবাইকে চিনি; কিন্তু কেউ কারও ঘনিষ্ঠ নই। আমার চিন্তা ছিল দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। ঝুলন গোস্বামী থাকায় কাজটি সহজ হয়ে যায়। রিতা ঘোষ, দীপ্তিও বাংলা বলতে পারে। ওরা খুব সহযোগিতা করেছে। খেলার মধ্যে সবার সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে। আসার সময় খুব মিস করেছি। মনে হচ্ছিল ওরা আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে, আমি ওদের। ওরাও খুব মিস করছিল আমাকে। এখনও মনে হয়, আমি ওদের মিস করছি।
সমকাল: বিদেশের কোনো টুর্নামেন্টের প্রথম অভিজ্ঞতা কতটা কাজে লাগবে?
সালমা: আইপিএল সম্পর্কে আমার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। জাহানারার কাছ থেকে কিছু পরামর্শ পেয়েছিলাম। ওখানে যাওয়ার পর দেখলাম, জাহানারার কথাগুলো মিলে যাচ্ছে। ড্রেসিংরুমের পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। সবাই সবার সঙ্গে ফান করে। রোমাঞ্চকর একটি পরিবেশ। আমার তো খুবই ভালো লেগেছে। এ ধরনের টুর্নামেন্টে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা ভাগ্যের ব্যাপার। শুধু ড্রেসিংরুম নয়, মাঠে, বাইরে সব জায়গায় শেখার মতো অনেক কিছু ছিল। সবাই সবার সঙ্গে নিজেদের কথা বলতাম। ওখান থেকে যেগুলো শিখে এসেছি চেষ্টা করব বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে বিলিয়ে দিতে।
সমকাল: ক্রিকেটের মান কতটা উঁচুতে?
সালমা: মান অনেক ভালো। আমি যতটুকু দেখেছি এই ক'দিনে, ওদের খেলা, আচার-ব্যবহার, আত্মবিশ্বাস, কথাবার্তা, কোচ, অফিশিয়ালদের সঙ্গে চলাফেরা দারুণ। এ রকম বড় আসরে না গেলে বোঝা যায় না, মঞ্চটা কত উদার।
সমকাল: নিশ্চয়ই আগামীতেও খেলার স্বপ্ন দেখেন?
সালমা: অবশ্যই। ভাগ্য ভালো থাকলে খেলতে পারব। উনারা ডাকলে চেষ্টা করব, দুই বিভাগেই ভালো করতে।
- বিষয় :
- খেলা
- ক্রিকেট
- মেয়েদের আইপিএল
- সালমা