স্বাস্থ্য খাত

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বাজেট বাড়ানোর সুপারিশ করা হলেও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের (২০২৪-২৫) ৪১,৪০৭ কোটি টাকা বরাদ্দের তুলনায় ৫০১ কোটি টাকা বেশি।

২০২৫ সালের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে আইনি কাঠামোর অভাব, জনগণের অপ্রতুল অংশগ্রহণ, প্রতিরোধমূলক

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশে জিডিপির সবচেয়ে কম শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। শিশুর সার্বিক উন্নতিতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছেন বিশিষ্টজন। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের বাজেট কমিয়ে এ খাতে কিভাবে বরাদ্দ দিতে হবে তার রোডম্যাপ করাও জরুরি বলে মনে করেন তারা।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন এই খাতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আইন সংস্কার, নতুন আইন তৈরিসহ

উপজেলা পর্যায়ে সেকেন্ডারি স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করতে হবে। জেলা হাসপাতালগুলোয় বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা চালু করতে হবে, যাতে সেবার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত হয়। এতে মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় ইনস্টিটিউটগুলোর ওপর রোগীর চাপ কমবে। ভৌগোলিক কারণে কেউ বিশেষায়িত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন না।

প্রতি রোগীর জন্য গড়ে ১০ মিনিটের পরামর্শ সময় নিশ্চিত করতে হবে, এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেবা প্রদানকারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং সাপ্তাহিকভাবে ব্যবস্থাপত্রে নমুনা যাচাইয়ের পদ্ধতি চালু করতে হবে। অতিদরিদ্র বা যারা দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ, তারা সব হাসপাতালে বিনামূল্যে সব সেবা পাবেন।

ওষুধশিল্পে পরনির্ভরতা কমাতে ও সুলভ মূল্যে ওষুধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দেশেই সব ধরনের ওষুধের কাঁচামাল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন।

সব নাগরিককে প্রয়োজনের ভিত্তিতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিনামূল্যে (যথা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে এবং অতি দরিদ্রের ক্ষেত্রে) বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করতে হবে বলে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিকিৎসকদের কাছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি পাঠিয়ে সরাসরি ওষুধের প্রচার চালানো বন্ধ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এখন থেকে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ডাক বা ই-মেইলের মাধ্যমে চিকিৎসকদের কাছে পণ্যের তথ্য পাঠাতে পারবে। সরাসরি সাক্ষাৎ করে কোনো ধরনের প্রচারণা চালানো যাবে না।

স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা, প্রাইভেট চিকিৎসার ওপর নির্ভরতা কমানো এবং জনগণের ব্যয় সাশ্রয় নিশ্চিত করতে দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের অফিস সময়সীমা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রস্তাবিত সময়সীমা সপ্তাহে পাঁচ দিন কার্যকর থাকবে।