আশ্রয়কেন্দ্র্রেই লেখাপড়া
-samakal-62d05d3278ab8.jpg)
বড়লেখার দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া শিশুদের পড়াচ্ছেন শিক্ষক-সমকাল
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ | ২৩:৪৩
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়। গত ১৬ জুন থেকে হঠাৎ বন্যার পানি বাড়তে শুরু করলে আশপাশের ৫৪টি পরিবার ছোট ছোট ছেলেমেয়েসহ আশ্রয় নেয় এই স্কুলে। চারদিকে তখন পানি থইথই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কোথাও খেলাধুলারও পরিবেশ নেই। বন্দি শিশুদের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তাদের জন্য অভূতপূর্ব এক উদ্যোগ নিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস। আশ্রয়কেন্দ্রেই তিনি শুরু করলেন পাঠদান। এতে লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকল না এই শিশুদের।
দীপক রঞ্জন দাস জানালেন, গত ২২ জুন তিনি আরো একজন শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে কাজটি শুরু করেছেন। শিশুদের সময়টা যাতে নষ্ট না হয়, মানসিকভাবে তারা যেন সুস্থ থাকে এবং সৃষ্টিশীল কাজের মধ্যে থাকতে পারে, সেজন্য তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তা ছাড়া দীর্ঘদিন লেখাপড়া থেকে দূরে থাকলে এসব শিশুর অনেকে ঝরে পড়তে পারে। তাই অসহায় এ শিশুগুলোর জন্য বিনামূল্যে বই-খাতা ও কলমের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত দুই শিফটে চলে পাঠদান।
সরেজমিন দেখা গেছে, চারদিকে হৈ-হল্লা, দুগ্ধপোষ্য শিশুদের কান্নাকাটি, চেঁচামেচির মধ্যেই বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে দুজন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আর বাকি সাতজন দাসেরবাজার ও ঈদগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের ইংরেজি বিষয়ে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস। এর আগে তাদের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করেন দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসিম আলী।
এসব শিশু শিক্ষার্থী জানায়, দীপক রঞ্জন দাস তাদের বই-খাতা ও কলম কিনে দিয়েছেন। এখানে তাদের ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। এতে তারা খুশি। লেখাপড়া করে তাদের অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে। স্কুল খোলার পর পরীক্ষা নিয়ে তাদের আর আতঙ্কে থাকতে হবে না।
প্রধান শিক্ষকের এ উদ্যোগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন এসব শিশুর অভিভাবকরাও। শামীম আহমদ নামে এক অভিভাবক বলেন, কবে বন্যার পানি নামবে, কবে স্কুল খুলবে, কবে লেখাপড়া শুরু করবে ছেলেমেয়েরা- এসব নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাসের এ উদ্যোগে কৃতজ্ঞ তাঁরা।
আবুল হোসেন নামে আরেক অভিভাবক জানালেন, বন্যার পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও তার চেয়ে একটু কম। এ অবস্থায় তাঁরা এখনো বাড়ি ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াটা যে অন্তত এগিয়ে যাচ্ছে, তা ভেবে স্বস্তি পাচ্ছেন তাঁরা।
- বিষয় :
- বড়লেখা
- আশ্রয়কেন্দ্র্র
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান