'শুরু হলো ইসলামী শাসন ব্যবস্থা', ফেসবুকে বক্তব্য ভাইরাল

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি ও কমলনগর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২২ | ১০:২৫ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২২ | ১২:১০
'আলহামদুলিল্লাহ। শুরু হলো ইসলামী শাসন ব্যবস্থা। কাদিরা ইউনিয়নে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গান-বাজনা চলবে না। যদি চলে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। বাজারে কোনো গানের আওয়াজ যেন না শুনি। তোমার মন চাইলে কানে এয়ারফোন দিয়ে শোনো, আরেকজনকে শুনাইয়ো না।' চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ এমন ঘোষণাই দিয়েছেন। তার এই ঘোষণা ফেসবুকে ভাইরালের পর চলছে তোলপাড়।
'হাফেজ মনিরুল ইসলাম' নামের এক ব্যক্তি নিজের ফেসবুকে চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহর নাম ও ছবি ব্যবহার করে ওই পোস্ট দেন। হাফেজ মনিরুল ফেসবুকে লেখেন নির্দেশরূপে তিনি চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রচার করছেন।
জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহর আয়োজনে গত ১১, ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি চরকাদিরা ইউনিয়নের আওলীয়ানগর মাদ্রাসা মাঠে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই মাহফিলে তিনি রাতে বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে উচ্চ স্বরে গানবাজনা চালানো, ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারে সতর্কতা এবং ছাত্রীদের বোরকা পরা সংক্রান্ত বক্তব্য দেন, যা পরে হাফেজ মনিরুল ইসলাম ফেসবুকে লিখে পোস্ট দেন। তবে সম্প্রতি ফেসবুকের ওই স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়।
খালেদ সাইফুল্লাহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা। গত বছরের নভেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে অন্তত ৯৫০ ভোটে পরাজিত করে হাতপাখা মার্কায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগের পরিষদেও চেয়ারম্যান ছিলেন খালেদ সাইফুল্লাহ।
যদিও 'ইসলামী শাসন ব্যবস্থা' ঘোষণা সংবলিত বক্তব্যটি ফেসবুকে দেওয়ার বিষয়ে অস্বীকার করেছেন তিনি। ফেসবুকে পোস্টকারী হাফেজ মনিরুলকে চেনেন না বলেও দাবি করেছেন। তবে ভাইরাল হওয়া বক্তব্য তার এবং এর সঙ্গে তিনি মোটামুটি 'একমত' বলে তার ভাষ্যে বেরিয়ে এসেছে।
চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ সমকালকে বলেন, 'রাতে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা হলে মানুষ ঘুমাতে পারেন না। এ জন্য রাতে গান-বাজনা না করতে সবাইকে সতর্ক থাকতে ওই ওয়াজ মাহফিলে আমি কথা বলেছি। এ ছাড়া একজন আলেম হিসেবে মা-বোন ও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ছাত্রীদের পর্দার জন্য বোরকা পরে বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'স্কুলে মোবাইল নিয়ে গেলে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটায় স্কুলে শিক্ষার্থীরা যেন মোবাইল নিতে না পারে সে জন্য অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে কথা বলেছি। আমার এ কথাগুলো কোনো আইন নয়; সতর্কবার্তা ও পরামর্শ।'
ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ঘোষণা দেননি এবং ওয়াজে দেওয়া তার বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে দাবি করে চেয়ারম্যান বলেন, ফেসবুকে পোস্টকারী হাফেজ মনিরুল ইসলামকে তিনি চেনেন না। তা ছাড়া তিনি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট ব্যবহার করেন না এবং ফেসবুক সম্পর্কে কোনো ধারণাও নেই। ফেসবুকে তার নাম ব্যবহার করে এমন কাজ করায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
কমলনগর থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ গতকাল মঙ্গলবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত চলছে।