ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

যবিপ্রবি ছাত্রলীগে হত্যায় অভিযুক্ত সম্পাদক, ডাকাতি মামলার আসামি সহসভাপতি

যবিপ্রবি ছাত্রলীগে হত্যায় অভিযুক্ত সম্পাদক, ডাকাতি মামলার আসামি সহসভাপতি

তানভীর ফয়সাল (বাঁয়ে) ও আল মামুন সিমন

যশোর অফিস

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২২ | ১০:৩৫ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২২ | ১০:৩৫

২০১৪ সালের ১৪ জুলাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ হত্যা মামলায় আদালতে দেওয়া চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) তিন নম্বর আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তানভীর ফয়সাল। গত রোববার রাতে ঘোষণা করা হয়েছে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি। এতে সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন তানভীর। 

এ ছাড়া ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবরে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে গণডাকাতির মামলায়ও তানভীর এজাহারভুক্ত আসামি। একই ঘটনার মামলার আরেক আসামি আল মামুন সিমনও পেয়েছেন সহসভাপতির পদ।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যার মামলায় অভিযুক্ত ফয়সাল ও হলে ডাকাতি মামলার আসামি সিমনকে শাখা ছাত্রলীগের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। এই কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হচ্ছে নানা সমালোচনা। পদবঞ্চিত নেতারা বলছেন, বিতর্কিত ছাত্রদের পদ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এ ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানতেন না।

রোববার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল-নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আগামী এক বছরের জন্য যবিপ্রবি ছাত্রলীগের ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সোহেল রানাকে সভাপতি ও তানভীর ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। 

কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর শাখা ছাত্রলীগের এই কমিটি দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে চারজন সহসভাপতি হলেন আফিকুর রহমান অয়ন, নাজমুস সাকিব, মেহেদী হাসান ও আল মামুন সিমন। তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন কামরুল হাসান শিহাব, এস এম ইকরামুল কবির দ্বীপ ও নূর মোহাম্মদ টনি। দুইজন সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন মনিরুল ইসলাম হৃদয় ও মুরাদ পারভেজ।

নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, অনিয়মিত ছাত্র, বিতর্কিত, হত্যা ও ডাকাতির মামলার আসামি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতারা কমিটিতে স্থান পেলেও বাদ পড়েছেন ছাত্রলীগের নিয়মিত সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়া কর্মীরা। ১১ জনের কমিটিতে স্থান পাওয়া অন্তত পাঁচজন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকে বাদ পড়লেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে ত্যাগী নেতাদের।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রিয়াদ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় রিয়াদের পরিবার মামলা করলে প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে সিআইডি তদন্ত করে। মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের দেওয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যায় জড়িত থাকায় ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ১১ জনের আসামির তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন তানভীর ফয়সাল। বর্তমানে এ মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। 

এ ছাড়া ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের নেতৃত্বে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০০ মোবাইল ফোন, ১০০ ল্যাপটপ ও নগদ অর্থ লুটপাট করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস ২৫ জনের নামে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় ১১ নম্বর আসামি করা হয় তানভীর ফয়সালকে। আর ১০ নম্বর আসামি করা হয় আল মামুন সিমনকে।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পাঁচ বছর ধরে রয়েছেন তানভীর ফয়সাল। তিনি বলেন, হত্যা ও ডাকাতি মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছি। তা ছাড়া আমি এখনও আদালতে দোষী প্রমাণিত হইনি। এসব মামলায় রাজনৈতিকভাবেই আমার নাম জড়ানো হয়েছে। 

তানভীর বলেন, যবিপ্রবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, তাঁরা সবাই ছাত্র ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। যাঁরা কমিটিতে স্থান পাননি, তাঁরা বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশে কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে। সেখানে ত্যাগী ও বাদ পড়া ছাত্রলীগ কর্মীদের স্থান দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি সোহেল রানা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি করি। তার ফল হিসেবেই কেন্দ্রীয় নেতারা মূল্যায়ন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি হয়নি; তাই এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাঁরা ভালো পদ পাওয়ার যোগ্য। তবে কমিটির অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সোহেল।

২০১৯ সালের ২ নভেম্বর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এর আগে ২০১৪ সালের ১৬ মে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সুব্রত বিশ্বাসকে সভাপতি ও এস এম শামীম হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের ৫৪ সদস্যের এক বছর মেয়াদি কমিটি ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন

×